ভিন্স জ্যাম্পেলা। এএফপি ফাইল ছবি
ভিন্স জ্যাম্পেলা। এএফপি ফাইল ছবি

ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা, ‘কল অব ডিউটি’–এর সহনির্মাতার মৃত্যু

ভিডিও গেমের দুনিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী নাম, জনপ্রিয় গেম সিরিজ ‘কল অব ডিউটি’–এর সহনির্মাতা ভিন্স জ্যাম্পেলা সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৫ বছর। গতকাল সোমবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে গেমিং জায়ান্ট ইলেকট্রনিক আর্টস (ইএ)। খবর এএফপির

স্থানীয় সম্প্রচারমাধ্যম এনবিসি৪–এর প্রতিবেদনে বলা হয়, গত রোববার লস অ্যাঞ্জেলেসের উত্তরে একটি মনোরম পাহাড়ি সড়কে নিজের ফেরারি গাড়ি চালানোর সময় দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান জ্যাম্পেলা।

ক্যালিফোর্নিয়া হাইওয়ে প্যাট্রোল (সিএইচপি) এক বিবৃতিতে জানায়, ‘অজ্ঞাত কারণে গাড়িটি রাস্তা থেকে ছিটকে পড়ে কংক্রিটের ব্যারিয়ারে ধাক্কা খায় এবং পুরোপুরি আগুনে পুড়ে যায়।’ তবে দুর্ঘটনায় নিহত দুই ব্যক্তির পরিচয় বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়নি।

সিএইচপি আরও জানায়, গাড়ির চালক এবং একজন যাত্রী—যিনি দুর্ঘটনার সময় গাড়ি থেকে ছিটকে পড়েছিলেন—উভয়ই গুরুতর আঘাতে মারা যান।

দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা পাহাড়ি সড়কে আগুনে ঘেরা চেরি–লাল রঙের দুমড়েমুচড়ে যাওয়া ফেরারির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন। দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ এখনো তদন্তাধীন।

ভিন্স জ্যাম্পেলার স্টুডিওগুলো বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া কিছু ভিডিও গেম তৈরি করেছে। তাঁকে ‘প্রথম–ব্যক্তি’ (ফার্স্ট পারসন) সামরিক শুটার ঘরানার গেমের একজন উদ্ভাবক হিসেবে বিবেচনা করা হতো।

চলতি বছর ভিন্স জ্যাম্পেলার তৈরি ‘ব্যাটলফিল্ড ৬’ গেমটি ফ্র্যাঞ্চাইজির ইতিহাসে নতুন বিক্রির রেকর্ড গড়লে তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘দীর্ঘদিনের সফল ক্যারিয়ার থাকা সত্ত্বেও আমরা এমন মুহূর্তগুলো কখনোই হালকাভাবে নিই না।’
গত দুই দশকে বিভিন্ন সংস্করণে ‘ব্যাটলফিল্ড’ সিরিজের গেম খেলেছেন ১০ কোটির বেশি গেমার। তবে এই সংখ্যাও সর্বোচ্চ নয়। আজও ‘কল অব ডিউটি’ সিরিজের মাসিক সক্রিয় গেমারের সংখ্যা ১০ কোটির বেশি।

২০১৬ সালে গেমিং সাইট আইজিএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জ্যাম্পেলা বলেছিলেন, ‘আপনার মনে স্বপ্ন থাকে, গেমটি জনপ্রিয় হবে। কিন্তু এমন সাফল্যের জন্য আপনি কখনোই পুরোপুরি প্রস্তুত থাকেন না।’

গভীর ও সুদূরপ্রসারী প্রভাব
ভিন্স জ্যাম্পেলা সবচেয়ে বেশি পরিচিত ‘কল অব ডিউটি’ ফ্র্যাঞ্চাইজির সহনির্মাতা এবং রেসপন এন্টারটেইনমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে। এই স্টুডিও থেকেই এসেছে ‘টাইটানফল’, ‘এপেক্স লেজেন্ডস’ ও ‘স্টার ওয়ার্স জেডাই’ সিরিজের গেম।

১৯৯০–এর দশকে শুটার গেমের ডিজাইনার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন জ্যাম্পেলা। ২০০২ সালে তিনি ইনফিনিটি ওয়ার্ড প্রতিষ্ঠা করেন এবং ২০০৩ সালে ‘কল অব ডিউটি’ বাজারে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। পরে স্টুডিওটি অধিগ্রহণ করে অ্যাকটিভিশন।

তবে বিতর্কিত পরিস্থিতিতে ভিন্স জ্যাম্পেলা অ্যাকটিভিশন ছাড়েন এবং ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন রেসপন এন্টারটেইনমেন্ট। ২০১৭ সালে এই স্টুডিওটি কিনে নেয় ইলেকট্রনিক আর্টস।

ইএতে কাজ করার সময় জ্যাম্পেলা ‘ব্যাটলফিল্ড’ ফ্র্যাঞ্চাইজিকে নতুন করে প্রাণ দেওয়ার দায়িত্ব নেন, যা তাঁকে আধুনিক প্রথম–ব্যক্তি শুটার গেমের ইতিহাসে অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।

ইলেকট্রনিক আর্টস এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘এটি অকল্পনীয় এক ক্ষতি। ভিন্সের পরিবার, তাঁর প্রিয়জন এবং যাঁরা তাঁর কাজের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়েছেন—সবার প্রতি আমাদের হৃদয়ের গভীর সমবেদনা।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘ভিডিও গেম শিল্পে ভিন্সের প্রভাব ছিল গভীর ও সুদূরপ্রসারী। তাঁর কাজ আধুনিক ইন্টারঅ্যাকটিভ বিনোদনের রূপ গঠনে সহায়তা করেছে।’
‘ব্যাটলফিল্ড’–এর এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে প্রকাশিত রেসপনের বিবৃতিতে জ্যাম্পেলার প্রশংসা করে বলা হয়, ‘প্রতিদিন তিনি যেভাবে কাজ করতেন, দলগুলোর ওপর আস্থা রাখতেন, সাহসী ভাবনাকে উৎসাহ দিতেন এবং “ব্যাটলফিল্ড” ও এর নির্মাতাদের ওপর বিশ্বাস রাখতেন—তার জন্যই আমরা তাঁকে শ্রদ্ধা জানাই।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘স্টুডিওগুলোর পেছনে থাকা মানুষ আর খেলোয়াড়দের জন্য যা সঠিক বলে তিনি বিশ্বাস করতেন, সেটার পক্ষে তিনি সব সময় দাঁড়িয়েছেন। কারণ, বিষয়টি তাঁর কাছে সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।’

ওয়াশিংটন পোস্টের ভিডিও গেম–বিষয়ক প্রতিবেদক জিন পার্ক এনবিসি৪–কে বলেন, ‘এটি ছিল গল্প বলার এক সাহসী ও প্রথাভাঙা ধরন—একটি সময়ের প্রতিফলন, যা ছিল রাজনৈতিক, সহিংস এবং গভীরভাবে প্রভাব ফেলেছিল।’

জিন পার্ক আরও বলেন, ‘গল্প তৈরি করার অসাধারণ ক্ষমতা তাঁর ছিল। তা সে ভয়, আতঙ্ক কিংবা বীরত্বই হোক না কেন। তিনি যে ভিডিও গেমগুলো বানিয়েছেন, সেগুলোর নকশার মধ্য দিয়ে এই অনুভূতিগুলো তিনি অসাধারণভাবে তুলে ধরতে পেরেছিলেন।’