চুল, কণ্ঠ, হাসি নিয়ে কথা শুনেও তিনি আজ সফল অভিনেত্রী, ৭৩০ কোটি টাকার মালিক

এমা স্টোন। ছবি: আইএমডিবি
এমা স্টোন। ছবি: আইএমডিবি

জনপ্রিয় মার্কিন অভিনেত্রী এমা স্টোনের আজ জন্মদিন। ১৯৮৮ সালের ৬ নভেম্বর এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনায় জন্ম নেওয়া এই অভিনেত্রী পা দিলেন ৩৭ বছরে। তিনি ‘লা লা ল্যান্ড’, ‘দ্য ফেবারিট’, ‘পুওর থিংস’সহ প্রতিটি চলচ্চিত্রেই আলাদা করে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন। প্রমাণ করেছেন, অভিনয়ই শক্তি, সৌন্দর্য নয়। অভিনয় দিয়েই বিশ্বজোড়া ভালোবাসা পাওয়া এই তারকার জীবন নানা ঘটনায় ভরা।
যেভাবে শুরু

এমা স্টোনের পুরো নাম এমিলি জিন স্টোন। ছোটবেলা থেকেই তিনি মঞ্চে অভিনয় করতে ভালোবাসতেন। তখন তাঁর বয়স ছিল ৪ বছর। মাত্র ১১ বছর বয়সে একটি থিয়েটার দলে যোগ দেন। তবে পরিবার চায়নি যে এমা অভিনয় করুক। মা–বাবাকে রাজি করাতে তিনি একবার পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন বানিয়েছিলেন। নাম দিয়েছিলেন ‘প্রজেক্ট অব হলিউড’। কী করতে চান, সেটাই নাকি তুলে ধরেছিলেন। পরে অবশ্য মঞ্চে ভালো করলে মা-বাবা আর হলিউডে অভিনয়ে বাধা দেননি। তাঁকে একসময় লস অ্যাঞ্জেলেসে পাঠিয়ে দেন। তবে পড়াশোনায় কখনোই তাঁর মনোযোগ ছিল না।

এমা স্টোন। এএফপি

হলিউডে প্রথম
মঞ্চে কাজ করলেও এমা স্টোন হলিউডে নাম লেখাতে সময় নেন। ২০০৭ সালে ‘সুপারব্যাড’ চলচ্চিত্রের ছোট একটি চরিত্র দিয়ে বড় পর্দায় নাম লেখান। তার পর থেকে সিনেমাতেই তাঁর অভিনয় করতে বেশি ভালো লাগে। সে সময় এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘অসাধারণ সবকিছুর চেয়ে এই অভিজ্ঞতা একদমই আলাদা। আমি সিনেমা করতে চাই।’ শুরু হয় এমার সিনেমার জীবন। তাঁর বড় সুযোগ আসে ‘ইজি এ’ সিনেমার মাধ্যমে। তীক্ষ্ণ রসবোধ, সংযত অভিনয়, আর চমৎকার সংলাপের উচ্চারণ তাঁকে রাতারাতি হলিউডের নতুন প্রজন্মের প্রিয় মুখে পরিণত করে।

হলিউডে চ্যালেঞ্জিং সময়
এমা স্টোন শৈশবে অনেক কাঁদতেন। চিকিৎসকদের মতে, এটা রোগ। এই কান্নার কারণে তাঁর কণ্ঠে কিছুটা পরিবর্তন আসে। এই অভিনেত্রী নিজেই এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, শুরুর দিকে তাঁর কণ্ঠ এত কর্কশ ছিল যে অনেক অডিশনে তিনি বাদ পড়তেন। এখন সেই কণ্ঠই তাঁর সিগনেচার। ভক্তদের কথা, তাঁর হাসিতে যেন জাদু আছে। এ ছাড়া হলিউডে প্রথম দিনগুলোয় তাঁকে শুনতে হয়েছিল, ‘লাল চুলে কাজ পাবে না।’ অথচ এখন লালচে চুলই তাঁর অনন্য পরিচয়ের অংশ। শুরুর দিকে নানা ঘটনা তাঁকে থামানোর চেষ্টা করলেও তিনি আটকে থাকেননি। চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করেই এগিয়েছেন। হলিউডে জায়গা করে নেওয়ার পরও তিনি নিজেকে বদলেছেন। তিনি জানতেন যে হলিউডে জায়গা করার চেয়ে ধরে রাখা বেশি কঠিন। এখনো সেই পথেই রয়েছেন এমা স্টোন।

