রাজীব সালেহীন
রাজীব সালেহীন

জীবনে অনেকের ‘বাবু’ হয়েছি

ঈদে মুক্তি পাওয়া ‘দাগি’ ছবিটি নিয়ে আলোচনায় এসেছেন অভিনয়শিল্পী ও পরিচালক রাজীব সালেহীন। গত সোমবার দুপুরে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছে ‘বিনোদন’

প্রশ্ন

‘দাগি’তে আপনার অভিনীত ‘বাবু’ চরিত্রটি নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। চরিত্রটি আপনার কতটা চেনা?

রাজীব সালেহীন : ‘দাগি’তে আমার অভিনীত বাবু চরিত্রটি নিয়ে যে কথা হচ্ছে, আমি নিজেও তা টের পাচ্ছি। একটি চরিত্রে অভিনয়ের পর যখন আলোচনা হয়, তখন তা সত্যিই আনন্দের। ভীষণ ভালো লাগার। আমি ঢাকার খিলগাঁও, গোড়ান, বাসাবো এলাকায় বেড়ে উঠেছি—সেখানে মহল্লার সংস্কৃতি ছিল। মহল্লায় হয় কী, বন্ধুদের যেকোনো বিপদে, যেকোনো আনন্দে সব সময় বন্ধুরা পাশে থাকে। এমনকি বন্ধুরা যদি ছোটখাটো কোনো অন্যায় করে, তখনো বন্ধুরা বন্ধুর কাঁধ থেকে হাত সরায় না। আমার এ রকম অনেক বন্ধু আছে—স্কুলের, মহল্লার, কলেজজীবনের। ওই দৃষ্টিকোণ থেকে বাবু চরিত্রটা আমার খুবই চেনা। কখনো আমার জীবনে আমি অনেকের ‘বাবু’ হয়েছি, আবার অনেকে আমার জন্য ‘বাবু’ হয়েছে।

প্রশ্ন

আপনার জীবনে ‘বাবু’ কে ছিলেন? কোনো মজার ঘটনা আছে?

রাজীব সালেহীন : আসলে তো ছোট ছোট অনেক স্মৃতি, অনেক গল্প। অনেক ছোট্ট ছোট্ট দুষ্টুমির জন্য বিপদে পড়া। নানা সময়ে যখন যার কোনো উদ্যোগ ছিল, যে যেই ঘটনার নায়ক, তখন আমরা অন্যরা বাবু হয়ে যেতাম। কখনো দেখা যেত—আমি স্কুলে কোনো একটা দুষ্টুমি করেছি বা মহল্লায় কোনো একটা দুষ্টুমি করেছি—সেটার বিচার দিতে গিয়ে কোনো অভিভাবক এল, তখন আমার অন্য বন্ধুরা ‘বাবু’ হয়ে পাশে এসে দাঁড়াত। আবার কখনো কখনো অন্য বন্ধুর বিপদে আমরা বাবু হয়ে পাশে দাঁড়াতাম। বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে, বিভিন্ন কারণে—আমরা কখনো বাবু, আমরা সবাই ‘দাগি’র নিশান।

রাজীব সালেহীন
প্রশ্ন

সব মিলিয়ে শিহাব শাহীন ও আফরান নিশোর সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?

রাজীব সালেহীন : শিহাব শাহীন ভাই ও নিশোর সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা আগেও ছিল। শিহাব ভাই চমৎকার একজন পরিচালক, যিনি অভিনয়শিল্পীর জন্য প্রেক্ষাপট তৈরি করে দেন। এমনভাবে দৃশ্যের বর্ণনা করে দেন, এমন কিছু পরিস্থিতি তৈরি করে দেন, অভিনয়শিল্পীর জন্য সেই চরিত্র নির্মাণ সহজ হয়ে যায়। চরিত্র ফুটিয়ে তোলার জন্য ছোট ছোট ক্লু দেন, যা চরিত্রকে বাস্তবসম্মত করে তোলায় কাজে লাগে। নিশো সহশিল্পী হিসেবে খুবই আন্তরিক। আগেও নিশোর সঙ্গে কাজ করেছি, অভিনয়ের উন্নয়নের জন্য কী করা যায়, কী করলে দৃশ্যটা বাস্তবসম্মত মনে হবে—সেটা করার জন্য শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে। পরামর্শ নেওয়া, পরামর্শ দেওয়া এবং চরিত্রে কী কী ইনপুট দেওয়া যেতে পারে, সে ব্যাপারে সহযোগিতা করে। দাগি ছবির শুটিংয়ের সময় যখন মেকআপ নিচ্ছিলাম, তখন নিশো আমাকে সার্বক্ষণিক তদারকি করছিল যে এ রকম না এ রকম। এ রকম করলে ভালো হবে। সেখান থেকে পরিচালকের পরামর্শ নিয়ে অভিনয়ের যেখানে যেখানে প্লাস করবে, সেগুলো করেছি। তাই আমার সঙ্গে দুজনের অভিজ্ঞতা খুবই ভালো।

প্রশ্ন

এটা কি আপনার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে?

