
নতুন সিনেমা না হয় বিচারকের দায়িত্ব; দুনিয়ার নানা প্রান্তের উৎসবে দেখা যায় কেট ব্ল্যানচেটকে। ৫৫ বছর বয়সী এই অভিনেত্রী এখনো হলিউডে দাপটের সঙ্গে কাজ করছেন। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি বেশ কয়েকবার অভিনয় থেকে দূরে থাকার ইঙ্গিত দিয়েছেন। সম্প্রতি রেডিও টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘আমি যখন আমার পরিবারের দিকে তাকাই, তখন শুধু এটাই মনে হয় (যে অভিনয় ছেড়ে দিতে হবে)। আমি অভিনয় থেকে দূরে থাকার ব্যাপারে বেশ সিরিয়াস।’ তবে খ্যাতির শীর্ষে থেকেও অভিনয় ছাড়া নিয়ে কথা বলা তিনিই প্রথম তারকা নন। এর আগেই অনেক অভিনয়শিল্পী বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন, কেউ অভিনয় ছেড়েছেন। কেউ আবার দীর্ঘ বিরতির পর ফিরেছেন। বিভিন্ন সময়ে হলিউডকে বিদায় বলেছেন, এমন পাঁচ অভিনয়শিল্পীর গল্প জেনে নেওয়া যাক।
গ্রেটা গার্বো
১৯৩২ সালে মুক্তি পাওয়া ‘গ্র্যান্ড হোটেল’ সিনেমার একটি বিখ্যাত লাইন, ‘আমি একা থাকতে চাই।’ নিজের বলা এই লাইনের মতোই কিংবদন্তি সুইডিশ অভিনেত্রী গ্রেটা গার্বো সিনেমা থেকে একা থেকেছেন। ১৯৪১ সালে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে সিনেমা থেকে সাময়িক বিরতি নেন এই অভিনেত্রী। পরে তিনি আর ফেরেননি অভিনয়ে। ‘দ্য ক্যামিল’, ‘কুইন ক্রিস্টিনা’ সিনেমার অভিনেত্রী হলিউডের রাজনীতিতে নিজেকে জড়াননি। তাঁর সাক্ষাৎকারও পাওয়া যায়নি, এমনকি সিনেমার প্রিমিয়ার কিংবা জনসাধারণের উপস্থিতি এড়িয়ে চলতেন সচেতনভাবে। হলিউড থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার পর নিউইয়র্কে চলে যান গার্বো। সেখানেই ১৯৯০ সালে ৮৪ বছর বয়সে মৃত্যুর আগপর্যন্ত বসবাস করেন।
শন কনারি
তিনি রুপালি পর্দার প্রথম জেমস বন্ড। ১৯৬০-এর দশকে ইয়ান ফ্লেমিংয়ের রোমাঞ্চ উপন্যাসের এই কাল্পনিক ব্রিটিশ স্পাইক নিয়ে নির্মিত মোট সাতটি থ্রিলার সিনেমায় তিনি অভিনয় করেছিলেন। ২০০০ সালে সিনেমায় অবদানের জন্য নাইটহুড উপাধি লাভ করেন কনারি।
২০০৩ সালে ‘দ্য লিগ অব এক্সট্রাঅর্ডিনারি জেন্টলম্যান’ সিনেমায় শেষবারের মতো পর্দায় কনারিকে দেখা গেছে। এর দুই বছর পর ২০০৫ সালে কনারি বলেন, ‘যারা সিনেমা বানাতে জানে এবং যারা সিনেমা তৈরি করে, তাদের মধ্যে ক্রমে ব্যবধান বাড়ছে।’ অভিনয় ছাড়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘বোকাদের ওপর আমি খুব বিরক্ত।’
রিক মোরানিস
