Thank you for trying Sticky AMP!!

১৪ বছর পর আবার সেই মতি আর ফুলি একসঙ্গে

আবার সেই মতি আর ফুলি একসঙ্গে। চিনেছেন তাঁদের?

থালাবাসন পরিষ্কার করতে করতে হেসে ফুলির সংলাপ, ‘সইরা বসেন। আপনি দেখি এক্কেবারে কোলে বসে পরছেন।’ ফুলির মুখে এ কথা শুনে রাগ হয়ে যায় মতির। তিনি কিছুটা দূরে গিয়ে বসেন। এবার ফুলির সংলাপ, ‘ও আল্লাহ, তাই বলে হিন্দুস্তান চলে যাবেন।’ মতির এবার সংলাপ, ‘চুপ থাক। তোর কাছে বওনের আমার ঠেকা পরছে।’ রেগে যান ফুলি। বলেন, ‘এই তুই–তুকারি করেন ক্যান।’ ‘আমার ইচ্ছা। মতি মিয়া নিজের ইচ্ছায় চলে, অন্যের ইচ্ছায় চলে না।’ ফুলি এবার কিছুটা রেগে বলেন, ‘আপনি দেখি খুব ইচ্ছাওয়ালা।’

‘আজ রবিবার’ নাটকে মতি চরিত্রে ফারুক আহমেদ ও ফুলি চরিত্রে নাসরিন নাহারের অভিনয় দর্শকদের অন্য রকম বিনোদন দেয়। অন্য সব চরিত্রের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নাটকের প্রথম পর্ব থেকেই ভক্তদের মন জয় করেন তাঁরা। তাঁরা হয়ে ওঠেন ফুলি ও মতি।

‘ফুলির কথাই আমার কথা’, ‘আফা, মতি ভাইরে চিনছেন? তার মতো জ্ঞানী মানুষ আমি এই জীবনে দেখি নাই গো আফা।’ আজ রবিবার নাটকে ফুলি ও মতির চরিত্রে সংলাপ এখনো ফেসবুকে ঘোরে। তাঁদের নিয়ে ভক্তদের অনেক আগ্রহ। কিন্তু তার পরে এই জুটিকে তেমন একটা একসঙ্গে পর্দায় দেখা যায়নি। পরবর্তী সময় ফারুক আহমেদ টেলিভিশন নাটকে নিয়মিত হলেও নাসরিন নাহার টেলিভিশন অভিনয় থেকে দূরে সরে যান। তবে মঞ্চনাটকে দেখা যেত অভিনেত্রীকে। মঞ্চে এই জুটি সর্বশেষ ২০০৯ সালে ঢাকা থিয়েটারের ‘প্রাচ্য’ নাটকে অভিনয় করেছিলেন। সেই নাটকটি এবার থিয়েটারটির ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে মঞ্চে আসছে। সেই নাটকে ১৪ বছর পর একসঙ্গে দেখা যাবে ফুলি ও মতিকে।

‘আজ রবিবার নাটকের একটি দৃশ্যে নাসরিন নাহার ও ফারুক আহমেদ। ছবি: ফেসবুক

নাসরিন নাহার বলেন, ‘আমি তো আগে থেকেই থিয়েটার করছি, ফারুক অনেক দিন পর মঞ্চে কাজ করছে। আবার সেই দিনগুলোই ফিরে আসছে। আমাদের সেই “আজ রবিবার” নাটকের শুটিংয়ের সময় কি নিয়ে মজা হতো, তখন দর্শকের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল—এসব নিয়ে আড্ডা হয়। এসব গল্পই আমাদের থিয়েটারের জুনিয়ররা শুনতে চায়। একসঙ্গে আমাদের পেয়ে জুনিয়ররা অনেক আনন্দিত। কারণ, একসঙ্গে আমাদের কখনো থিয়েটারে দেখা যায় না।’

