সৈয়দ এজাজ আহমেদ। অভিনেতার সৌজন্যে
সৈয়দ এজাজ আহমেদ। অভিনেতার সৌজন্যে

অডিশনের সময় টেবিলের ওপর মাথার খুলি রাখা হয়...

‘এশা মার্ডার: কর্মফল’ ছবিতে খল চরিত্রে অভিনয় করে আলোচনায় সৈয়দ এজাজ আহমেদ। ১৪ বছর ধরে মঞ্চে অভিনয় করলেও এবারই প্রথম বড় পর্দায় এসেছেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ এই কর্মকর্তা। অভিনয়, আগামীর পরিকল্পনাসহ নানা প্রসঙ্গে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন মনজুর কাদের

প্রশ্ন

‘এশা মার্ডার: কর্মফল’ ছবিতে খল চরিত্রে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

সৈয়দ এজাজ আহমেদ : সিনেমার আগে আমি তিনটি বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করেছি। এর আগে শুধু মঞ্চে কাজ করেছি। এ ছবিতে আমাকে অডিশনের মাধ্যমে আসতে হয়েছে। আসিফ চরিত্রে আমাকে প্রমাণ করতে হয়েছে। অডিশনের সময় টেবিলের ওপর মাথার খুলি রাখা হয়, তা নিয়ে আমাকে অডিশন দিতে হয়। পরিচালক সানি সানোয়ার ভাই পছন্দ করেন। মঞ্চে কাজের অভিজ্ঞতা এক রকম, সিনেমা একেবারে আলাদা। কাজের জায়গা থেকে যদি বলি, যাঁদের সহশিল্পী হিসেবে পেয়েছি, তাঁদের মধ্যে ফারুক আহমেদ ভাই, (আজমেরী হক) বাঁধন আপু—সবাই অনেক সহযোগিতা করেছেন। এককথায় অসাধারণ অভিজ্ঞতা।

সৈয়দ এজাজ আহমেদ। অভিনেতার ফেসবুক থেকে
প্রশ্ন

এমন একটি চরিত্রে নিজেকে মানিয়ে নিতে কি বিশেষ প্রস্তুতি নিতে হয়েছিল?

সৈয়দ এজাজ আহমেদ : শারীরিক ও মানসিক দুভাবেই প্রস্তুতি নিতে হয়েছে। আসিফ চরিত্রের মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করেছি। শুটিংয়ে যখন থাকতাম, চরিত্রের মধ্যে থাকতাম, কস্টিউমে থাকতাম। আমার নিজেরও কাজের একটা পদ্ধতি থাকে। অভিনয়ের ক্ষেত্রে অনেক ইম্প্রোভাইজ করি। নিজের মতো করে ভাবনা জুড়ে দিই। সানি ভাই আমাকে পুরো স্বাধীনতা দিয়েছেন।

প্রশ্ন

দর্শক প্রতিক্রিয়া কেমন পেয়েছেন?

সৈয়দ এজাজ আহমেদ : অসাধারণ। আমরা তো হলে হলে যাই। শো শেষে বাঁধন আপুসহ যখন দর্শকের কাছে যাই, অনেকে আমার কাছে আসতেও ভয় পাচ্ছিল। অনেকের অস্বস্তি ছিল। চরিত্রটা তো অনেক বেশি নেগেটিভ। ওই জায়গায় আমাকে দর্শক ব্যক্তিগতভাবে মেনে নিতেই পারেনি। কথা বলার পর সেই ধারণা ভাঙে।

সৈয়দ এজাজ আহমেদ। অভিনেতার ফেসবুক থেকে
প্রশ্ন

আপনার স্ত্রী তাসলিমা নদীও অভিনয় করেন, তিনি কী বলেছেন?

সৈয়দ এজাজ আহমেদ : যখন অডিশন দিই, সে–ই আমাকে সবচেয়ে বেশি উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দিয়েছে। অভিনয়ে স্ত্রী তুলনামূলকভাবে আমার চেয়ে বেশি অভিজ্ঞ। আমার চরিত্রের দুটি রূপ থাকে—একটা সাধারণ, অন্যটা সাইকো। দুটি চরিত্র থেকে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করেছে। আমার অভিনয় দেখে সে খুবই খুশি। আমার চরিত্র, অভিনয়ের পুরো ব্যাপারটা দেখে সে তালি দিয়ে উৎসাহ দিয়েছিল। কিছু জায়গায় ভয়ও পেয়েছিল। বলতে পারেন, মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছি।

প্রশ্ন

আপনি তো চাকরিও করেন, এখন অভিনয়কে পূর্ণ সময় দেওয়ার চিন্তা আছে কি?

