আজ মঙ্গলবার বেলা ৩টা ৫ মিনিটে চ্যানেল আইয়ে প্রচারিত হবে ‘মন মানসী’। সানজিদ খান পরিচালিত টেলিছবিটিতে অভিনয় করেছেন শারমীন জোহা শশী। গতকাল সন্ধ্যায় তাঁর সঙ্গে কথা বলে বিনোদন।
ফোনে পাচ্ছিলাম না...
বাসায় আছি। কাজিনেরা আসছে। আজ রাতে আর্জেন্টিনার খেলা। সবাই একসঙ্গে দেখব। নানা পরিকল্পনা। ফোন রেখে আড্ডা দিচ্ছিলাম।
আপনার প্রিয় দল কি আর্জেন্টিনা?
একদম ছোটবেলা থেকেই। আব্বুর কাছ থেকে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা দেখার অভ্যাস। আব্বু ম্যারাডোনার ভক্ত ছিলেন, তখন থেকে আমাদের পুরো পরিবার আর্জেন্টিনা। আব্বু থিয়েটার করতেন, রংপুর বেতারে চাকরিও করতেন। বিশ্বকাপের সময় দেখতাম, ক্লাবে যেতেন না, অফিসও তাড়াতাড়ি করে চলে আসতেন। মুড়ি মাখানো, চা-বিস্কুট খাওয়া, কত কী যে হতো! খেলার সময় তো আমার রংপুরের বাসায় উৎসবের আমেজ।
বাবার থিয়েটারচর্চার কারণেই কি আপনার বিনোদন অঙ্গনে যুক্ত হওয়া?
আব্বু মঞ্চ করতেন অনেক বছর। অভিনয়ের কারণেই আব্বুকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন আমার দাদা। তারপর আমার চাচার বাসায় থেকে থিয়েটার করতেন, রেডিওতে কাজ করতেন। আব্বুর প্রাণ ছিল থিয়েটার। আমার আম্মুও থিয়েটারের সঙ্গে জড়িত, অভিনয় করেন। আবার রংপুর বেতারে চাকরিও করেন। এক বছর আগে বাবা পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। (অভিনয়শিল্পী ও পরিচালক) সুচন্দা আন্টি কিন্তু আমার আব্বুর কাছ থেকে ‘হাজার বছর ধরে’ ছবিতে আমার অভিনয়ের জন্য অনুমতি নেন। আব্বু তখন ভেবেছিলেন, জহির রায়হানের উপন্যাস, ছবি বানাবেন সুচন্দা, এটার অবশ্যই আর্কাইভ মূল্য থাকবে। তখন আমি মাত্র ক্লাস টেনে পড়ি। উপন্যাসটাও পড়া ছিল। সুচন্দা আন্টি যেহেতু ডিরেকশন দিচ্ছেন, আব্বু ভেবেছিলেন, কিছু একটা হবে। এটাও ঠিক, তখনো ছবিতে অভিনয়ের মতো ম্যাচিউরিটি আমার আসেনি। সেই আমি কিন্তু ছবির শুটিং করেছি রংপুর থেকে ঢাকায় আসা-যাওয়া করে।
অভিনয়শিল্পী ও পরিচালক সুচন্দা আপনার খোঁজ পেয়েছিল কীভাবে?
আমি তো ‘লাক্স-আনন্দধারা মিস বাংলাদেশ ফটোজেনিক’ এ ছিলাম। তখন ক্লাস টেনে পড়তাম। এখন যে লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার হয়, তখন হতো ‘লাক্স-আনন্দধারা মিস বাংলাদেশ ফটোজেনিক’ প্রতিযোগিতা। বিভাগ থেকে প্রথম স্থান অর্জনকারীর নাম ঘোষণা করা হতো। বিভিন্ন বিভাগ থেকে যারা ফার্স্ট হতো তাঁদের বলা হতো—মিস বরিশাল, মিস রাজশাহী, মিস চট্টগ্রাম, এ রকম। আমাদের রংপুর তখনো বিভাগ হয়নি। রাজশাহী থেকে আবেদন করেছি। আমি মিস রাজশাহী হয়েছিলাম। ওই সময়ই ‘প্রথম আলো’য় আমার মুকুট পরিহিত একটা ছবি ছাপা হয়, যা সুচন্দা আন্টি দেখেছিলেন। তারপর ‘আনন্দধারা’ অফিসে যোগাযোগ করে আমার বাসার ল্যান্ডফোনে ফোন নম্বর সংগ্রহ করেন। যেদিন বাসায় ফোন করেছিলেন সেদিন আব্বুই ফোনটা ধরেন। তারপর সুচন্দা আন্টি আমাকে তাঁর ছবিতে প্রয়োজন, এটা জানালেন। আব্বুও সময় নিলেন। পরে হ্যাঁ বললেন। আব্বু তখন আম্মুকে বলেছিলেন, ও যে এই বয়সে এই সুযোগটা পাচ্ছে, এটা পরে আর পাবে না। এই ছবিটা ওর করা উচিত। এভাবেই আমার জড়িয়ে যাওয়া। মাও আমার অভিনয়ে সাপোর্ট করতেন। তিনিও বাংলাদেশ বেতারে জব করেন। তিনিও থিয়েটারকর্মী। এদের পীড়াপীড়িতে আমার অভিনয়ে যুক্ত হওয়া।
যে আপনি দশম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ‘হাজার বছর ধরে’তে অভিনয় করলেন। তারপর লম্বা সময় পেরিয়েছে। মাঝে অনেক নাটকে অভিনয় করলেও এখন নিয়মিত দেখা যাচ্ছে না। অভিনয় কি কমিয়ে দিয়েছেন?
