তমা মির্জা
তমা মির্জা

১১ বছর পর ‘মন বোঝে না’ মুক্তিতে তমার মন খারাপ

সিনেমা মুক্তিতে নায়িকা তমা মির্জার যেখানে উচ্ছ্বাস থাকার কথা, সেখানে তিনি উল্টো বিরক্তি প্রকাশ করলেন। জানালেন মন খারাপের কথা, একই সঙ্গে বিরক্তও। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনলেন চূড়ান্ত অপেশাদার আচরণের। ২০১৩ সালে শুটিং শুরু হওয়া ‘মন বোঝে না’ ছবির শুটিং পরের বছরে শেষ হয়। এরপর মুক্তি নিয়ে কোনো খবর ছিল না প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের। হঠাৎ করে সপ্তাহখানেক আগে জানা যায়, ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে। গত শুক্রবার দেশের কয়েকটি প্রেক্ষাগৃহে ছবিটি মুক্তি পেয়েছে। তবে মুক্তির আগে–পরে ছবিটির প্রচারণায় নেই চিত্রনায়িকা তমা মির্জা ও চিত্রনায়ক আরিফিন শুভ। তাঁরা দুজনেই এই ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রের অভিনয়শিল্পী।

তমা মির্জা

‘মন বোঝে না’ ছবিটি দেশের কয়েকটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে। জানা গেছে, ২০১৩ সালে ছবিটির শুটিং হয় বাংলাদেশের মধ্যে ঢাকা, কুমিল্লা, গাজীপুর এবং শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন লোকেশনে। ২০১৪ সালে আরিফিন শুভ ও তমা মির্জা অভিনীত ছবিটির পুরো শুটিং শেষ হয়। অভিনয়শিল্পীরা তাঁদের পক্ষ থেকে সব কাজ শেষ করে দেন। ছবিটিও মুক্তির জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত ছিল। কিন্তু তারপরও প্রযোজক মুক্তি দেননি।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে কথা হয় তমা মির্জার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘একজন প্রযোজক যখন কোনো ছবি বানান, তাঁর সেই ছবি মুক্তি দেওয়ার শতভাগ অধিকার রয়েছে। কিন্তু এখানে কথা হচ্ছে, আমি ছবি বানালাম, এরপর বছরের পর বছর মুক্তি না দিয়ে ফেলে রাখলাম, তা কী করে হয়। মুক্তির আগে আমরা যাঁরা প্রধান চরিত্রের অভিনয়শিল্পী, তাঁদের সঙ্গেও কোনো ধরনের আলাপ–আলোচনা নেই! মতামত জানার কোনো প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেননি। এটা চূড়ান্তমাত্রার অপেশাদার আচরণ।’

তমা মির্জা

‘মন বোঝে না’ ছবিটির পরিচালক আয়েশা সিদ্দিকা। ছবিটি প্রসঙ্গে তমা বললেন, ‘১১ বছর আগে আমরা শুটিং শেষ করেছি। ওই সময় অনুযায়ী ছবিটি সময়োপযোগী ছিল। অনেক টাকা বিনিয়োগ করে শুটিং করা হয়েছিল। আমরাও সেভাবে কাজ করেছি। এরপর দীর্ঘ সময়ে শুভ ভাই ও আমি—আমরা অনেকটাই বদলে গেছি। আমাদের অভিনয়, চিন্তাভাবনা ও আউটলুক—সবকিছুতে একটা পরিবর্তনও এসেছে। এই সময়ে এসে দর্শকেরা আমাদের সমসাময়িক কাজের সঙ্গে তুলনা করলে এটা ছবির জন্য ক্ষতি। ছবির ক্ষতি মানে তো প্রযোজকও ক্ষতিগ্রস্ত। আমার কেন জানি মনে হয়, একটা ছবির শুটিং শেষ হওয়ার তিন বছরের মধ্যে তা মুক্তির ব্যবস্থা করা উচিত। না হলে সেই ছবির মেরিট নষ্ট হয়। এতে শিল্পীরও সুনাম নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। মানলাম, একজন প্রযোজক অনেক টাকা বিনিয়োগ করেছেন; কিন্তু এত আগের একটি সিনেমা মুক্তি দেওয়াতে দর্শকেরা যেমন হতাশ, আমরাও তেমনি হতাশ।’

‘মন বোঝে না’ সিনেমার পোস্টারে আরিফিন শুভ ও তমা মির্জা

নাচ দিয়ে শুরু হলেও তমা মির্জা এখন পুরোপুরি চলচ্চিত্রের মানুষ। সমালোচকদের প্রশংসার পাশাপাশি পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। গত কয়েক বছরে যে কটি ছবিতে অভিনয় করেছেন, প্রতিটির চরিত্রই ছিল ভিন্ন। সর্বশেষ ‘দাগি’ সিনেমায় তাঁর অভিনয়ও আলোচিত হয়েছে। এর আগে চরকিতে মুক্তি পাওয়া ওয়েব ফিল্ম ‘আমলনামা’তেও প্রশংসা কুড়ান এই অভিনেত্রী। সাধারণ দর্শকের পাশাপাশি চলচ্চিত্রবোদ্ধারাও বলছেন, অভিনয়ে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছেন তমা। এরপর আর তাঁর নতুন কোনো কাজের ঘোষণা আসেনি। এই অনুপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করলে তমা বললেন, ‘আসলে এখনই কিছু বলতে চাই না। একাধিক ছবির বিষয়ে কথা হয়েছে। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ও পরিচালকদের সঙ্গে একাধিকবার আলাপ হয়েছে। কোন ছবির কাজ আগে শুরু করব, এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে এটুকু বলতে পারি, যা হবে, হয়তো দারুণ কিছুই হবে।’

তমা মির্জা

তমার ভাষায়, ‘দাগি’ ও ‘আমলনামা’ তাঁর ক্যারিয়ারে বিশেষ মাত্রা যুক্ত করেছে, ‘দুটি ছবির গল্প ও চরিত্র একেবারে আলাদা। একজন অভিনেত্রী হিসেবে এ ধরনের ভিন্নতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দর্শকও চান অভিনয়শিল্পীকে বিভিন্ন রূপে দেখতে। এতে তাঁদের আগ্রহ তৈরি হয়, পরবর্তী কাজের জন্য অপেক্ষা করেন।’

‘খাঁচার ভেতর অচিন পাখি’তে নিজেকে ভেঙে নতুন করে তৈরি করেন তমা। এরপর ‘৭ নাম্বার ফ্লোর’ দিয়ে আবারও জ্বলে ওঠেন। সময় যত যাচ্ছে, ততই যেন তাঁর অভিনয়ে নতুন আলো ফুটছে। অনেকের মতে, ‘ফ্রাইডে’, ‘খাঁচার ভেতর অচিন পাখি’, ‘সুড়ঙ্গ’, আমলনামা’ ও ‘দাগি’—এই কয়েকটি কাজেই নিজেকে প্রমাণ করেছেন, পেয়েছেন দর্শকের ভালোবাসা। ওপার বাংলার পরিচালক অঞ্জন দত্তর পরিচালনায় ‘দুই বন্ধু’ নামে একটি সিরিজেও কাজ করেছেন। এ মুহূর্তে কোনো শুটিং নেই, নতুন গল্প শোনা, সিনেমা দেখা আর নিজেকে সময় দেওয়ার মধ্যেই কেটে যাচ্ছে দিন। ‘সিনেমা দেখতে খুব ভালোবাসি। সব ধরনের সিনেমাই দেখি—নতুন–পুরোনো, দেশি–বিদেশি,’ বললেন তমা।