‘গোস্টবাস্টারস’, ‘লিটল শপ অব হররস’, ‘স্পেসবলস’, ‘হানি, আই শ্রাঙ্ক দ্য কিডস’-এর মতো সিনেমা তাঁর ঝুলিতে। তবে সব এলোমেলা করে দেয় স্ত্রীর মৃত্যু। ১৯৯১ সালে স্ত্রী ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার পর কানাডিয়ান এই অভিনেতা সন্তানদের দেখভালের দিকেই মন দেন। পরে ১৯৯৭ সালে ‘হানি, উই শ্রাঙ্ক আওয়ারসেলভস’ সিকুয়েলে শেষবারের মতো পর্দায় হাজির হন।
অভিনয় থেকে বিরতি নেওয়া সম্পর্কে রিক ২০০৫ সালে ইউএসএ টুডেকে বলেছিলেন, ‘আমি একজন একক অভিভাবক। আমি বুঝতে পেরেছি যে বাচ্চা লালন-পালন আর সিনেমার ভ্রমণ একসঙ্গে চলতে পারে না। তাই আমি একটু বিরতি নিলাম। কিন্তু এটাই দীর্ঘ হয়ে গেল। আমি বিস্ময়ের সঙ্গে খেয়াল করলাম, সিনেমাকে আমি একটুও মিস করিনি।’
জিন হ্যাকম্যান
হ্যাকম্যানকে গত শতকের সেরা অভিনেতাদের একজন মনে করা হয়। তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র ছিল ‘লিলিথ’। ১৯৬৭ সালে আর্থার পেনের ‘বনি অ্যান ক্লাইড’ দিয়ে পার্শ্বচরিত্রে প্রথমবার অস্কার মনোনয়ন পান। ১৯৭০ সালে ‘আই নেভার স্যাং ফর মাই ফাদার’ চলচ্চিত্রের জন্য পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে দ্বিতীয়বার অস্কার মনোনয়ন পান।
১৯৭১ সালে মুক্তি পাওয়া ‘দ্য ফ্রেঞ্চ কানেকশন’-এ জিমি পপাই ডয়েল চরিত্রে অভিনয় করে সেরা অভিনেতা হিসেবে অস্কার পান। তিনি ১৯৯২ সালে ক্লিন্ট ইস্টউডের ‘আনফরগিভেন’ চলচ্চিত্রে শেরিফ লিটল বিল ড্যাগেট চরিত্রে অভিনয় করে পার্শ্বচরিত্রে সেরা অভিনেতা হিসেবে আবার অস্কার পান।
২০০৪ সালে ‘ওয়েলকাম টু মুজপোর্ট’ সিনেমায় মার্কিন প্রেসিডেন্টের চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। এটিই তাঁর করা শেষ চরিত্র। এরপর লেখালেখিতে মন দেন হ্যাকম্যান। ২০১১ সালে জিকিউ সাময়িকীতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হ্যাকম্যান নিশ্চিত করেন, তিনি আর কখনোই অবসর ভেঙে ফিরবেন না। যদিও ২০১৬ ও ২০১৭ সালে দুটি তথ্যচিত্রের প্রয়োজনে স্বল্প সময়ের জন্য ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি।
ব্রিজেট ফন্ডা
খ্যাতির শীর্ষে থাকাকালে অভিনয়কে বিদায় বলার মতো সাহস দেখিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের এই অভিনেত্রী। আশি ও নব্বইয়ের দশকের হিট সব সিনেমা, যেমন ‘স্ক্যান্ডাল’, ‘সিঙ্গেলস,’ ‘সিঙ্গেল হোয়াইট ফিমেল’, ‘দ্য গডফাদার: পার্ট-৩’-এর মতো সিনেমায় অভিনয় করেছেন।
২০০১ সালে ‘দ্য হোল শেবাং’-এ তাঁকে শেষবারের মতো পর্দায় হাজির হতে দেখা যায়। তিনি কখনো সরাসরি অবসরের কথা বলেননি।
কিন্তু আর ফিরেও আসেননি। তিনি অভিনয়ে ফিরবেন কি না, ২০২৩ সালে যখন একজন প্রতিবেদক ফন্ডার কাছে জানতে চান, তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় না। একজন সাধারণ নাগরিক হয়ে বাঁচাটা আমার কাছে যথেষ্ট।’
তথ্যসূত্র: বিবিসি