সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের সঙ্গে সম্মাননাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা। ছবি: সংগৃহীত
সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের সঙ্গে সম্মাননাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা। ছবি: সংগৃহীত

‘গুণীজনদের স্বীকৃতি প্রদান আমাদের নৈতিক দায়িত্ব’

‘গুণীজনদের স্বীকৃতি প্রদান আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। মহাকাল নাট্য সম্প্রদায় সেই দায়িত্বশীলতার জায়গা থেকে দেশের সংস্কৃতিক্ষেত্রে যেসব গুণীজন ও প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে, তাদের সম্মাননা জানিয়ে আসছে। স্বনামধন্য এ নাট্যদল প্রতিবছর নিয়মিত নাট্যোৎসব আয়োজন করে আসছে। সংস্কৃতির ক্ষেত্রে এমন উৎসব আমাদের অনুপ্রাণিত করে।’
আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মহাকাল নাট্য সম্প্রদায় আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা নাট্যোৎসব’ উপলক্ষে সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।

সংস্কৃতিচর্চা, মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধুকে গবেষণা, সেসব প্রচার ও প্রসারে যে প্রতিষ্ঠানগুলো ভূমিকা রেখে চলেছে, উৎসবে এমন নয়টি প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা প্রদান করছে মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়।

প্রতিষ্ঠানগুলো হলো মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, সিরাজগঞ্জ উত্তরণ মহিলা সংস্থা, থিয়েটার পত্রিকা, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, ছায়ানট, বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার, কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলা, পিপলস থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ থিয়েটার আর্কাইভস।

বক্তব্য দেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ

অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের পক্ষে সম্মাননা গ্রহণ করেন সারওয়ার আলী, কচি-কাঁচার মেলার পক্ষে শিল্পী আবুল বারক্‌ আল্‌ভী, উদীচীর পক্ষে জামশেদ আনোয়ার, ছায়ানটের পক্ষে লাইসা আহমদ লিসা, থিয়েটার আর্কাইভসের পক্ষে বাবুল বিশ্বাস, থিয়েটারবিষয়ক ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘থিয়েটার’-এর পক্ষে খুরশীদ আলম, সিরাজগঞ্জ উত্তরণের পক্ষে মুক্তিযোদ্ধা রাহিলা বেগম ও আসিফা চৌধুরী, গ্রাম থিয়েটারের পক্ষে কামরুল হাসান এবং পিপলস থিয়েটার।

উৎসব উদ্‌যাপন পরিষদের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়েছে, সম্মাননা প্রদানের আগে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে নির্মিত তথ্যচিত্র বড় পর্দায় দেখানো হয়।

মঞ্চস্থ হয় মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়ের নাটক ‘শ্রাবণ ট্রাজেডি’

অনুষ্ঠানে সম্মাননাপ্রাপ্তির অনুভূতি প্রকাশ করতে এসে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারওয়ার আলী বলেন, আজ দেশের যে উন্নয়ন হচ্ছে, তার চালিকা শক্তি তরুণ প্রজন্ম, আমরা যাদের জন্য যুদ্ধ করেছি। ৫০ বছর পর এই প্রজন্মের কাছেই স্বাধীনতা–সম্পর্কিত দিনগুলো নিছক ছুটির দিন হয়ে যাওয়ার কথা, সময়টা শুধুই বিশ্রামের হওয়ার কথা। কিন্তু সংস্কৃতির কল্যাণে মার্চ বা ডিসেম্বর মাস এলেই আমরা পত্রিকা ও টেলিভিশনে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকথা উঠে আসতে দেখি। আমাদের তরুণদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নানা আয়োজন দেখি, যার ফলে আজকের এই সম্মাননা অনুষ্ঠান। এটি অনেক বড় প্রাপ্তি।’

ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ বলেন, ‘আমরা যারা সংস্কৃতিকর্মী, তারা কিছু পাওয়ার আশায় কাজ করি না। কিন্তু দেশ বা কোনো প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে যখন স্বীকৃতি দেওয়া হয়, সেটা আক্ষরিক অর্থেই আনন্দের। আমরা অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও বাঙালিয়ানার চর্চা করি। কেউ আবৃত্তির মধ্য দিয়ে, কেউ গানের মধ্য দিয়ে আবার কেউ নাটকের মধ্য দিয়ে। সেই জায়গা থেকে আজকের আয়োজন সার্থক।’

মঞ্চস্থ হয় মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়ের নাটক ‘শ্রাবণ ট্রাজেডি’

সম্মাননা প্রদান শেষে মঞ্চায়িত হয় মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়ের নাটক মহাপ্রয়াণের শোক আখ্যান ‘শ্রাবণ ট্রাজেডি’। আনন জামানের রচনায় নাটকটির পরিকল্পনা করেছেন ও নির্দেশনা দিয়েছেন আশিক রহমান। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ এবং বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীকে স্মরণীয় করতে শিল্পকলা একাডেমিতে চলছে মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়ের আয়োজনে ১১ দিনের ‘বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা নাট্যোৎসব’। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তন ও পরীক্ষণ থিয়েটার মিলনায়তনে এ উৎসবের নাটকগুলো মঞ্চস্থ হচ্ছে। এর আগে ৩ ডিসেম্বর শুক্রবার বিকেলে ছিল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। সেদিন নন্দনমঞ্চে উৎসব উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রাম ও স্বাধীন বাংলাদেশের সংস্কৃতির অগ্রযাত্রায় অসামান্য ভূমিকা রাখা ৫০ বীর মুক্তিযোদ্ধা সংস্কৃতিজন।