আরিফিন শুভ
আরিফিন শুভ

রাজনৈতিকভাবে সুবিধা নিয়েছি, প্রমাণ থাকলে প্রকাশ করুক: আরিফিন শুভ

‘মুজিব’ সিনেমায় শেখ মুজিবুর রহমানের চরিত্রে অভিনয় করেন চিত্রনায়ক আরিফিন শুভ। সিনেমাটির জন্য সে সময় এক টাকার পারিশ্রমিক নিয়েছিলেন এই অভিনেতা। তবে ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের পর অনেকটাই আড়ালে চলে যান তিনি। অনেকেই মনে করেন, এ সিনেমার জন্যই সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন এই অভিনেতা। এরই মধ্যে ভারতের একটি ওয়েব সিরিজের শুটিং শেষ করেছেন তিনি। এ ছাড়া ঈদে মুক্তির অপেক্ষায় আছে তাঁর চলচ্চিত্র ‘নীলচক্র’। গতকাল বুধবার ‘দ্য ডেইলি স্টার’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নতুন সিনেমাসহ ‘মুজিব’ সিনেমায় অভিনয় প্রসঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।

‘মুজিব’ সিনেমায় এক টাকা পারিশ্রমিকের কারণে খবরের শিরোনাম হয়েছিলেন আরিফিন শুভ। অনেকেই মনে করেছেন, সরকারের প্লট থেকে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার জন্যই এমন করেন তিনি।

আরিফিন শুভ

এর উত্তরে আরিফিন শুভ বলেন, ‘“মুজিব” সিনেমায় আমি এক টাকা পারিশ্রমিক নিয়েছি নিজের সিদ্ধান্তে, যেমনটা যেকোনো শিল্পীই নিজের কাজের ক্ষেত্রে পছন্দমতো পারিশ্রমিক নেন। এর সঙ্গে কোনো সুবিধা নেওয়ার শর্ত বা লেনদেনের প্রশ্নই আসে না। পরে ছড়ানো হলো, এই এক টাকা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে আমি পূর্বাচলে রাজউকের প্লট পেয়েছি। অথচ বাস্তবতা হলো, “শিল্পী কোটায়” এর আগেও ১৫১ জন শিল্পী জমি পেয়েছেন, যাঁদের কেউই এই সিনেমায় ছিলেন না, কেউ এক টাকায় কাজও করেননি।’

শুভ আরও বলেন, ‘তাহলে প্রশ্ন আসে, কীভাবে পেয়েছি? আমি নিয়ম মেনে আবেদন করেছি, সরকার নির্ধারিত মূল্য জমা দিয়েছি। বাকিরাও ঠিক এভাবেই পেয়েছেন। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে এটা এমনভাবে বলা হচ্ছে, যেন সিনেমা করেছি আর বিনিময়ে জমি পেয়েছি; যেটা সম্পূর্ণ মনগড়া গল্প। এসব গুজবের উদ্দেশ্য, তথ্য তুলে ধরা নয়, মানুষের মনে বিভ্রান্তি ছড়ানো। আমি সব সময় কাজে বিশ্বাসী। যদি কেউ প্রমাণ দিতে পারেন আমি “মুজিব” সিনেমার বিনিময়ে কোনো সুবিধা নিয়েছি; দয়া করে সামনে আনুন, দর্শকদের জানান। আমি অভিনেতা। বিনিময়ের জন্য নয়, চরিত্রকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার জন্য কাজ করি।’

খোঁজ নিলেই যে কেউ জানতে পারবেন, দেশে যখন “মুজিব” সিনেমার অডিশন চলছিল, তখন আমাকে কোনো চরিত্রের জন্য ডাকা হয়নি। কিন্তু দেশের বাইরে আমার একটি সিনেমা দেখে পরিচালকের টিম আমাকে খুঁজে পেয়েছিল।
আরিফিন শুভ

৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের পর অনেকটা আড়ালে চলে যান শুভ। অনেকেই মনে করেন, ‘মুজিব’ সিনেমায় অভিনয় করার কারণে বর্তমানে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে শুভ বলেন, ‘যেকোনো পেশার মানুষকেই রাজনৈতিক ফ্রেমে আটকে দিলে সেটা তার কাজের স্বাধীনতাকে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফলে তার সৃজনশীলতা থমকে যায়, মনোবল নষ্ট হয়। এটা যদি আপনার কাছে সমস্যা মনে হয়, তাহলে নিশ্চয়ই আমি সেই সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছি, যেটা আমার প্রাপ্য নয়। কারণ, আমি শুধুই একজন অভিনেতা।’

আরিফিন শুভ

‘মুজিব’ সিনেমায় যুক্ত হওয়া প্রসঙ্গে এদিন শুভ জানান, পরিচালকের ডাকে অডিশন দিয়েই তিনি সিনেমায় কাজ পেয়েছিলেন। আরিফিন শুভ বলেন, ‘খোঁজ নিলেই যে কেউ জানতে পারবেন, দেশে যখন “মুজিব” সিনেমার অডিশন চলছিল, তখন আমাকে কোনো চরিত্রের জন্য ডাকা হয়নি। কিন্তু দেশের বাইরে আমার একটি সিনেমা দেখে পরিচালকের টিম আমাকে খুঁজে পেয়েছিল। বাংলাদেশ থেকে কেউ আমাকে ডাকেনি। বরং পরিচালক নিজেই প্রথম আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলেন, আমন্ত্রণ জানালেন অডিশনের জন্য। তারপর সেই ধারাবাহিকতায় দুবার ভারতে ও তিনবার বাংলাদেশে অডিশন হয়। কোনো প্রভাব নয়, কাজের যোগ্যতা আর নিষ্ঠা দিয়েই আমি কাজটি পেয়েছিলাম।’

এদিন নিজের রাজনৈতিক পরিচয়ও স্পষ্ট করেন শুভ। বলেন, ‘সুবিধা নিয়ে থাকলে নিশ্চয়ই সেটার রেকর্ড থাকবে। আমার মনে পড়ে না আমি কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়েছি কিংবা রাজনৈতিক কোনো পদ পাওয়ার জন্য ন্যূনতম চেষ্টা চালিয়েছি। রাজনৈতিকভাবে কোনো সুবিধা আমি নিয়েছি, সেটার কোনো প্রমাণ কারও কাছে থাকলে তা প্রকাশ করুক।’

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ভূমিকা নিয়েও কথা বলেন শুভ। বলেন, ‘যখন আন্দোলন চলছিল, তখন আমি আসলে ছুটছিলাম নিজের ব্যক্তিজীবনের একটি দুর্বিষহ পরিস্থিতি নিয়ে। আমি দেশের বাইরে ছিলাম। দেশের ইন্টারনেট তখন বন্ধ, আমি দেশে যোগাযোগ করতে পারছিলাম না, অস্থির ছিলাম দেশের পরিস্থিতি নিয়ে। খোঁজ নিয়েও প্রকৃত অবস্থা জানতে পারছিলাম না। দেশে ফিরি ৩১ জুলাই। সেদিনই আমি একটা পোস্ট দিই, যাতে আমি আমার অবস্থান স্পষ্ট করার চেষ্টা করেছি—ছাত্রদের জন্য সমবেদনা জানাই, দেশের শান্তি কামনা করি। সেই সময়ের মানসিক অবস্থায় আমার পক্ষে তখন যতটুকু বলা সম্ভব ছিল, আমি বলেছি।’