
এইচবিওর জনপ্রিয় সিরিজ ‘হাউস অব দ্য ড্রাগন’-এ ‘অ্যালিসেন্ট হাইটাওয়া’র চরিত্রে অভিনয় করা ব্রিটিশ অভিনেত্রী অলিভিয়া কুক পর্দায় অন্তরঙ্গ দৃশ্য নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁর ভাষায়, নারীরা যখন ঘনিষ্ঠ দৃশ্যের সময় নিজের সীমারেখা নির্ধারণ করেন, তখনো তাঁদের ‘ঝামেলাবাজ’ আখ্যা দেওয়া হয়। সম্প্রতি অ্যামাজন প্রাইমে মুক্তি পেয়েছে অলিভিয়া কুক অভিনীত সিরিজ ‘দ্য গার্লফ্রেন্ড’। সিরিজটির প্রচার উপলক্ষে ব্রিটিশ দৈনিক দ্য আই পেপারে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি।
এই সাক্ষাৎকারে কুক বলেন, ‘অনেক অভিনেত্রী কেবল অস্বস্তির কথা বললেই তাঁদের ‘বদমেজাজি’ ট্যাগ দেওয়া হয়। তবে তিনি স্বীকার করেন যে ইন্ডাস্ট্রি এখন অনেকটাই বদলেছে। কারণ, ঘনিষ্ঠ দৃশ্যের শুটিংয়ে এখন সাধারণত ইনটিমেসি কো-অর্ডিনেটর থাকেন।
কুকের ভাষায়, এটা অবিশ্বাস্য যে আগে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের কোনো সমন্বয়ক ছাড়াই এমন দৃশ্য সামলাতে হতো। এখন ভালো কো-অর্ডিনেটররা নারীদের হয়ে কথা বলেন, বিশেষ করে নতুনরা যখন নিজেদের অস্বস্তি বোঝানোর ভাষাই খুঁজে পান না।
একই সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী আরও বলেন, মানুষের আবেগ-অনুভূতি ফুটিয়ে তুলতে অন্তরঙ্গতা বা ভালোবাসার প্রকাশ জরুরি। কিন্তু সেটা এমনভাবে করা সম্ভব, যাতে অভিনয় শেষে মনে না হয় যে নিজের ভেতরের একটুকরো অংশ কেটে নিয়ে গেল।
নতুন সিরিজ ‘দ্য গার্লফ্রেন্ড’
ওলিভিয়া কুককে এবার দেখা গেছে রবিন রাইট পরিচালিত ও অভিনীত অ্যামাজন প্রাইম ভিডিও সিরিজ ‘দ্য গার্লফ্রেন্ড’-এ। ১০ সেপ্টেম্বর মুক্তি পাওয়া এই সিরিজে ‘লরা’ (রবিন রাইট) নামের এক নারীর জীবনে প্রবেশ করে তার ছেলের প্রেমিকা ‘চেরি’ (কুক)। গল্পের কেন্দ্রে মা–ছেলের টানাপোড়েন আর নতুন এই সম্পর্কের অস্থিরতা।
কুক জানান, চেরির চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে তিনি নিজের শুরুর দিকের অনিশ্চয়তার মিল খুঁজে পেয়েছেন। এক পুলিশ কর্মকর্তা ও এক সেলসওম্যানের মেয়ে কুক ছোটবেলা থেকেই ছিলেন স্বপ্নবিলাসী আর বইপোকা। নিয়মিত পড়াশোনা শেষ না করে কৈশোরেই পেশাদার অভিনয়ে ঢুকে পড়েন তিনি।
কুকের প্রথম বড় সুযোগ আসে ২০১২ সালে বিবিসির থ্রিলার ‘ব্ল্যাকআউট’-এ, যেখানে তিনি ক্রিস্টোফার একলেস্টনের সঙ্গে অভিনয় করেন। সেই অভিজ্ঞতাকে তিনি নিজের জীবনে টার্নিং পয়েন্ট বলে মনে করেন। অল্প বয়সে কানাডায় গিয়ে বেটস মোটেল শুটিংয়ের সময় তিনি ছিলেন ভীষণ ঘরকাতুরে। কখনো টুনা-পাস্তা খেয়ে টিকে ছিলেন, আবার কখনো মায়ের ক্রেডিট কার্ড থেকে ধার নিয়ে ভাড়া মেটাতেন।
হলিউড থেকে নতুন প্রজন্মের লড়াই
এরপর এক দশকে কুক অভিনয় করেছেন স্টিভেন স্পিলবার্গের ‘রেডি প্লেয়ার ওয়ান’, অস্কার মনোনীত ‘সাউন্ড অব মেটাল’, আবার ব্রিটিশ ক্রাইম-কমেডি ‘পিক্সি’তে। সাফল্যের মধ্যেও তিনি নিজেকে ভাসমান বেলুনের মতো মনে করতেন। একটা কাজ শেষ হলে যেন সবকিছু ছেড়ে চলে যাচ্ছেন, আবার নতুন কাজে বাঁধা পড়ছেন।
লন্ডনে ফিরে আসার পর গত পাঁচ বছরে কুক কিছুটা স্থির হয়েছেন। নতুন সিরিজ নিয়ে তিনি বলেন, রবিন রাইট শুধু দুর্দান্ত অভিনেত্রীই নন, অসাধারণ পরিচালকও। তাঁর হাতে সিরিজের ঘনিষ্ঠ দৃশ্যগুলো ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। তিনি দেখিয়েছেন, অন্তরঙ্গতাকে অশ্লীল না করেও শক্তিশালীভাবে পর্দায় ফুটিয়ে তোলা যায়।
নারীর অভিজ্ঞতা, নারীর কণ্ঠ
কুক জোর দিয়ে বলেন, যৌনদৃশ্য অনেক সময় অভিনেতাদের ভীষণ অসহায় করে তোলে। নতুনদের জন্য তো আরও কঠিন। বিশেষত নারীরা যখন নিজের অস্বস্তির কথা বলেন, তখনো তাঁদের ওপরই চাপিয়ে দেওয়া হয় নেতিবাচক লেবেল। তাই তিনি মনে করেন, ইনটিমেসি কো-অর্ডিনেটর শুধু প্রযুক্তিগত নয়, বরং নারীর কণ্ঠস্বর হিসেবেও কাজ করেন।