উদ্বোধনে বিশেষ কোনো অতিথি ছিলেন না। ফিতা কাটে মালিক মো. সাজ্জাদ হোসেনের ছেলে আর রাফি হোসাইন
উদ্বোধনে বিশেষ কোনো অতিথি ছিলেন না। ফিতা কাটে মালিক মো. সাজ্জাদ হোসেনের ছেলে আর রাফি হোসাইন

১২ বছর পর স্বপদে ফিরলেন টিকিট চেকার নাজমুল

সিনেমা হলে ১২ বছর পর আবার স্বপদে ফিরলেন টিকিট চেকার নাজমুল হক ও হাবিবুর রহমান। গেটম্যান আক্কাস আলীর ব্যস্ততা অনেক। তিনিও একই পদে ফিরেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের তুহিন ইমরুল দর্শক হয়ে এলেন ২০১২ সালের পর। এক সময়ের শিশু দর্শক মোস্তাফিজুর ও বিশালের চোখেমুখে আনন্দ।
এমন মানুষের সমাগমে প্রায় এক যুগ পর রাজশাহীর কাটাখালীতে চালু হল ‘রাজ তিলক’ সিনেমা হল। হলে এসে দর্শক বলছেন, হলটির ‘পুনর্জন্ম’ হলো। সঙ্গে তাঁরাও প্রথম দিনে ইতিহাস হলেন। রাজশাহী শহরের শেষ সিনেমা হলটি বন্ধ হয়ে যায় ২০১৮ সালের ১২ অক্টোবর। তারপর বন্ধ হয় পবা উপজেলার বাবুল সিনেমা হল। এতে পুরো রাজশাহী জেলা হয়ে পড়ে সিনেমা হল শূন্য।
সম্প্রতি ঢাকাই চলচ্চিত্রের প্রতি দর্শকের টান বেড়েছে। সিনেমা দেখার জন্য দর্শক রাজশাহী থেকে পার্শ্ববর্তী জেলার হলগুলোতে ছুটেছেন। তাঁরা সিনেমা হলের দাবি জানিয়েছেন। এবার সেই চাহিদা পূরণে এগিয়ে এসেছে ‘রাজ তিলক’। এই হলে সবশেষ প্রদর্শন হয় ‘কমন জেন্ডার’। এবার প্রায় এক যুগ পর সেই হল চালু হল ‘হাওয়া’ সিনেমা দিয়ে। গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে শুরু হয় চলচ্চিত্রটির প্রদর্শন।

উদ্বোধনে বিশেষ কোনো অতিথি ছিলেন না। ফিতা কাটে মালিক মো. সাজ্জাদ হোসেনের ছেলে আর রাফি হোসাইন। ফিতা কাটার পরই শুরু হয় হাওয়ার প্রদর্শন।
হলটিতে প্রায় এক যুগ পর সিনেমা দেখতে আসেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী তুহিন ইমরুল। তিনি বলেন, তিনি সম্ভবত ২০১২ সালে এই হলে সবশেষ সিনেমা দেখেছেন। আজকে প্রায় এক যুগ পর এলেন। এটা রাজশাহীবাসীর জন্য ভালো লাগার খবর। সিনেমার জন্য ভালো। সিনেমাহল না থাকলে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি বাঁচবে কী করে। দেশে আরও সিনেমাহল হোক।

প্রথম দিন হলটিতে নানা শ্রেণির মানুষের আগমন ঘটে

টিকিট চেকার হাবিবুর রহমান আর নাজমুল হককে পাওয়া গেল হলেই। তাঁরা হলটির শুরু থেকেই ছিলেন। এবার হলমালিক তাঁদের পালন করা দীর্ঘদিনের দায়িত্বই ফিরিয়ে দিয়েছেন। যথারীতি তাঁরা টর্চলাইট নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। দুজনেই বললেন, জীবনে ভাবিনি এই হল আবার খুলবে। আবার একই দায়িত্ব ফিরে পাবেন।
গেটম্যানের দায়িত্ব পেয়েছেন সেই আক্কাস আলী। তিনি হলটির শুরু থেকে গেটম্যানের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। এবারও সেই দায়িত্ব পেয়েছেন। ভীষণ ব্যস্ত এই লোক শুধু বললেন, হলটির ‘পুনর্জন্ম’ হল। আপনারা সবাই আসবেন। হলটা চালু হলো। আমার কেমন লাগছে, বোঝাতে পারব না।

কাটাখালীর বাসিন্দা মো. বিশাল (২২) সেই শিশুকালে সিনেমা দেখেছিলেন হলটিতে। এবার প্রথম দিনেই সিনেমা দেখতে এসেছেন। দুই টিকিট কেটে বললেন, কবে সিনেমা দেখেছিলাম মনে নেই। সেই শিশুকালে। আজকে হলটিতে সিনেমা দেখতে এসে ভালো লেগেছে।
হলের পাশেই পান ও কোমল পানীয়র দোকান চালান মো. ডলার। তিনি বলেন, এই হল চালুর পর পুরো কাটাখালীর অবস্থায় পাল্টে গেছে। আজকেই কয়েক শ মানুষ কাটাখালীতে এসেছে। আজকে তাঁর ব্যবসাও অন্য দিনের তুলনায় ভালো হচ্ছে।
রাজ তিলক হল সূত্রে জানা গেছে, সব শ্রেণির মানুষের কথা চিন্তা করে টিকিট মূল্য কম রাখা হয়েছে। একেবারে নিচে রিয়াল স্টলের জন্য ৭০ টাকা, ডিসির জন্য ১০০ টাকা ও আপার ক্লাসের জন্য দর্শককে ১৫০ টাকা গুনতে হচ্ছে। এই হলে একসঙ্গে পাঁচ শতাধিক মানুষ সিনেমা দেখতে পারবেন।

প্রথম দিন হলটিতে নানা শ্রেণির মানুষের আগমন ঘটে। হলের সামনে দলবেঁধে ছবি তোলেন তাঁরা। লাইন ধরে টিকিট কাটতে দেখা গেছে। প্রথম শো শুরুর আগে চিৎকার করে হলে ঢুকেছে। সিনেমা শুরু হলেই চিৎকার ও শিস দিয়ে জানান দিয়েছে। সিনেমা শেষে বেরিয়ে উচ্ছ্বাস করেছে।

লাইন ধরে টিকিট কাটতে দেখা গেছে

হলটির মালিক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, তিনি ঘটা করে আয়োজন করে হলটি উদ্বোধন করেননি। পোস্টার লাগিয়েছেন, মাইকিং করেছেন, সবাইকে দাওয়াত করেছেন। তাঁরাই মূলত আজকে হলটিতে সিনেমা দেখার মাধ্যমে উদ্বোধন করলেন। আর আনুষ্ঠানিকভাবে শুধু তাঁর ছেলে একটি ফিতা কেটেছে। তিনি হলটি চালু করতে পেরে আনন্দিত। আশা করছেন, দর্শক সাড়া দেবেন।