এমা স্টোন

ক্যারিয়ারে সেরা সময়
এমা স্টোনের ক্যারিয়ারের সেরা সময় ২০১২ থেকে ২০২৪ সাল। তার পর থেকে তিনি সিনেমার সংখ্যা কমিয়ে দেন। ২০১২ সালে ‘দ্য অ্যামেজিং স্পাইডারম্যান’ সিনেমায় অভিনয় করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। পার্শ্বচরিত্রের অভিনেত্রী হিসেবে ‘বার্ডম্যান’ সিনেমা তাঁকে প্রথম অস্কারে মনোনয়ন এনে দেয়। তিনি দুইবার অস্কার জিতেছেন। সেরা অভিনেত্রীর বিভাগে প্রথম ‘লা লা ল্যান্ড’ সিনেমার জন্য ২০১৭ সালে অস্কার জিতেন। পরে ২০২৪ সালে ‘পুওর থিংস’ সিনেমার জন্য। এই দুটি সিনেমায় এমার অভিনয় নিয়ে ভ্যারাইটি লিখেছিল, ‘এই দুই চলচ্চিত্রই তাঁর শিল্পীসত্তা, ঝুঁকি নেওয়ার সাহস ও মানবিক সংবেদনশীলতার প্রতীক।’ ‘লা লা ল্যান্ড’ সিনেমাটির জন্য ২ কোটি ২৫ লাখ ডলার পারিশ্রমিক পান এমা স্টোন। এটাই তাঁর সর্বাধিক পারিশ্রমিক পাওয়া সিনেমা।

ব্যক্তিগত জীবন
এমা স্টোন ২০২০ সালে ডেভ ম্যাককারিকে বিয়ে করেন। তিনি একজন পরিচালক ও লেখক। তাঁদের পরিচয় স্যাটারডে নাইট লাইভ অনুষ্ঠান থেকে। এই দম্পতির ২০২১ সালে এক কন্যাসন্তান জন্ম নেয়। ব্যক্তিগত জীবনে এমা স্টোন নিজেকে বলেন ‘ইন্ট্রোভার্ট কমেডিয়ান—প্রকাশ্যে লাজুক, কিন্তু ক্যামেরার সামনে দুর্দমনীয়’। দীর্ঘ দেড় যুগের ক্যারিয়ারে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এমা স্টোন প্রমাণ করেছেন যে গ্ল্যামার নয়, আবেগ, মানবিকতা আর শিল্পবোধই একজন অভিনেতার সবচেয়ে বড় শক্তি। ব্যক্তিগতভাবেও তিনি মনে করেন যে বুদ্ধিদীপ্ত কমেডি ও আত্মবিশ্বাসী অভিনয়ই তাঁকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এমা স্টোন বহুবার গণমাধ্যমে অভিনয়ে আসা নিয়ে জানিয়েছেন, শৈশবেই তিনি পার্কিনসনের অঙ্গভঙ্গিনির্ভর ভয়ভীতির সম্মুখীন হয়েছিলেন; অভিনয় ছিল তাঁর সেই ভয় মোকাবিলার একটি মাধ্যম।

‘পুওর থিংস’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য সেরা অভিনেত্রীর অস্কার জিতেছিলেন এমা স্টোন। এএফপি

এমার পছন্দের উক্তি
এই জনপ্রিয় অভিনেত্রীর বিভিন্ন উক্তি প্রায়ই ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তার মধ্যে রয়েছে, ‘নিজের প্রতি সৎ থাকা এবং ভিন্ন কেউ হওয়ার চেষ্টা নয়।’ একবার তিনি বলেছিলেন, ‘জীবনে সাফল্যের জন্য ঝুঁকি নেওয়া উচিত এবং ব্যর্থতার ভয়ে পিছিয়ে পড়া যাবে না। ভয়ের মধ্যেও সাহসী থাকার প্রয়াস থাকতে হবে।’ এ ছাড়া তিনি সাধারণ জীবনযাপন করতে পছন্দ করেন। যে কারণে একবার বলেছিলেন, সাধারণ জীবনকে মূল্য দেওয়া দরকার। আড্ডা, ভ্রান্তি এবং নিজেকে হাস্যরসের মাধ্যমে প্রকাশ করা জরুরি।

যা সবচেয়ে বেশি শুনতে হয়
একসময় হাসি নিয়েও এমাকে সমালোচকদের কথা শুনতে হয়েছে। জনপ্রিয়তার পরে সেই হাসি নিয়েই তাঁকে সবচেয়ে বেশি প্রশংসা শুনতে হয়। দর্শক তাঁকে নিয়ে বলেন, এমার হাসি শুধু ঠোঁটে নয়, চোখেও। এটাও বলা হয় যে তাঁর হাসি আবেগের সততার প্রতীক। ‘লা লা ল্যান্ড’ ছবির পরিচালক ডেমিয়েন শ্যাজেল এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, এমার হাসি সিনেমাটিক; এক দৃষ্টিতেই তাঁর মধ্যে দশটা আবেগ পাওয়া যায়। এ ছাড়া তাঁর বয়স কত, উচ্চতা কত, কবে বিয়ে করেছেন, জন্মস্থান কোথায়, এমন প্রশ্ন ঘন ঘন শুনতে হয়। এই অভিনেত্রীর বয়স এবার ৩৭ বছর, তাঁর উচ্চতা ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি। বিয়ে করেছেন ২০২০ সালে। তাঁর জন্ম স্থান স্কটসডেইল, অ্যারিজোনা, যুক্তরাষ্ট্র।

আইএমডিবি, ভোগ, ভ্যারাইটি অবলম্বনে

এমা স্টোন