একটু কমই করছি। ভালো কাজ, যেটা করতে চাই, যে প্রোডাকশনের জন্য পরিশ্রম করতে চাই, ও রকম প্রোডাকশন আমাদের এখানে যে হচ্ছে না, তা নয়; সামহাউ আমার কাছ পর্যন্ত হয়তো প্রস্তাব আসছে না। এমনিতে আমার কাছে যেসব প্রস্তাব আসছে, সেগুলোও যদি ওকে করি, তাহলে মাসে ৩০ দিন কাজ করা যাবে। কিন্তু যে স্ক্রিপ্ট আমার করতে ভালো লাগবে, ও রকম কাজ খুঁজছি বলেই আমার কাজও কমে গেছে, স্ক্রিন প্রেজেন্সও কমে গেছে।
এ নিয়ে আফসোস আছে?
না। ক্যারিয়ার নিয়ে কখনোই আমি উচ্চাকাঙ্ক্ষী ছিলাম না। সব সময় আমার মনে হয়েছিল, ভালো কাজ করব, ভালো কাজের সঙ্গে থাকব। দ্যাটস ইট।
‘মন মানসী’তে অভিনয় করলেন তাহলে কী ভেবে?
চিত্রনাট্য পড়ার পর মনে হয়েছে, চোর বা চুরি করা নিয়ে আমাদের এখানে অনেক নাটক, টেলিছবি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এটার মধ্যে দারুণ একটা মেসেজ আছে। এখনই তা বলতে চাই না। আমার কাছে পুরো ভাবনাটা ব্যতিক্রমী মনে হয়েছে। সানজিদ খানের সঙ্গে এটাই আমার প্রথম কাজ। তাঁর মধ্যে কাজের প্রতি যে নিষ্ঠা দেখেছি, সততা দেখেছি, তা ভালো লেগেছে। জানি না আগে তিনি কী কাজ করেছেন, সেগুলো কেমন হয়েছে, কিন্তু এই প্রোডাকশন দেখে মনে হয়েছে, তিনি ভালো কাজের সঙ্গে থাকতে চান, ভালো কাজ করতে চান। শুরু থেকেই নাটকের প্রতিটা ব্যাপার ছিল বেশ পরিকল্পিত।
দশম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় প্রথম ছবিতে অভিনয়, সে হিসাবে আপনার অভিনীত ছবির সংখ্যা বেশি হওয়ারই কথা...
‘হাজার বছর ধরে’তে অভিনয়ের পর যে পরিমাণ প্রস্তাব পেয়েছিলাম, সবই যদি করতাম, তাহলে এখন হয়তো নাটকে আমার কাজ করা হতো না। নিয়মিতভাবে হয়তো সিনেমার শিল্পীই থাকতাম। প্রথমত, তখন আমি অনেক ছোট, মা-বাবাও চাননি বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে কাজ করি। একটু মনে করলেই দেখা যাবে, ২০০৫ সালে যখন আমার অভিনীত ছবিটি মুক্তি পায়, তখন দেশের সিনেমার অবস্থা খুবই খারাপ। কাটপিস আর কাটপিস। এসব দেখে ভয় পাই। আমিও ম্যাচিউরড ছিলাম না। তাই বিরতি পড়ে। আমার আবার এইচএসসির পড়াশোনার চাপ, তারপর নাটকে ব্যস্ত হয়ে পড়া। ওই সময়টায় চাষী নজরুল ইসলাম আঙ্কেলও আমাকে শাস্তি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন। চিত্রনায়ক রিয়াজ ভাই একটা বিজ্ঞাপনচিত্রের কথাও বলেছিলেন, সুইজারল্যান্ডে যেটার শুটিং হয় কিন্তু সুচন্দা আন্টি চাননি। তাঁর কথা ছিল, হাজার বছর ধরে মুক্তির আগে নতুন কোনো কাজ নয়। আমিও চেয়েছিলাম, আমার ডেব্যু যেহেতু সুচন্দা আন্টির মাধ্যমে, তাঁর প্রতি সম্মান দেখানো উচিত। তাই সব কাজ ছেড়ে দিয়েছিলাম।
এখন অনুশোচনা হয়?
একদমই না। আমি মনে করি, সৃষ্টিকর্তা আমার জন্য যেটা বরাদ্দ রেখেছেন, সেটাই আমার হবে—আজ অথবা কাল। যেটা আমার নয়, শত চেষ্টাতেও আমার হবে না। এটা আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি।
এখন তো ওয়েবে নানা ধরনের কাজ হচ্ছে।
আমিও চাই ভালো গল্পের ওয়েব সিরিজে কাজ করতে। এখনো যেহেতু শুরু করিনি, একটা ভালো কাজ দিয়েই হোক, সেটাই চাওয়া।