
এখনো আলোচনায় পবিত্র ঈদুল আজহার সিনেমা উৎসব। পরিবারকেন্দ্রিক গল্পের ছবিটি পছন্দ করেছেন সব বয়সী দর্শক। ‘উৎসব’ ও বর্তমান ব্যস্ততা নিয়ে মনজুরুল আলমের মুখোমুখি হলেন ছবিটির পরিচালক তানিম নূর
‘উৎসব’ নিয়ে আপনার জার্নির গল্পটি শুনতে চাই।
তানিম নূর : গত বছরের ফেব্রুয়ারি–মার্চ মাসে আমাদের জার্নি শুরু। তখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিই, ‘ক্রিসমাস ক্যারল’ অবলম্বনে সিনেমা বানাব। আমার দুই চিত্রনাট্যকার আয়মান আসিব স্বাধীন ও সামিউল ভূঁইয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের পটভূমিতে গল্পটি কীভাবে হতে পারে, সেটা নিয়ে কথা বলি। একটা পটভূমি দাঁড় করিয়ে শুরু হয় চিত্রনাট্য লেখা। সেপ্টেম্বরে শেষ হয় লেখা। তখন ভাবি, আমরা গল্পটি শুটিং করে রোজার ঈদে মুক্তি দেব। কিন্তু প্রযোজক না পাওয়ার কারণে দেরি হয়ে যায়। সব মিলিয়ে আমরা কোরবানির ঈদে আসার পরিকল্পনা করি।
এ সময়ে এমন একটি গল্প ভাবার আর কোনো বিশেষ কারণ ছিল?
তানিম নূর : জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর সবকিছু মিলিয়ে মানুষ অস্থিরতার মধ্যে ছিলেন। আমার মনে হয়েছে, এ রকম একটা সময়ে মানুষকে একটু হলেও ফিল গুড টাইপের কিছু দেওয়া দরকার। যে সিনেমাটি দর্শক পরিবার নিয়ে একসঙ্গে দেখবে, হাসবে, বিনোদিত হবে। কমিউনিটির সবাই একসঙ্গে উপভোগ করবে। আমাদের ভুলত্রুটি থাকবে কিন্তু দিন শেষে আমাদের একসঙ্গে থাকতে হবে। একসঙ্গে থাকা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। এই তাড়না থেকেই সিনেমাটার নির্মাণ। যে কারণে অন্য একটি সিনেমার কাজ বন্ধ রেখে এ সিনেমার শুটিং করেছি।
বর্তমানে সিনেমায় অ্যাকশননির্ভর ট্রেন্ডি গল্প চলছে। এর বাইরে গল্প করতে গেলে লগ্নিসহ নানা প্রতিকূল অবস্থা তৈরি হয়।
তানিম নূর : লগ্নি নিয়ে আমাদেরও বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। আমরা নিজেরাই মিলেমিশে প্রযোজনা করেছি। বাজেট কিছুটা কম ছিল। মূল চ্যালেঞ্জ ছিল ২০ দিনে শুটিং করা। এর বাইরে এলে শুটিং করার বাজেট আমাদের অ্যালাউ করছিল না। এ জন্য শিল্পী–কলাকুশলী সবাই আমাদের সহায়তা করেছেন। তবে বাজেটটা ভালো থাকলে, আরও চার–পাঁচ দিন শুটিং করার বাজেট পেলে কাজটা আরও ভালো হতো। তাহলে হয়তো আমি আরেকটু সুযোগ পেতাম।
বিশেষ কোনো দৃশ্যের শুটিং কি আপনাকে ইমোশনাল করেছিল?
তানিম নূর : জাহিদ ভাই আমাকে বারবার ইমোশনাল করেছেন। জাহিদ ভাইয়ের সঙ্গে তাঁর মেয়ের চরিত্রে সুনেরাহর সঙ্গে একটি দৃশ্য ছিল, সেটির কথা বলতে চাই। দৃশ্যটি নিয়ে আমাদের সবার আলাদা প্রস্তুতি ছিল। জাহিদ ভাই, সুনেরাহ আলাদা প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিলেন। রিহার্সাল করেছিলাম। এটা ছিল সিনেমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি দৃশ্য। সেখানে একটি ডায়ালগ ছিল, ‘মা, আমি যদি জমিদার হতাম, আমার সবকিছু তোমাকে দিয়ে দিতাম।’ শুটিংয়ের বহু আগে থেকে জাহিদ ভাইকে বলেছি, এটা আমাদের সিনেমার গুরুত্বপূর্ণ একটি সংলাপ ও মুহূর্ত। জাহিদ ভাই বেশ আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। পরে শুটিংয়ের সময় আমার এতটা ভালো লেগেছিল যে আমি নিজেই দৃশ্যের সঙ্গে অ্যাটাচড হয়ে গিয়েছিলাম। আমি শতবার চিত্রনাট্য পড়েছি, তারপরও শুটিংয়ের সময় দৃশ্যটি আমাকে ইমোশনাল করে দেয়।
‘পরিবার ছাড়া দেখা নিষেধ’—এ আইডিয়া কীভাবে এল?
তানিম নূর : নব্বইয়ের দশকে আমরা পরিবারের সবাই একসঙ্গে হুমায়ূন আহমেদের নাটক দেখতাম, একসঙ্গে ঈদের নাটক দেখতাম। শিশু–কিশোর থেকে ৮০ বছরের বৃদ্ধও একই কনটেন্ট দেখতেন, বিনোদিত হতেন। এটা দারুণ একটা সময় ছিল। এখন আমরা একসঙ্গে কিছু দেখি না। সবাই আলাদা। অনুভূতিগুলোও দিন দিন বদলে যাচ্ছে। তখন ‘পরিবার ছাড়া দেখা নিষেধ’—এই আইডিয়া মাথায় আসে। একসঙ্গে কোনো কিছু দেখার আনন্দ বহুগুণ বেশি। আমরা মজা করেই ট্যাগলাইনটা ব্যবহার করেছিলাম। সত্যিই পরিবার নিয়ে দর্শক হুমড়ি খেয়ে দেখবেন, সেটি ভাবিনি। দর্শকের কাছে কৃতজ্ঞতা।
আপনার সিনেমায় প্রথম চঞ্চল চৌধুরী, পরে জয়া আহসান ও অপি করিম আসেন—এভাবে গল্প বলতে গিয়ে ঝুঁকি নিচ্ছেন, এমনটা মনে হয়েছিল?
তানিম নূর : একটি দোটানা তৈরি হয়েছিল। দর্শকদের মধ্যে এটা ক্লিক করবে কি করবে না, ভাবছিলাম। তবে আশঙ্কা থাকলেও আস্থার জায়গা ছিল। নানা প্ল্যাটফর্মে বহু রকম কাজ হচ্ছে। দর্শকদের রুচি, ভাবনা ও দেখার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। তাঁরা নতুন ধরনের ন্যারেটিভ গ্রহণ করতে প্রস্তুত আছেন; কিন্তু আমরা দিতে পারছি না। সেই জায়গা থেকেই ঝুঁকি নেওয়া। সিনেমা হলে দর্শকদের কাছে না যাওয়া পর্যন্ত কোনো পরিচালকই বলতে পারবে না সিনেমাটি হিট হবে, নাকি ফ্লপ হবে। সিনেমা হয়ে ওঠাটা জরুরি। যে কারণে দর্শক আমাদের গ্রহণ করেছেন।
৩৯ দিন আগে সবচেয়ে কম ৫টি শো দিয়ে যাত্রা শুরু, বর্তমানে সিনেমাটির সর্বাধিক শো হচ্ছে। শুরুতে কী মনে হয়েছিল?
তানিম নূর : প্রথম দিকে ভাবিনি দর্শক এতটা পছন্দ করবেন; কিন্তু দিন যতই যেতে থাকে, ততই দেখি, যাঁরাই সিনেমাটি দেখছেন, তাঁরাই সুন্দর সুন্দর লেখা লিখছেন। প্রথম সপ্তাহে বুঝে উঠতে পারিনি। দর্শকদের মুখে মুখে সিনেমার প্রচারণা বাড়তে থাকে। দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে পুরোপুরি বুঝতে পারি, সিনেমাটি দর্শকের ভালো লেগে গেছে। এটা ছিল অন্য রকম অনুভূতি।
শুনলাম পরবর্তী সিনেমার কাজ শুরু করতে যাচ্ছেন। সেটিও কি পরিবার ছাড়া দেখা নিষেধ?
তানিম নূর : আগামী রোজার ঈদে মুক্তি দেওয়ার লক্ষ্যে আরেকটি সিনেমার কাজ নিয়ে এগিয়ে চলেছি। প্রাথমিক কার্যকলাপ চলছে। এটাও পরিবার নিয়ে দেখার মতো গল্প। পরিবারকেন্দ্রিক গল্প, ফ্যামিলি ও কমেডি ড্রামা। তবে তার মানে এই নয়, আমি সামাজিক জনরার সিনেমাই বানাব। আমি নিজেও অ্যাকশন, ক্রাইম—নানান জনরার গল্প পছন্দ করি। সামনে তেমন সিনেমাও পাবেন।