মহড়ার ফাঁকে ফারুক আহমেদ ও নাসরিন নাহার

ঢাকা থিয়েটার দিয়ে ফারুক আহমেদের ক্যারিয়ার শুরু হলেও থিয়েটারে তেমন একটা দেখা যায় না। তাই থিয়েটারের তরুণ অভিনয়শিল্পীদের যত কথা তাঁর স্ত্রী নাসরিন নাহারের সঙ্গে। ভক্তদের হয়তো অনেকের জানা নেই, ফারুক আহমেদ ও নাসরিন নাহার পর্দার বাইরে একসঙ্গে ঘরসংসার সামলাচ্ছেন। নাসরিন নাহার বলেন, ‘জুনিয়ররা তো ফারুককে কিছু বলে না। সে অনেক সিনিয়র। আমাকে সব সময় দেখে। আমাকে বলছে, ফারুক ভাই পর্দায় যেমন, বাস্তবেও তেমন মজার মানুষ। অনেক মিশুক। আমাদের দুজনকে দেখে চুপি চুপি হাসছে। একসঙ্গে রিহার্সালেও অনেক মজা হচ্ছে। আর আমি নাটকে ফারুকের দাদির চরিত্রে অভিনয় করছি। সেগুলো নিয়েও মজা হচ্ছে। গতকাল একজন বলছেন, “ফারুক ভাইয়ের মুখে দাদি শুনে কেমন লাগে?” জুনিয়রদের মুখে এ কথা শুনে হাসলাম। সব মিলিয়ে ভালো সময় কাটছে।’

এর আগে তাঁরা একসঙ্গে মঞ্চ নাটকে অভিনয় করেছেন।

দীর্ঘদিন পর মঞ্চে ফিরে ‘প্রাচ্য’র সংলাপ সব ভুলে গেছেন ফারুক আহমেদ। ফারুক আহমেদ নিজেও কিছুটা চিন্তিত। তিনি বলেন, ‘অনেক দিন পরে রিহার্সালে গিয়ে দেখি, সংলাপ কিছুই মনে ছিল না। আমাকে নিয়ে চিন্তিত বাচ্চু ভাই, কী হবে এই ভেবে। পরে তিন–চার দিন সময় নিয়েছিলাম সংলাপ মুখস্থ করতে। তারপরে এখন স্বপ্নেও দাপটের সঙ্গে অভিনয় করি।’

এই অভিনেতার মতে, থিয়েটার তাঁর আসল জায়গা। কিন্তু টেলিভিশনে ব্যস্ততার কারণে সময় দেওয়া সম্ভব হয় না। তিনি নিজেকে খুঁজে পান মঞ্চে। ২০০৯ সালের পর ‘প্রাচ্য’ নাটক দিয়ে মঞ্চে ফিরে দারুণ খুশি। তিনি বলেন, স্ত্রীর সঙ্গে অনেক অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলেন। কিন্তু টেলিভিশনে কাজ করতে রাজি হননি তাঁর স্ত্রী নাসরিন নাহার। তিনি চেয়েছিলেন সন্তান দেখভাল করবেন। তাদের একটি মেয়েসন্তান রয়েছে।

স্ত্রীর সঙ্গে ফারুক আহমেদ

ফারুক আহমেদ বলেন, ‘আমার স্ত্রী দুর্দান্ত ভালো অভিনেত্রী। তার অভিনয় দর্শকদের মতো আমার ভালো লাগে। মঞ্চে তার চেহারা জ্বলজ্বল করে। তাকে খুশি করার জন্য বলছি না, এখনো সে মঞ্চে দারুণ অভিনয় করে। তার সঙ্গে আমার অভিনয় করতে ভয় লাগে। তার কাছে আমি সব সময় কৃতজ্ঞ। আজ আমি যা কিছু অর্জন করেছি, সবই স্ত্রীর জন্য। সে সেক্রিফাইস না করলে আমি হয়তো ভালো করতে পারতাম না।’
নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের পাঁচালি নাটক ‘প্রাচ্য’। ঢাকা থিয়েটারের প্রযোজনায় নাটকটি দুই যুগ আগে ঢাকার মঞ্চে প্রথম প্রদর্শিত হয়েছিল। সেই নাটকের সর্বশেষ ২০০৯ সালে অনেকের সঙ্গে অভিনয় করেন ফারুক আহমেদ ও নাসরিন নাহার। নাটকে এবার আরও অভিনয় করেছেন শিমুল ইউসুফ, শহীদুজ্জামান সেলিম, রোজী সিদ্দিকী, এহসানুর রহমান প্রমুখ। এটি নির্দেশনা দিচ্ছেন নাসির উদ্দীন ইউসুফ।

মহড়ার ফাঁকে শিমুল ইউসুফ , ফারুক আহমেদ ও নাসরিন নাহার