`নয়া নোট'–এর দৃশ্য। ছবি: নির্মাতার সৌজন্যে
`নয়া নোট'–এর দৃশ্য। ছবি: নির্মাতার সৌজন্যে

নতুন টাকার নোট ঘিরে রহস্য

অরুণ চৌধুরী–চয়নিকা চৌধুরীর সন্তান অনন্য প্রতীক চৌধুরী। মা-বাবা পরিচালক হওয়ার কারণে শৈশব থেকেই লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশন পরিচিত শব্দ। বলা যায়, শুটিংয়ের আবহেই বেড়ে উঠেছেন এই তরুণ। আবুল হায়াত থেকে শুরু করে দেশের প্রায় সব তারকার সঙ্গেই সহজ সম্পর্ক। কিন্তু অনেক দিন পর্যন্ত তাঁর ইচ্ছাই ছিল না মা-বাবার পথে হাঁটবেন। মা-বাবাকে চমকে দিয়ে শেষ পর্যন্ত কিন্তু পরিচালকই হয়েছেন প্রতীক। সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে তাঁর পরিচালিত প্রথম ওয়েব ফিল্ম নয়া নোট।

৪ নম্বর সহকারী
কাছের মানুষগুলো বিনোদন অঙ্গনের হলেও পরিচালনা তাঁকে টানত না। তাহলে কবে থেকে টানতে শুরু করল? ‘২০১৯ সালে বাবার সঙ্গে ‘মায়াবতী’ সিনেমার শুটিংয়ে গিয়েছিলাম। সেই শুটিংয়ে গিয়ে কেন যেন আমার মনে হলো পরিচালক হিসেবে সমাজে ভালো একটা ইমপ্যাক্ট ফেলা যায়। নিজের বক্তব্য দর্শকের সঙ্গে ভাগাভাগি করার দারুণ সুযোগ। সেটা আমি মা ও বাবার ছায়ায়, সহযোগিতায় কখনোই চাইনি’, বলেন অনন্য। মা ও বাবার কাছেই কাজ শিখেছেন, তবে বাড়তি কোনো সুবিধা নেননি। নতুন একজন সহকারী যেভাবে শুরু করেন, তাঁর ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।

`নয়া নোট'–এর দৃশ্য। ছবি: নির্মাতার সৌজন্যে

‘বিশ্বসুন্দরী’ সিনেমার চতুর্থ সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন অনন্য। পরে তৃতীয়, দ্বিতীয় ও সর্বশেষ মায়ের আরেক সিনেমা ‘প্রহেলিকা’য় সহযোগী পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। এভাবে ৫ বছর কেটে যায়। এই তরুণ বলেন, ‘একদমই শূন্য থেকে পথ চলাটা শুরু করেছি। আমি চেয়েছি মা–বাবা পরিচালক বলে কেউ যেন বলতে না পারে সুযোগ নিয়েছি। আমি আমার যোগ্যতা দিয়ে নিজেকে এগিয়ে নিয়েছি।’ তাঁর মা চয়নিকা চৌধুরী বললেন, ‘সে পরিচালক হবে কিছুই জানতাম না। “মায়াবতী” সিনেমার শুটিংয়ের পরে নুসরাত ইমরোজ তিশার মুখে প্রথম শুনি সে শুটিংয়ে সব কাজই করে। তখন বুঝতে পারি ছেলে পরিচালনা করতে চায়।’

ক্যারিয়ারের কঠিন পরীক্ষা
শৈশব থেকেই যেকোনো পেশায় ক্যারিয়ার গড়ার স্বাধীনতা ছিল। এই নিয়ে কখনোই কোনো চাপ অনুভব করেননি অনন্য। কিন্তু নির্মাণে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর শুনতে হয়, ‘কাজ তো পাবেই, মা–বাবা পরিচালক’ এমন কথা। নাম পরিচয় না বলে অনন্য নিজেই বিভিন্ন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। তাঁর মা-বাবা জানতেনই না তিনি কাজ নিয়ে কত দূর এগিয়েছেন। দূর থেকে তাঁরা পাশে ছিলেন। ‘আমার শুধু একটাই কথা বারবার মনে হয়েছে, এই পরীক্ষায় আমাকে পাস করতে হবে। কাজ দিয়েই নিজেকে চেনাতে হবে। যেকোনো ভাবেই হোক আমাকে কাজ করতে হবে। তাহলেই প্রযোজকেরা বা মার্কেট আমার সম্পর্কে জানবে। তবে পেছনে থেকে মা ও বাবা সব সময় সাহস ও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন।’

