লুকিয়ে, গোপনে বিয়ে করতে পারব না: তমা মির্জা

হঠাৎ চাউর, বিয়ে করে সংসার করছেন চিত্রনায়িকা তমা মির্জা ও পরিচালক রায়হান রাফী। এ নিয়ে গত মঙ্গলবার ফেসবুক পোস্টও দিয়েছেন তমা। বুধবার সকালে প্রথম আলোকে তমা মির্জা জানালেন, মুক্তি প্রতীক্ষিত কাজের প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বন্ধুত্ব, প্রেম, বিয়ে ও কাজ প্রসঙ্গে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন মনজুর কাদের

প্রশ্ন

হঠাৎ চারপাশে আপনাদের বিয়ের খবর?

তমা মির্জা : বিয়ের বিষয়টি পুরোপুরি গুঞ্জন। মিডিয়া থেকে এসব ছড়ানো হচ্ছে। ছোট ছোট ইউটিউব চ্যানেলের কেউ আছেন, যাঁরা রসালো হেডলাইন দিয়ে প্রথমে সংবাদ প্রকাশ করছে। এরপর সেসব ছড়িয়ে পড়ছে।

প্রশ্ন

আপনাদের ঘনিষ্ঠ কেউ কি পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছে?

তমা মির্জা : বিয়ের খবরের তো বিন্দু পরিমাণ সত্যতা নেই। যেহেতু আমরা দুজনে পরিচিত, প্রথমে বন্ধুত্ব, এরপর ভালোবাসা, তারপর বিয়ের সিদ্ধান্ত—এভাবেই তো হয়। কিন্তু বন্ধুত্বের বাইরে রাফীর সঙ্গে আমার বিন্দু পরিমাণ সম্পর্ক নেই। তাই আমার ঘনিষ্ঠজনেরাও বিয়ের মতো খবর ছড়াতে পারে না। বিয়ে অনেক বড় একটা বিষয়—দুইটা পরিবার জড়িত থাকে। আছে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী, মিডিয়ার মানুষও। আমি পাবলিক ফিগার, একজন সাধারণ মানুষ না যে কাজি ডেকে বিয়ে করলাম, কেউ জানলও না। আমার বিশাল সার্কেলও আছে। বিয়ের মতো এত বড় কাজ লুকিয়ে ও গোপনে করতে পারব না। তা ছাড়া রাফীও তো একজন জনপ্রিয় এবং পরীক্ষিত পরিচালক, চাইলে সে–ও লুকিয়ে বিয়ে করতে পারবে না। এত বাজে রিউমার কেউ ছড়াতে পারে! প্রেমের গুঞ্জন হয়, এটা হয়, সেটা হয়—আমি কোনো মন্তব্য দিই না। কারণ, আমি মনে করি, ইন্ডাস্ট্রিতে যেহেতু কাজ করি, নানা ধরনের আলোচনা-সমালোচনা উঠবে। কিন্তু তাই বলে বিয়ের গুঞ্জন! আমি মনে করি, আমাকে কাজের মাধ্যমে আলোচনায় থাকতে হবে। অন্যান্য ব্যক্তিগত বিষয়ে তাই শিগগিরই মন্তব্য করতেও চাই না।

তমা মির্জা
প্রশ্ন

পরিচালক রাফীর সঙ্গে নায়িকা তমার আসলে কী সম্পর্ক?

তমা মির্জা : রাফী হলো আমার পরিবারের একটা অংশ। এই পরিবারের অংশ দিলরুবা আপু (একজন চিকিৎসক), (মডেল ও অভিনয়শিল্পী তানজিয়া) মিথিলাও। তাঁদের জন্মদিনও উদ্‌যাপন করি। অন্য দুজন মেয়ে, রাফী ছেলে বলে এখানে সম্পর্কটা ভিন্নভাবে বিশ্লেষণ হবে, তার কোনো অবকাশ নেই। গত এক-দেড় বছর কাজের বাইরে আমি কোনো কিছু নিয়ে চিন্তা করছি না। আগামী দুই বছরও প্রেম, বিয়ে নিয়ে আমার চিন্তা নেই। আপাতত প্রেম-ভালোবাসার মধ্যেও থাকতে চাই না। শুধু কাজে ফোকাস করতে চাই।

প্রশ্ন

আপনাদের দুজনের মধ্যকার প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে আগে কথা বলেছিলেন...

তমা মির্জা : রাফী ছয় মাস আগে বলেছে, আমাদের সম্পর্কটা শুধুই বন্ধুত্বের। আমার কাছে সংবাদমাধ্যম থেকে জানতে চাওয়া হলে বলেছি, ভালোবাসা চলে গেলে বন্ধুত্ব থাকে না...। আসলে পরিস্থিতি অনেক সময় অনেক রকম হয়। যে কারণে হয়তো আমাদের দুই পরিবারের আবার একত্র হওয়া। আঙ্কেল (রাফীর বাবা) মারা যাওয়ার পর আমাদের দুই পরিবারের সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে।

তমা মির্জা
প্রশ্ন

তার মানে এ পরিস্থিতি বন্ধুত্বের সম্পর্ক জোড়া লাগিয়েছে?

তমা মির্জা : আঙ্কেল আমাকে প্রচণ্ড আদর করতেন। কথা হচ্ছে, আমার বন্ধুর এত বড় একটা সংকট সময়, আর আমি পাশে থাকব না—সেটা রাফীই হোক বা আমার যে বন্ধুই হোক, চিন্তাই করতে পারি না। আঙ্কেল যেহেতু মারা গেছেন বেশি দিন হয়নি, সে কারণে জন্মদিন উদ্‌যাপনের পরিকল্পনা কারোরই ছিল না। আমরাও করতে চাইনি। তারপরও তো পরিবারের এক-দুজন-আমরা যারা কাছের মানুষ আছি, তারা তো আর একদমই ভুলে যেতে পারি না। পরদিন তাই সবাই মিলে একটা সারপ্রাইজ পার্টির আয়োজন করেছে, যাতে রাফীর মনটা ভালো থাকে। সবাই মিলে আড্ডা দেওয়া। ওখানে সবাই পুরোনো বন্ধু, আমার মতোই।

প্রশ্ন

ভবিষ্যতে আপনাদের সম্পর্কটা কোথায় গড়াবে, প্রেম কিংবা বিয়ের মতো কিছু ঘটবে কি?

তমা মির্জা : ভবিষ্যৎ কী আমি জানি না। কারণ, আমার ভাগ্যে কী আছে, আমি জানি না। আমি আজকে একটা কথা বলব, কালকে সেই জিনিসটা হবে না, এটা নিয়ে মানুষ হাসাহাসি করবে বা প্রশ্ন তুলবে, এমন প্রশ্নের সম্মুখীন আমি হতেই চাই না। আমি আমার বর্তমান প্রসঙ্গে জানি, এই বর্তমানে আমি কোনো সম্পর্কে জড়িত নই। গত এক-দেড় বছরে আমি কোনো সম্পর্কে নেই, নিশ্চিত। সামনে কী হবে, সেটা সামনে বলতে পারব। অগ্রিম কিছু বলতে পারব না।

প্রশ্ন

আপনি বলছিলেন, রাফীর সঙ্গে আপনার চমৎকার বন্ধুত্ব। তো বন্ধু হিসেবে তাঁর গুণ, যা আপনাকে মুগ্ধ করে?

তমা মির্জা : রাফী বন্ধুর যেকোনো বিপদে পাশে থাকে। সে খুব আন্ডারস্ট্যান্ডিং। রাফী তাদের বন্ধুদের, বিশেষ করে আমার ক্যারিয়ার যে ভালো সময়, খারাপ সময়, সংকট সময়ে সে-ই একমাত্র মানুষ, যার সঙ্গে কথা বললে ঠিকঠাক পরামর্শ পাই। একই বিষয় ওর বেলায়ও। আরেকটা বিষয়, রাফীর মধ্যে পরিবার প্রাধান্য পায়। পেশাদার জায়গা সে তার কাজের ক্ষেত্রে এক্সট্রিম পর্যায়ের সৎ এবং নিবেদিতপ্রাণ। আমরা যেহেতু একই অঙ্গনে কাজ করি, সে ক্ষেত্রে পরিচালক এবং বন্ধু হিসেবে আমাকে সেরা পরামর্শটাই দেয়। রাফীও তার কাজ নিয়ে আমার সঙ্গে আলোচনা করে।

রায়হান রাফী ও তমা মির্জা
প্রশ্ন

বন্ধু তো আপনার আরও কয়েকজন আছে, তার মধ্যে পরিচালক রাফী অনন্য কোথায়?

তমা মির্জা : রাফী আমাকে অনেক বোঝে। আমি হয়তো কোনো বিষয়ে আপসেট, তাৎক্ষণিকভাবে রাফী আমাকে সেটা থেকে বের করে আনার চেষ্টা করে। বোঝায়। তাই বলতে পারি, ওর সঙ্গে বোঝাপড়ার জায়গাটা বেস্ট। বন্ধু হিসেবে আমাকে সে ভালো বোঝে।

প্রশ্ন

মুক্তি প্রতীক্ষিত কাজ সম্পর্কে বলুন।

তমা মির্জা : আমার তিনটি কাজ আসবে। একটি ওয়েব ফিল্ম ‘আমলনামা’, আরেকটি চলচ্চিত্র ‘দাগি’, এর বাইরে অঞ্জন দত্ত পরিচালিত সিরিজ ‘দুই বন্ধু’।

প্রশ্ন

তার মানে বিরতির পর বছরটা দারুণভাবে শুরু হতে যাচ্ছে?