রাজীব সালেহীন : ‘দাগি’র বাবু চরিত্র নিয়ে অনেকে প্রশংসা করছেন। প্রশংসার কারণে আমার ওপর একটা বাড়তি দায়িত্ব এসে পড়েছে, মনে হচ্ছে আরও ভালো কাজ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে যদি আসলে সামনে ভালো কাজ করতে পারি, এই প্রচেষ্টা চালু রাখতে পারি—আমি  যদি আমাকে আরও উত্তীর্ণ করতে পারি, এটাকে আমার টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে দেখা যেতে পারে।

রাজীব সালেহীন
প্রশ্ন

সামনে আর নতুন কী কাজ আসছে?

রাজীব সালেহীন : গাজী রাকায়েতের একটা সিনেমায় কাজ করেছি। ছবির নাম ‘সি দ্য পারসন’, সেটার পোস্টপ্রোডাকশনের কাজ চলছে। সামনে ডাব করব। আমি নিজে একটা শর্টফিল্ম বানিয়েছি, যদিও যৌথ পরিচালনায়—সেটারও পোস্টপ্রোডাকশন চলছে।

প্রশ্ন

‘দাগি’ দেখে সহকর্মীরা কে কী বললেন?

রাজীব সালেহীন : সহকর্মী থেকে শুরু করে চেনা–অচেনা অনেকে ভালো ভালো কথা বলছেন। সবারই খুব ভালো লেগেছে এমনটা জানাচ্ছেন। আমার চরিত্রটির কথা আলাদাভাবে উল্লেখ করেছে। এর মধ্যে পরিচালক চয়নিকা চৌধুরী দিদি যখনই দেখা হয়েছে, বলেছেন, রাজীব, তোমার বাবু চরিত্রটায় এত মায়া—তাঁর মতো একজন পরিচালকের কাছ থেকে এমন কথা শোনা আমার জন্য ভালো লাগার। ‘দাগি’ এখন অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকায় মুক্তি পেয়েছে—সেখান থেকেও বন্ধুরা, শুভাকাঙ্ক্ষীরা ইনবক্সে ভালো লাগার কথা জানাচ্ছেন, এটা ভীষণ উপভোগ করছি।

প্রশ্ন

নাটকে নতুন সংগঠন যাত্রা শুরু করল। আপনার প্রত্যাশা কী?

রাজীব সালেহীন : অভিনয়শিল্পী সংঘের নতুন কমিটির আমি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছি। আমাদের কিছু সংকট আছে, সেগুলো নিয়ে সামনে কাজ করব। আগের কমিটিও অনেক কাজ করেছে। সংকটের এমন অবস্থা সব সময় থাকে, সেগুলো সমাধান করতে হয়। আশা করছি, অভিনয়শিল্পী সংঘকে আগের কমিটির সবাই যে জায়গায় নিয়ে গেছেন, সেখান থেকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নেব। সে কারণে বিনোদন অঙ্গনের সব স্টেকহোল্ডারকে সঙ্গে নিয়ে এগোব।

প্রশ্ন

এবারের ঈদে আর কী সিনেমা দেখলেন?

রাজীব সালেহীন : ‘বরবাদ’, ‘চক্কর’—দুটি সিনেমা দেখা হয়েছে। দুটিই ভালো লেগেছে। দুটি দুই ধরনের সিনেমা। সব ধরনের সিনেমা হওয়ার দরকার আছে। দর্শকও বেশ আগ্রহ নিয়ে ছবি দেখছেন, এটা দেখে ভালো লাগছে। আমরা আরও বৈচিত্র্যময় সিনেমা চাই। শুধু ঈদ নয়, ঈদ ছাড়াও এ রকম সিনেমা আসুক—এটাই চাওয়া। আমরা আরও ভালো ভালো সিনেমা করব—এটাই চাই।

প্রশ্ন

এবার ঈদের ছবিতে পার্শ্বচরিত্রের অভিনেতাদের গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, এই বদল কীভাবে দেখেন?

রাজীব সালেহীন : পার্শ্বচরিত্রকে যাঁরা আলাদা গুরুত্ব দিচ্ছেন, তাঁদের আলাদাভাবে ধন্যবাদ দিতে চাই। সব চরিত্র মিলিয়েই তো আসলে একটা সিনেমার গল্প হয়ে ওঠে। এই যে পার্শ্বচরিত্রগুলোকে যখন আলাদা গুরুত্ব দেওয়া হয়, তখন পার্শ্বচরিত্রের অভিনেতা বা সর্বোপরি সব অভিনেতাদের দায়িত্বের জায়গাটা বেড়ে যায়। এটা একধরনের অনুপ্রেরণা। এই অনুপ্রেরণায় মনে হয় যে পরের কাজটা কীভাবে আরও ভালো করা যায়। এই যে বদলে যাওয়া পরিস্থিতি, পার্শ্বচরিত্রকে গ্লোরিফাই করা বা তাদের আলাদাভাবে মনে করা—আমার খুবই ভালো লাগছে।  আমি নিজেও এটার একটা অংশ হতে পেরে আরও বেশি ভালো লাগছে। আনন্দিত বোধ করছি।