মৌসুমী নাগ
মৌসুমী নাগ

‘আমি ৮ বছর পর ভুল সিদ্ধান্ত নিইনি’


তন্ময় তানসেনের রানআউট–এ কাজ করার পর ৮ বছর আর কোনো সিনেমায় অভিনয় করেননি মৌসুমী নাগ। চক্কর ৩০২ দিয়ে আবার সিনেমায় ফিরেছেন এই অভিনেত্রী। ছবিতে তাঁর করা ‘নীলা আহমেদ’ চরিত্রটি প্রশংসা পাচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার তাঁর সঙ্গে কথা বলেছে ‘বিনোদন’। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মনজুরুল আলম

প্রশ্ন

বিরতি কেন নিয়েছিলেন?

মৌসুমী নাগ: ‘রানআউট’ সিনেমার পরে আমি মা হই। পরে সন্তান ও পরিবারকে সময় দেওয়ার জন্য আর অভিনয় করিনি। মাঝে দু–একবার ধারাবাহিক নাটকে অভিনয়ের চেষ্টা করেছিলাম। সব মিলিয়ে সন্তান রেখে কাজ করা হয়ে ওঠেনি। আমি অভিনয়ে ফেরার অপেক্ষায়ও ছিলাম না। র‍্যানডম কাজটি হয়ে গেছে।

প্রশ্ন

‘চক্কর ৩০২’ সিনেমায় নাম লেখালেন কীভাবে?

মৌসুমী নাগ: একটি সিনেমায় মোশাররফ করিম, তারিন, দিনার ভাইদের মতো অনেক গুণী অভিনয়শিল্পী রয়েছেন। শরাফ আহমেদ জীবনের মতো পরিচালক নিজেই প্রস্তাব দিয়েছেন। গল্পটি ভালো। সেখানে আমার চরিত্রটিও গুরুত্বপূর্ণ। সব বুঝে সিনেমাটি আমি হাতছাড়া করতে চাইনি। শুধু আমি নই, কোনো শিল্পীই চাইবে না। এমন গল্প যেকোনো শিল্পীই লুফে নেবে। আমি কেন নেব না। আমি ৮ বছর পর ভুল সিদ্ধান্ত নিইনি। বুঝতে পারছি, চরিত্রটি আমার জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে।

প্রশ্ন

শুটিংয়ের কোনো মজার গল্প?

মৌসুমী নাগ: সিনেমায় আমার সন্তান খুন হয়। যে কারণে পুরো গল্পে আমাকে ইমোশনাল একটা জার্নির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এটা অনেক দিন ধরে শুটিং হয়েছে। প্রতিদিন একই রকমভাবে চরিত্রের মধ্যে থেকেছি। মোশাররফ করিম ভাই অনেক মজার মানুষ। দেখা যায়, শুটিংয়ে গল্পে আড্ডায় অনেক হাস্যরসিকতা করেন। সেগুলোর মধ্যে আমি থাকতে পারিনি। মজা করার সুযোগ আমার কম ছিল। শুটিংয়ে আমার একমাত্র কাজ ছিল চরিত্রের ইমোশনটা ধরে রাখা। আমার পরিবার আছে, সন্তান আছে। নিজের পরিস্থিতিকে সামনে এনে চরিত্রের সঙ্গে বোঝাপড়া তৈরি করেছি। তবে এমনটা কোনো পরিবারে হোক, এটা ভুলেও চাই না।

মৌসুমী নাগ
প্রশ্ন

প্রতিক্রিয়া কেমন পাচ্ছেন?