সৈয়দ এজাজ আহমেদ। অভিনেতার ফেসবুক থেকে

সৈয়দ এজাজ আহমেদ : অভিনয়ে আরও সময় দেওয়ার ইচ্ছা আছে। আমার কয়েকজন প্রিয় অভিনয়শিল্পী আছেন, যাঁদের আমি গভীরভাবে অনুসরণ করি। তাঁদের মধ্যে আছেন ড্যানিয়েল ডে-লুইস, হোয়াকিন ফিনিক্স ও ইরফান খান।

প্রশ্ন

ভবিষ্যতে অন্য ধাঁচের চরিত্রে কাজ করতে চান?

সৈয়দ এজাজ আহমেদ : আমার কাছে যে ধরনের চরিত্র আসবে, করতে চাই। ঈদে তো ছয় ধরনের ছবি মুক্তি পেয়েছে। আমি সব ধরনের ছবিতে কাজ করতে চাই। কবে হবে তা যদিও জানি না। আমি নতুন ধরনের সব চরিত্রে নিজেকে দেখতে চাই, যা আমার অভিনয়সত্তাকে আরও ভালোভাবে প্রকাশ করতে সাহায্য করবে। আমি জানি, আমার ভেতর আরও কিছু আছে, তা আমি বিকশিত করতে চাই।

প্রশ্ন

প্রিয় কোনো অভিনেতা বা খল চরিত্রের অনুপ্রেরণা আছে কি?

সৈয়দ এজাজ আহমেদ : অভিনয়ের ক্ষেত্রে আমি জাহিদ হাসানকে খুব পছন্দ করি। খল চরিত্রে আমার পছন্দের কেউ নেই। তবে অ্যান্থনি হপকিনস আমার পছন্দের একজন মানুষ। আমি আসলে চেষ্টা করি, সবার কাছ থেকে কিছু না কিছু শেখার। নির্দিষ্টভাবে কাউকে অনুসরণ করি না।

প্রশ্ন

ক্যামেরার বাইরে সৈয়দ এজাজ কেমন মানুষ?

সৈয়দ এজাজ আহমেদ : একদম বিপরীতধর্মী একজন মানুষ। চুপচাপ থাকি, কথা কম বলি। আমার ঘনিষ্ঠজনেরা এটা ভালো করেই জানেন। পর্দার আমার সঙ্গে বাস্তবের আমার কোনো মিল নেই।

প্রশ্ন

অভিনয়ের বাইরে অবসরে কী করতে ভালো লাগে?

সৈয়দ এজাজ আহমেদ। অভিনেতার ফেসবুক থেকে

সৈয়দ এজাজ আহমেদ : আমি মিউজিক করি। কলেজজীবন থেকে লেখালেখি করতাম। এরপর মিউজিক করা শুরু করি। আমার অনেকগুলো গান তৈরি আছে। এ বছরে গানগুলো প্রকাশের ইচ্ছা আছে। রেকর্ডিংয়ের কাজ চলছে। আমার ছেলের বয়স ১৪ মাস—পরিবারে সময় দিই।

প্রশ্ন

গান কি ছোটবেলা থেকে শেখা?

সৈয়দ এজাজ আহমেদ : ২০১৩ সাল থেকে গান নিয়ে আছি। ছোটবেলা থেকে লেখালেখি করতাম। লেখালেখির সঙ্গে সুরের একটা ব্যাপারও জড়িত ছিল। আমি কিন্তু এখন গান শিখছিও। গান রেকর্ড করছি। আমি একটু ইন্ডি পপ, ইন্ডি ফোক ওই ধাঁচের গান করছি।

প্রশ্ন

চাকরি আর অভিনয়—দুটি একসঙ্গে কীভাবে করছেন?

সৈয়দ এজাজ আহমেদ : আমি সমন্বয় করে কাজ করতে ভালোবাসি। অফিসের সবাইও বেশ আন্তরিক। সবাই জানে আমি থিয়েটার করি, সিনেমায় কাজ করছি। সময় বের করে কাজ করব। সে ক্ষেত্রে আমি একটু যাচাই–বাছাই করে কাজ করব। মানুষ আমাকে যে ভালোবাসা দিয়েছে, তা ধরে রাখতে হবে।