অভিনেত্রী মারিয়া শান্ত
অভিনেত্রী মারিয়া শান্ত

ভাইরাল গার্ল হতে চাই না

তরুণ অভিনেত্রী মারিয়া শান্তর ক্যারিয়ার নিয়ে তাড়াহুড়া নেই। এ কারণে স্বল্পসংখ্যক কাজে তাঁকে দেখা যায়। সম্প্রতি শেষ করেছেন নীলাঞ্জনা, শুধু কবিতার জন্য নাটকগুলোর কাজ। ক্যারিয়ার ও ব্যক্তিগত নানা প্রসঙ্গে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন মনজুরুল আলম

প্রশ্ন

ফোন কেটে দিয়ে আবার সঙ্গে সঙ্গে ফোন করলেন, ব্যস্ত কোনো কিছু নিয়ে?

মারিয়া শান্ত: ব্যস্ত না। বাসাতেই আছি। ফোন ধরতে গিয়ে ভুলে কেটে দিয়েছি।

প্রশ্ন

ছবিতে দেখলাম, কোনো একটি বিলে ঘুরছেন...

মারিয়া শান্ত: ওটা কদিন আগে, মানিকগঞ্জে। বিলের মধ্যে শুটিং ছিল। এখন আপাতত শুটিং রাখিনি। পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত। প্রেজেন্টেশন, ইনকোর্স পরীক্ষার পড়াশোনা করছি। সামনে ফাইনাল পরীক্ষা। যে কারণে কাজও এখন কম করছি। আমি আসলে এখনো নিয়মিত অভিনয়শিল্পী নই। পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ততা বেশি।

প্রশ্ন

নাট্যাঙ্গনে জায়গাটা শক্ত করতে হবে, কতটা ভাবেন?

মারিয়া শান্ত: কাজ তো করবই; কিন্তু তাড়া নেই। আমি চাই, আমাকে দর্শক ধীরে ধীরে কাজ দিয়ে চিনুক। এখনই দর্শক চিনে ফেলুক, কখনোই চাই না। এ ছাড়া তো বড় পর্দা আছে। সেখানেও তো কাজের সুযোগ রয়েছে। অভিনয় শিখে, এগিয়ে গেলে জায়গা একদিন হবেই।

প্রশ্ন

তাহলে চলচ্চিত্র দিয়েই নিজেকে চেনাতে চান?

মারিয়া শান্ত: আমি চাই, ভালো কাজ দিয়ে দর্শক চিনুক। সেটা নাটক–সিনেমা ম্যাটার করে না। একটা কাজ দেখে দর্শক পছন্দ করবেন, সম্মান করবেন, এটাই চাই। ভাইরাল শব্দটাকেই আমি পছন্দ করি না। ভাইরাল শব্দকে আমি ভয় পাই। আমি ভাইরাল গার্ল হতে চাই না।

মারিয়া শান্ত। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে
প্রশ্ন

অনেকেই তো ভাইরাল হওয়ার জন্য নানা কাণ্ড পর্যন্ত ঘটান...

মারিয়া শান্ত: আমার ক্ষেত্রে সে রকম কিছু পাবেন না। ভাইরাল হলেই লাইফে প্যারা শুরু হয়ে যাবে। আলাদা একটি দায়িত্ব পড়বে। আমি এখন লেখাপড়া করছি, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে ক্যাম্পাসে, ক্লাসে সময় কাটাতে চাই। এর মধ্য দিয়ে ইচ্ছেমতো জীবনটাকে উপভোগ করতে চাই। অভিনয় শিখতে চাই। কম কাজ করব, ধীরে ধীরে অনেক বছর পর দর্শক চিনুক, সেটাই আমার মনে গেঁথে রয়েছে। কিন্তু একটু বিরতি পড়ে গেলেই শুনতে হয়ে, বিয়ে করে ফেললাম কি না (হাসি)।

মারিয়া শান্ত। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে
প্রশ্ন

বিয়ে নিয়ে কিছু ভাবছেন, ফেসবুকে দেখলাম, এনগেজ লেখা।

মারিয়া শান্ত: এমন কিছু নয়। অনেক দিন আগে এনগেজ দিয়েছিলাম। তখন বিশেষ একটা কারণও ছিল। পরে আর সিঙ্গেল করার কথা মনে নেই। আপনি বলায় মনে পড়ল। এখন হয়তো চেঞ্জ করে দেব। তবে এনগেজ দেওয়া থাকলে সুবিধা আছে। মানুষ জ্বালাবে কম, ভাববে প্রেম করছি। আমাকে নিয়ে আর আলাদা করে মানুষ মাথা ঘামাতে আসবে না। এ ছাড়া সিঙ্গেল মেয়েদের ঝামেলা বেশি। মানুষ ইনবক্সে নানা কিছু লেখে।

প্রশ্ন

মেসেঞ্জারে প্রেমের প্রস্তাব পান?

