ব্রুক শিল্ডস তখন আর এখন। কোলাজ
ব্রুক শিল্ডস তখন আর এখন। কোলাজ

‘ব্লু ল্যাগুন’ নায়িকা ব্রুক শিল্ডসের সেকাল–একাল

ব্রুক শিল্ডসের নাম শুনলেই প্রথম চোখের সামনে ভেসে ওঠে ১৯৮০ সালের আলোচিত ছবি ‘ব্লু ল্যাগুন’—যেখানে তাঁর উপস্থিতি সাড়া ফেলে হলিউড এমনকি আমাদের বাংলাদেশেও। তবে ব্রুকের জীবন শুধু গ্ল্যামার আর রূপের গল্প নয়; বরং সে পথজুড়ে লুকিয়ে আছে নানা সংগ্রাম, বেদনা ও সাহসের অনবদ্য ছাপ। ‘প্রিটি বেবি’ ছবির সেই শিশু মডেল থেকে বিতর্কিত অভিনেত্রী, প্রতিবাদী নারী হিসেবে ব্রুক শিল্ডস আজও তাঁর সময়ের বাইরে এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি, যাঁর প্রতিটি অধ্যায়ই আলো-ছায়ার এক কাব্য।

ব্রুক শিল্ডসের জন্ম ১৯৬৫ সালের ৩১ মে, নিউইয়র্ক সিটিতে
মাত্র ১১ মাস বয়সে একটি বেবি পাউডারের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ক্যামেরার সামনে আসেন তিনি
আলোচনায় আসেন ১২ বছর বয়সে। ফরাসি পরিচালক লুই মালের ‘প্রিটি বেবি’ (১৯৭৮) ছবিতে যৌনপল্লির কিশোরী চরিত্রে অভিনয় করে হইচই ফেলে দেন। ছবিটি প্রশংসিত হলেও বিতর্ক পিছু ছাড়েনি
১৯৮০ সালে ‘দ্য ব্লু লেগুন’ আর ১৯৮১ সালের ‘এন্ডলেস লাভ’ তাঁকে আলোচনার শীর্ষে নিয়ে আসে
সবকিছুকে পাশ কাটিয়ে ১৯৮৩ সালে ভর্তি হন যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটিতে। স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। একেবারে ভিন্ন এক ব্রুক, যিনি ক্যারিয়ার নয়, তখন নিজের পরিচয় খুঁজছেন। এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আমি সব সময় চাইতাম মানুষ জানুক, আমি শুধু পর্দার একটি মুখ নই।’
ব্রুক শিল্ডসের ব্যক্তিজীবন কখনো রঙিন, কখনো কাঁটাভরা। বিখ্যাত টেনিস খেলোয়াড় আন্দ্রে আগাসির সঙ্গে সম্পর্ক, পরে বিচ্ছেদ—সবই ছিল আলোচনার কেন্দ্রে। ২০০১ সালে পরিচালক ক্রিস হেনচিকে বিয়ে করেন, তাঁদের দুটি কন্যাসন্তান আছে
২০০৩ সালে মা হওয়ার পর তিনি পড়ে যান প্রসব-পরবর্তী বিষণ্নতায়। সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখেন বহুল আলোচিত বই ‘ডাউন কেম দ্য রেইন’,  যেখানে তিনি ভেতরের ভাঙন অকপটে তুলে ধরেন
নব্বইয়ের দশকে ‘সাডেনলি সুজান’ সিরিজ দিয়ে আবারও আলোচনায় ফেরেন তিনি। হাস্যরসের সঙ্গে জীবনের গল্পকে মিশিয়ে নতুন এক ব্রুক উপহার দেন দর্শকদের। টানা চার বছর জনপ্রিয় এই সিটকমে অভিনয় করে দুবার গোল্ডেন গ্লোব মনোনয়ন পান
২০২৩ সালে মুক্তি পাওয়া দুই পর্বের তথ্যচিত্র ‘প্রিটি বেবি: ব্রুক শিল্ডস’ যেন তাঁর জীবনের এক সাহসী প্রতিচ্ছবি
২০২৫ সালে এসে ব্রুক এখন একজন সফল উদ্যোক্তা, লেখিকা ও নেতা। লিখেছেন তাঁর চতুর্থ স্মৃতিকথা ‘ব্রুক শিল্ডস ইজ নট অ্যালাউড টু গেট ওল্ড’। সেখানে লিখেছেন বয়স, সৌন্দর্য, সমাজের মানদণ্ড এবং নিজের শরীরকে ভালোবাসা নিয়ে
তিনি অভিনয়শিল্পীদের সংগঠন অ্যাক্টরস ইকুইটি অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছেন
বললে বাড়াবাড়ি হবে না, আজকের দিনেও তিনি প্রমাণ করেন, আসল সৌন্দর্য বয়সে নয়, আত্মবিশ্বাসে
‘প্রিটি বেবি: ব্রুক শিল্ডস’ তথ্যচিত্রে তিনি জানান, যে সময় কলেজে পড়তেন, সে সময় এক পরিচিত নির্মাতার কাছে ধর্ষণের শিকার হন। বহু বছর ধরে তিনি এই কথা গোপন রেখেছিলেন ভয়ে। ‘কেউ বিশ্বাস করবে না’ ভেবে
এ ঘটনা তাঁকে মানসিকভাবে নাড়িয়ে দেয়। থেরাপি নিতে হয়। পরে ঘটনা প্রকাশ করার জন্য দুনিয়ার নানা প্রান্ত থেকে প্রশংসা পান। অনেকেই জানান, ব্রুক তাঁদের প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছেন। পরে অভিনেত্রী ধীরে ধীরে নিজের আত্মবিশ্বাস ফিরে পান