মৌসুমী নাগ: শুটিংয়ের সময় কল্পনাও করিনি এতটা জনপ্রিয়তা দেবে চরিত্রটি। যেখানেই যাচ্ছি দর্শক, সহকর্মী, কাছের মানুষ; আমার অভিনয়ের প্রশংসা করছেন। কদিন আগে শিল্পী সংঘের নির্বাচনের ভোট দিতে গেছি, গাড়ি থেকে নামতেই সবাই আমার নীলা চরিত্র নিয়ে কথা বলছিলেন। বলছিলেন, অভিনয়ে তাঁরা আমাকে আগে এভাবে দেখেননি। অনেকে বলছিলেন সারপ্রাইজ হয়েছেন আমাকে দেখে। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে আমাকে নিয়ে লিখছেন। কেউ কেউ বলছেন, আমার নিয়মিত সিনেমায় অভিনয় করা উচিত।

প্রশ্ন

তাহলে কি নিয়মিত অভিনয় করতে চান?

মৌসুমী নাগ: এখন আমার চাওয়া তো থাকবেই আরও ভালো গল্পে কাজ করা। সে রকম গল্প, চরিত্র পেলে অবশ্যই নাম লেখাব। একজন শিল্পী তো সব সময়ই নিয়মিত কাজ করতে চায়।

প্রশ্ন

সিনেমা হলগুলোতে টিমের সঙ্গে গিয়েছিলেন?

মৌসুমী নাগ: আমি মোশাররফ ভাইসহ টিমের সঙ্গে বেশ কিছু সিনেমা হলে ঘুরেছি। দর্শকেরা সিনেমাটির গল্প, নির্মাণ, চরিত্রের অনেক প্রশংসা করছিলেন। তাঁদের প্রশংসায় কেঁদে ফেলেছি। সরাসরি দর্শকদের কাছ থেকে এই প্রাপ্তি ছিল অপ্রত্যাশিত, অকল্পনীয়। তাঁরা এতটা পছন্দ করবেন কল্পনার বাইরে ছিল।

প্রশ্ন

সিনেমাটি কম সংখ্যক হলে চলছে।

মৌসুমী নাগ: এটা নিয়ে তো আফসোসের কিছু নাই। এখন ব্যবসায়িক জায়গা থেকেই সবাই সিদ্ধান্ত নেবে কোনোটিকে কত শো দেবে। এখানে যেটা হয়েছে সব সিনেমাই ঢাকাকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। দেশে যদি বিভাগীয়, জেলা, উপজেলা শহরে সিনেমা হল থাকত, তাহলে সিনেমাটি আরও বেশি হলে মুক্তি পেত। আমাদের হলসংখ্যা দ্রুত আরও বাড়ানো উচিত। কারণ, বাংলা সিনেমা নিয়ে দর্শকদের আগ্রহ খুব কাছ থেকে বুঝতে পারছি। দর্শক এখন বাংলা সিনেমা দেখতে চায়।

মৌসুমী নাগ
প্রশ্ন

প্রায় দুই দশকের ক্যারিয়ার, পেছনে তাকালে কী মনে হয়?

মৌসুমী নাগ: ক্যারিয়ারের শুরু থেকে দর্শকের ভালোবাসা পেয়েছি। মাঝে অভিনয় করিনি। তখন অনেকে আমাকে ভুলেই যাচ্ছিলেন। আট বছর পরে এবার যখন ফিরলাম, তাঁরা আবার বলা শুরু করলেন, অনেক দিন পরে আপনাকে দেখলাম। আবার নতুনেরা নতুন করে চিনছেন। তাঁরা বলছেন, ‘আপনার অভিনয় অনেক ভালো হয়েছে। আপনাকে আরও দেখতে চাই।’ দর্শকদের এই ভালোবাসা, এই সম্মান আমাকে আপ্লুত করে। ক্যারিয়ার নিয়ে আফসোস নাই। দর্শকদের ভালোবাসা পাচ্ছি, এটা সেরা প্রাপ্তি, আশীর্বাদ।

প্রশ্ন

নতুন কী কাজে দেখা যাবে?

মৌসুমী নাগ: ‘চক্কর ৩০২’ মুক্তির পরে বেশ কয়েকজন পরিচালকের সঙ্গে নাটক, ওটিটির কাজ নিয়ে কথা হয়েছে। এখনো কাউকে কনফার্ম করিনি। ব্যাটে–বলে মিললে করব।