তমা মির্জা : এ বছর দুটি ওটিটির কাজ, একটি সিনেমা তৈরি আছে। এটা একটু চাপও। ‘আমলনামা’ কিছুদিনের মধ্যে আসবে। কাজটা দর্শকের কেমন লাগবে, এটা নিয়ে ভাবছি। মনে হচ্ছে আমি কি কাজটা ঠিকঠাক করতে পারছি? দর্শকের আদৌ ভালো লাগবে কি? থাকে না, কিছু কাজ করার পর মনে হয় এটা আরেকটু ভালো হতে পারত। কিছু কাজ করার পর মনে হয়, এটাই সেরা। ‘আমলনামা’য় এসে মনে হয়েছে, ‘খাঁচার ভেতর অচিন পাখি’র পরপর আরেকটা ভিন্নধর্মী কাজ করলাম। ‘খাঁচার ভেতর অচিন পাখি’ মানুষকে ভিন্ন রকম অনুভূতি দিয়েছে, ‘আমলনামা’ দেখার পরও তৃপ্তি কাজ করবে। আর দাগি হলো একেবারে ভিন্নধর্মী একটা গল্প। আমরা তো সাম্প্রতিক সময়ে খুব বেশি অ্যাকশন সিনেমা দেখছি, সে জায়গা থেকে দাগিতে দর্শক ভিন্ন রকম ভাইব পাবে। সবকিছু মিলে মনে হচ্ছে, খুব ভালো একটা সময় হয়তো আমার আসতে যাচ্ছে। কয়েক বছর ধরেই আমার ভালো সময় যাচ্ছে। কাজগুলো সবাই আলাদা করতে পারছে। এই সময়টা ধরে রাখা আমার জন্য চ্যালেঞ্জিংও ছিল। ব্যাক টু ব্যাক ভালো কাজের ধারাবাহিকতা ধরে রাখা, দর্শকের আস্থার জায়গাটা ধরে রাখা—এটাই সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং। এবারও মনে হয়, উতরে যেতে পারব। (হাসি)

তমা মির্জা
প্রশ্ন

গেল কয়েক বছরে যে কয়টি কাজ করেছেন, তার মধ্যে রায়হান রাফীর সঙ্গে করা কাজগুলো আলোচনায় এনেছে আপনাকে। সে হিসেবে কি বলা যায় রাফীর সঙ্গে আপনার বন্ধুভাগ্য ভালো?

তমা মির্জা : আমি কার জন্য লাকি বা কে আমার জন্য লাকি—এভাবে বলব না। আমি ছাড়া ওর অনেক কাজ ভালো গেছে। একইভাবে আমি রাফীর বাইরেও তিন-চারটা কাজ করেছি—সে কাজ নিয়েও মানুষ ইতিবাচক কথা বলেছে। ‘দাগি’ এলেও দর্শক তা–ই বলবে, অঞ্জন দত্তের ‘দুই বন্ধু’ কাজ নিয়েও বলবে। আমার কাছে মনে হয়েছে, আমরা যেমন হিরো-হিরোইনের জুটি দেখি, তেমনি ডিরেক্টর-হিরো, ডিরেক্টর-হিরোইনের জুটির কাজও দর্শক পছন্দ করে। গত কয়েক বছরে আমাদের যে কাজগুলো আসছে, একসঙ্গে করা গল্পগুলো যেমন পছন্দ করেছে, অন্যগুলো তো করছে। আমি এমন অনেক মন্তব্য দেখেছি, রাফী-তমার কাজগুলো একটি ভিন্ন রকম হয়। যদি বলতে হয়, আমি বলব রাফী অসাধারণ নির্মাতা। এখনকার সময়ে সে যেভাবে বাণিজ্যিক ধারার গল্পকে উপস্থাপন করে, এভাবে অন্য কাউকে করতে দেখেনি। রাফী দর্শকের পালস দারুণভাবে বোঝে। সবাই যার যার মতো করে ভালো কাজ করছে, কিন্তু রাফীর কাজগুলো বড় পরিসরে থাকে, ওর একটা সিগনেচারও রেখে যায়। ওর ছবি মানেই অন্য রকম একটা ভাইব। এখন খুব কম পরিচালক আছে, যার নামে ছবি চলে। নরম্যালি স্টার কাস্টিংয়ে ছবি চলে। রায়হান রাফী আলাদা একটা পরিচিতি করছে, যার নামেও দর্শক প্রেক্ষাগৃহে আসে। আমার নতুনভাবে ফিরে আসার ক্ষেত্রে রাফীর অবদান অনেক, সেই-ই আমাকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করেছে।

প্রশ্ন

‘দাগি’ ছাড়া আর ঈদে মুক্তি পাওয়া যে ছবি দেখবেন? কেন দেখবেন?

তমা মির্জা : ‘তুফান’–এ নতুন এক শাকিবকে দেখেছি, ‘বরবাদ’–এর টিজারেও আরেক শাকিবকে দেখলাম। মুগ্ধ হয়েছি। হোয়াট আ ট্রান্সফরমেশন। আমি প্রেক্ষাগৃহে ছবিটা অবশ্যই উপভোগ করতে চাই। অভিনয়শিল্পী হিসেবে বলব, শাকিব খানের একের পর এক নতুন অবতারে পর্দায় হাজির হওয়া দেখে অনেক কিছু শেখারও আছে। ঈদে আমরা যে ধরনের ছবি দেখতে চাই, ‘বরবাদ’ ঠিক সে ধরনেরই ছবি মনে হচ্ছে। শাকিব খানকেও আমরা নতুনভাবে দেখতে পারব। এরপর ‘জংলি’ দেখব।