প্রতীক চৌধুরী। নির্মাতার সৌজন্যে

সাহস জোগালেন নাসির
চিত্রনাট্য তৈরি। শুরু হলো ঘোরাঘুরি। কে হতে পারে অভিনয়শিল্পী? তালিকা তৈরি হলো। শুরুতেই মনে হলো প্রধান চরিত্রটির জন্য নাসির উদ্দিন খান মানানসই। অ্যালেন স্বপ্নখ্যাত এই অভিনেতা যদি চিত্রনাট্য পছন্দ না করেন, সেই ভাবনাও ছিল। কিছুটা ভয়ে ভয়ে নাসির উদ্দিনের সঙ্গে গল্পটা ভাগাভাগি করেন প্রতীক। শুনেই তিনি ভিক্ষুক চরিত্রে অভিনয়ে রাজি হয়ে যান। তরুণ নির্মাতা হিসেবে এটা অনন্যকে সাহস জুগিয়েছিল। অনন্য জানান, অভিনেতা নাসির উদ্দিন খান যুক্ত হওয়ার পরে কাজটি নিয়ে তাঁর উদ্দীপনা, সাহস শতভাগ বেড়ে যায়। অন্যদেরও সহজে যুক্ত করেন ওয়েবে। এই নিয়ে নাসির উদ্দিন বলেন, ‘“প্রহেলিকা”র শুটিং থেকে আমাদের পরিচয়। তখন থেকেই সে বলত, ওয়েবে কাজ করবে। কিন্তু ভালো কোনো সুযোগ পাচ্ছে না। জানাল, সে স্বল্প বাজেটে কাজ করতে চায়। এটাকে সে পরীক্ষা হিসেবে নিচ্ছে। কথা বলে বুঝলাম, সে অন্যের চেয়ে একটু আলাদা করে ভাবে। তাঁর ডেডিকেশনটা ভালো লেগেছে।’

কী আছে ‘নয়া নোট’-এ
ক্যারিয়ারের প্রথম কাজ। শুরু থেকেই ভাবতে হয়েছে স্বল্প বাজেটের মধ্যে করতে হবে। এ জন্য বাস্তব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েছেন। একবার একটি নয়া নোট একজন ভিক্ষুককে দান করে ভিন্ন এক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন। পরে আরও কয়েকজনকে পরীক্ষা হিসেবে নয়া নোট দান করেন। এই নয়া নোট ঘিরেই এগিয়ে চলে গল্প। দিন শেষে জীবনের নানা উপলব্ধির কথাই গল্পে সহজ করে বলার চেষ্টা করেছেন নবীন নির্মাতা। এতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন এ কে আজাদ সেতু, সমু চৌধুরী, দীপা খন্দকার, পার্থ শেখ ও নওবা তাহিয়া প্রমুখ।

‘নয়া নোট’–এর পোস্টার। নির্মাতার সৌজন্যে

শুভেচ্ছা জানাতে একঝাঁক তারকা
রাজধানীর ধানমন্ডির সীমান্ত সম্ভার সিনেপ্লেক্সে সম্প্রতি ওয়েব ফিল্মটি প্রিমিয়ারে শুভকামনা জানাতে আসেন একঝাঁক তারকা। বর্ষীয়ান অভিনেতা আবুল হায়াত ও তাঁর স্ত্রী শিরিন হায়াত, আফজাল হোসেন, বিপ্লব সাহা, সংগীতশিল্পী কোনাল, মীর সাব্বির, নাজনীন হাসান চুমকি, শ্রাবণী ফেরদৌসসহ অনেকে। অনুষ্ঠানে তরুণ নির্মাতাকে নিয়ে আবুল হায়াত বলেন, ‘অনেক ছোট থেকেই অনন্যদের পরিবারের সঙ্গে আমার পরিচয়। সে পরিচালক হিসেবে প্রথম কাজ ভালো করেছে। ভবিষ্যতে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে আরও ভালো কাজ করুক, সেটাই প্রত্যাশা করি।’