মারিয়া শান্ত: এখন সবার ইনবক্সের টেক্সট তো দেখি না। যাঁরা একটু পরিচিত, দেখা হয়েছে বা কথা হয়েছে, তাঁদের সঙ্গে মেসেঞ্জারে কথা হয়। কোনো কাজের কথা হলে, সেটা বুঝতে পারি। তবে কেন কম কাজ করি, কেন ওয়েস্টার্ন পোশাক পরলাম, কেন শাড়ি পরলাম না—এগুলো নিয়ে জানতে হয়। নাটকে তাঁরা আমাকে শাড়িতেই বেশি দেখতে চান।

মারিয়া শান্ত। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে
প্রশ্ন

ভক্ত হিসেবে আপনি কার শাড়ি পরা পছন্দ করেন?

মারিয়া শান্ত: বলিউড অভিনেত্রী রেখাকে শাড়িতে সবচেয়ে সুন্দর লাগে। আলিয়া ভাটের শাড়ি পরার স্টাইলটাও অনেক সুন্দর। তাঁকেও শাড়িতে দেখতে পছন্দ করি। তবে আমি শাড়ি পরায় কাউকে অনুসরণ করি না। নিজের পছন্দমতো স্টাইলে শাড়ি পরি। আমি ছোট থেকেই ফ্যাশনসচেতন। নিজের সব কাজ নিজেই করতে পছন্দ করি। আমার সেই নিজস্ব স্টাইলের শাড়ি পরাই হয়তো দর্শক পছন্দ করেন।

প্রশ্ন

মিডিয়ায় আপনার কাছের বন্ধু কে?

মারিয়া শান্ত: মিডিয়াতে আমার কাছের কোনো বন্ধু এখনো নেই। সহকর্মীদের সঙ্গে কথাবার্তা হয় এই। আমি আসলে এক বসাতেই কারও সঙ্গে আড্ডা জমাতে পারি না। আমি অন্তর্মুখী টাইপের। কারও সঙ্গে আমার পরিচয় হয়ে বন্ধুত্ব হতে হতে দুই থেকে তিন বছর লেগে যায়। দু–একটা কাজে একসঙ্গে অভিনয় করেই বন্ধু হয়ে গেলাম, এটা পারি না। কারণ, আমার কাছে বন্ধুত্ব শব্দটা অনেক বড় মনে হয়। যে কারণে হয়তো অনেক কিছু চিন্তা করে বন্ধুত্বের সম্পর্কে যেতে চাই।

মারিয়া শান্ত। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে
প্রশ্ন

অভিনয়ে আসার পর জীবনটাকে কীভাবে দেখেন?

মারিয়া শান্ত: আমি আগের মতোই শান্ত ও ঝামেলা নেই, এমন জীবন যাপন করতে চাই। সেখানে এখন কিছু মানুষ চেনে। এর বাইরে তেমন বদল নেই।

প্রশ্ন

বললেন, ঝামেলাহীন জীবনের কথা; কিন্তু বন্ধু থাকলেও তো মনোমালিন্য হবে। তখন ঝামেলা এড়ান কীভাবে?

মারিয়া শান্ত: আমার কাছের বন্ধু মিডিয়ার কেউ নন। তার সঙ্গেই একবারই ভুল–বোঝাবুঝি হয়েছিল, কিছুটা ঝগড়া হয়েছিল (হাসি)। পরে মিটমাট করেছিলাম। আমার সঙ্গে কারও ঝগড়া হয় না, আমি ঝগড়া মিটমাট করি। সবাই আমার কথা শোনে। বয়স কম হলেও ঝগড়া মিটমাট করার সময়ে বন্ধুরা আমাকে গুরুত্ব দেয়।

মারিয়া শান্ত। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে
প্রশ্ন

চার বছরের ক্যারিয়ারে মিডিয়া থেকে সবচেয়ে বড় শিক্ষা কী?

মারিয়া শান্ত: অভিনয় শুরুর পর দুটি শিক্ষা আমি পেয়েছি। প্রথমত, চুপ থাকা। আগে আমি সোজাসাপটা কথা বলতাম। কেউ কিছু বললে তৎক্ষণাৎ রেগে যেতাম। কেউ কিছু বললেই মন্তব্য করে ফেলতাম। এখন ভাবনাচিন্তা করে উত্তর দিই। দ্বিতীয়ত, আমি সবার কাছ থেকে অভিনয় শেখার চেষ্টা করছি। প্রতিদিন নতুন কিছু না কিছু শিখে বাড়িতে আসি। এটা আমি সব সময় চালিয়ে যেতে চাই।

প্রশ্ন

গুরুত্ব বিবেচনায় সহশিল্পীদের কখনো আলাদা করে ভাবেন?

মারিয়া শান্ত: কখনোই নয়। সব সহশিল্পীর সঙ্গে অভিনয় করে শিখতে চাই। এর কদিন আগে প্রান্তর দস্তগীর, পার্থ শেখ, সুদীপ্তসহ কয়েকজনের সঙ্গে অভিনয় করলাম। নাটকগুলো সামনে প্রচারিত হবে। সেখানে দর্শক কী বলছেন, সেটাও আমার জন্য শিক্ষণীয়।

মারিয়া শান্ত। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে