সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁদের খুনসুটি, রসিকতা আর স্বাভাবিক হাসিখুশির মুহূর্তগুলো অনেকের কাছেই ‘আদর্শ’ দাম্পত্যের উদাহরণ হয়ে উঠেছে। ২০২৪ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া অভিনেত্রী সোনাক্ষী সিনহা ও জহির ইকবালকে এখন হিন্দি চলচ্চিত্র অঙ্গনের অন্যতম সুখী তারকা দম্পতি হিসেবেই দেখা হয়। তবে এই সুখের পথটা মোটেও সরল ছিল না। সম্প্রতি সোনাক্ষী নিজেই জানিয়েছেন, বিয়ের আগে তাঁদের সাত বছরের দীর্ঘ প্রেমজীবনে এমন এক সময় এসেছিল, যখন সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য কাপল থেরাপির সাহায্য নিতে হয়েছিল।
সম্প্রতি অভিনেত্রী যোগ দেন সোহা আলী খান–এর একটি পডকাস্টে। সেখানে নিজের ব্যক্তিজীবনের নানা দিক নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সোনাক্ষী জানান, তাঁর আর জহিরের প্রেম যখন তিন বছরে পা রেখেছিল, তখন সম্পর্কে বড় ধরনের টানাপোড়েন শুরু হয়। সোনাক্ষীর কথায়, ‘তখন এত ঝামেলা হচ্ছিল যে মনে হতো শুধু চুলোচুলি করাটাই বাকি। আমরা একে অপরকে বুঝতেই পারছিলাম না। কোনো কথাই যেন কাজে আসছিল না। সম্পর্কটা কোথায় যাচ্ছে, সেটাই বুঝে উঠতে পারছিলাম না।’
এই সংকটময় পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতেই তাঁরা পেশাদার সহায়তা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কাপল থেরাপির অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে সোনাক্ষী বলেন, ‘আমি বিষয়টা খুব খোলামনেই নিয়েছিলাম। এখন মনে হয়, সেটাই ছিল সবচেয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত। মাত্র দুইটি সেশনেই আমরা আবার নিজের জায়গায় ফিরে আসি। তখন বুঝতে পারি, আমার সামনে থাকা মানুষটা আসলে কী চাইছে, কী বলতে চাইছে।’
বিয়ের আগে সাত বছর ধরে সম্পর্কে ছিলেন সোনাক্ষী ও জহির। এই দীর্ঘ সময়ে বন্ধুত্ব, প্রেম ও দ্বন্দ্ব—সবকিছুর মধ্য দিয়েই যেতে হয়েছে তাঁদের। সেই পথচলার পর ২০২৪ সালের জুন মাসে মুম্বাইয়ে নিজেদের ফ্ল্যাটে আইনি বিয়ে সম্পন্ন করেন তাঁরা। এরপর একই দিন বিকেলে ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয় রিসেপশন অনুষ্ঠান। জহির ইকবাল মুসলিম হওয়ায় এবং এটি আন্তঃধর্মীয় বিয়ে হওয়ায় তাঁরা বিশেষ বিবাহ আইন অনুযায়ী বিয়ে নিবন্ধন করেন।
এই বিয়েকে ঘিরে আলোচনা ও সমালোচনা কম হয়নি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা ধরনের সমালোচনা ও ট্রলের মুখে পড়তে হয় সোনাক্ষীকে। এমনকি গুঞ্জন ওঠে, পরিবারের একাংশ নাকি শুরু থেকেই এই বিয়েতে সহমত ছিলেন না। বিশেষ করে তাঁর দুই ভাই—লব ও কুশ—বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না বলেও আলোচনা ছড়ায়। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এসব বিতর্ক পেছনে ফেলে এখন দেড় বছরের বেশি সময় ধরে নিজেদের দাম্পত্য জীবন নির্বিঘ্নেই কাটাচ্ছেন সোনাক্ষী ও জহির।
সোনাক্ষী–জহিরের প্রেমকাহিনি
সোনাক্ষী ও জহিরের পরিচয়ের সূত্রপাত প্রায় এক দশক আগে। ২০১৩ সালে অভিনেতা সালমান খানের আয়োজিত একটি পার্টিতে প্রথম তাঁদের দেখা হয়। সেখান থেকেই শুরু বন্ধুত্ব, যা সময়ের সঙ্গে ধীরে ধীরে প্রেমের সম্পর্কে রূপ নেয়। ব্যক্তিজীবন বরাবরই আড়ালে রাখতে পছন্দ করেছেন সোনাক্ষী। দীর্ঘ সময় তাঁরা প্রকাশ্যে তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে খুব বেশি কথা বলেননি; তবে কাছের মহলে এই সম্পর্কের কথা ছিল জানা।
‘স্ত্রী’ নয়, এখনো ‘বান্ধবী’
বিয়ের পর জীবনে কী পরিবর্তন এসেছে—এই প্রশ্নে সোনাক্ষী বেশ স্পষ্ট। ২০২৪ সালের ২৩ জুন জহির ইকবালকে বিয়ে করার পরও নিজেকে তিনি এখনো ‘স্ত্রী’ নয়, ‘বান্ধবী’ হিসেবেই ভাবতে ভালোবাসেন। এ নিয়ে সোনাক্ষীর ভাষ্য, ‘বিয়ে আমার জীবন খুব একটা বদলায়নি। এখনো নিজেকে জহিরের বান্ধবী ভাবতেই ভালো লাগে। একটাই পার্থক্য—এখন মা–বাবার বাড়ির বদলে ওর সঙ্গে থাকি।’
সোনাক্ষী আরও বলেন, ‘বিয়ের আগে যেমন কাজ করতাম, এখনো তেমনই করছি। বরং জীবনটা আরও সুন্দর হয়ে উঠেছে। এমন একজন সঙ্গী পেয়েছি, যার সঙ্গে জীবনের খুঁটিনাটি বিষয় ভাগ করে নিতে পারি। জহির আমার সবচেয়ে বড় সমর্থন আর শক্তি। ছোট ছোট বিষয়েও ওর পরামর্শ নিই—যদিও কখনো কখনো মনে হয়, একটু স্বাধীনচেতা হওয়াও দরকার!’
কাপল থেরাপির অভিজ্ঞতা থেকে শুরু করে আন্তঃধর্মীয় বিয়ের চাপ—সবকিছুর মধ্য দিয়ে সোনাক্ষী ও জহিরের সম্পর্ক যেন একটি বাস্তব বার্তাই দিচ্ছে। সম্পর্ক নিখুঁত না হলেও বোঝাপড়া, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং সময়মতো সঠিক সিদ্ধান্ত সম্পর্ককে নতুন শক্তি দিতে পারে—এই কথাটিই নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে আবারও সামনে আনলেন সোনাক্ষী সিনহা।