কখনো কখনো কিছু মানুষ হারিয়ে যায়। আবার কখনো কিছু মানুষকে ইচ্ছাই করেই জীবন থেকে হারিয়ে ফেলা হয়। ‘কালিধর লাপাত্তা’ সিনেমাটি ঠিক তেমনি একটি গল্প। যেখানে হারিয়ে যাওয়া একজন মানুষ আবার নতুন করে নিজের পথ খুঁজে নেয়। এক পথশিশুর সঙ্গে বন্ধুত্ব, আশ্রয় আর বেঁচে থাকার ইচ্ছায় সে ফিরে পায় জীবনের মানে। এই সিনেমা শুধু হারানোর নয়, নিজেকে ও সম্পর্ককেও খুঁজে পাওয়ার গল্প।
কালিধর (অভিষেক বচ্চন) একজন মধ্যবয়সী মানুষ, যে ধীরে ধীরে স্মৃতিভ্রষ্ট হয়ে পড়ছে। বিভ্রমে ভোগে, ভুলে যায় নিজের নামও। চিকিৎসা ব্যয়বহুল জানার পর তার পরিবার সিদ্ধান্ত নেয় তাকে সরিয়ে দেওয়ার। চার ভাইবোনের মধ্যে সব থেকে বড় কালিধরকে তার দুই ভাই নিয়ে যায় কুম্ভমেলায়। উদ্দেশ্য, বিভ্রমে ভোগা কালিধরকে সেখানে ফেলে রেখে আসা। সেই মেলায় নিয়ে কালিধরকে তার ভাইয়েরা ইচ্ছা করেই হারিয়ে ফেলে। এরপর লোকদেখানো অভিযোগও করে, যাতে কারও সন্দেহ না হয়।
এরপর গ্রামের এক মন্দির আর সেখানেই শুরু হয় কালিধরের জীবনের গল্পের নতুন অধ্যায়। সেখানে পরিচয় হয় বল্লু (দায়ভিক বাঘেলা) নামের মাত্র আট বছরের এক পথশিশুর সঙ্গে। ধীরে ধীরে বল্লু আর কালিধরের মধ্যে গড়ে ওঠে এক অনন্য বন্ধুত্ব।
বল্লু বেশ চালাক। সে–ই একসময় পথহারা কালিধরের যেন অভিভাবক হয়ে ওঠে। অন্যদিকে কালিধরও বল্লুকে আগলে রাখতে শুরু করে। একসঙ্গে সময় কাটাতে কাটাতে একসময় তারা একটি ‘ইচ্ছার তালিকা’ তৈরি করে। যে তালিকায় কালিধর জীবনে যা যা করতে চেয়েছিল, সেই সব কাজ একে একে করতে শুরু করে তারা।
এদিকে কালিধরের ভাইয়েরা যখন দেনার দায়ে চাপে পড়ে, তখন তারা বুঝতে পারে কালিধরকে ফিরিয়ে আনতে হবে। কারণ, তাকে ছাড়া তাদের সমস্যার সমাধান হবে না। তখন তারা আবার খোঁজ করতে শুরু করে কালিধরের।
এদিকে কালিধরের ভাইয়েরা যখন দেনার দায়ে চাপে পড়ে, তখন তারা বুঝতে পারে কালিধরকে ফিরিয়ে আনতে হবে। কারণ, তাকে ছাড়া তাদের সমস্যার সমাধান হবে না। তখন তারা আবার খোঁজ করতে শুরু করে কালিধরের। ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড’ অফিসার সুবোধের (মোহাম্মদ জিশান আইয়ুব) সহায়তায় তারা খোঁজা শুরু করে।
সিনেমার গল্প ধীরে এগিয়েছে। নেই কোনো জোরালো চমক। তবু কিছু দৃশ্য হৃদয় ছুঁয়ে যায়। বল্লু আর কালিধরের বন্ধুত্ব সহজ-সরল কিন্তু গভীর। বল্লু চরিত্রে দায়ভিক বাঘেলা অসাধারণ। তার চোখেমুখে শিশুসুলভ দুষ্টুমি আবার জীবনের কষ্টের ছাপও স্পষ্ট। অভিনয় এতটাই জীবন্ত যে কোথাও মনে হয় না এটি কোনো সিনেমার দৃশ্য। অন্যদিকে অভিষেক বচ্চন সিনেমার গল্পের মধ্যে থেকেই নিজের সেরা অভিনয় করেছেন। তাঁর অভিনয়ে নাটকীয়তা মনে হয়নি। চিৎকার না করেও যে গভীরভাবে অনুভব করানো যায়, সেটা তিনি অভিনয়ের মধ্যে দেখিয়েছেন। অভিষেক আর দায়ভিকের জুটি এককথায় অসাধারণ। কখনো দুই পথের যাত্রীর মতো, কখনো বাবা-ছেলের মতো, কখনো আবার একে-অপরের প্রতি ভরসা হয়ে ওঠা।
‘কালিধর লাপাত্তা’ সিনেমাটি বারবার মনে করিয়ে দেয়, জীবন যতই কঠিন হোক, ভালোবাসা আর আশার জায়গা কখনো পুরোপুরি ফুরিয়ে যায় না। জীবনের পথে কেউ যখন একা হয়ে পড়ে, তখন হয়তো একজন বল্লুই যথেষ্ট, যে হাত ধরে বলে, ‘চলো, আবার শুরু করি…’।
তবে সিনেমার কিছু জায়গায় দুর্বলতা আছে। ‘ইচ্ছার তালিকা’ যথেষ্ট আবেগ দিয়ে তৈরি করতে পারেননি নির্মাতা। কালিধরের সঙ্গে মীরার সম্পর্কটিও আরও গভীরতার দাবি করে।
কিছু দৃশ্য হৃদয় ছুঁয়ে যায়। বল্লু আর কালিধরের বন্ধুত্ব সহজ-সরল কিন্তু গভীর। বল্লু চরিত্রে দায়ভিক বাঘেলা অসাধারণ। তার চোখেমুখে শিশুসুলভ দুষ্টুমি আবার জীবনের কষ্টের ছাপও স্পষ্ট।
তবু সবকিছুর ঊর্ধ্বে গিয়ে এই সিনেমার আসল শক্তি মানবিক সম্পর্ক। বয়স, রক্তের সম্পর্ক বা পরিচয়ের গণ্ডি পেরিয়ে এক পথশিশু আর এক পথহারা মানুষ যখন একে-অপরের সঙ্গী হয়ে ওঠে, তখন বোঝা যায় সব থেকে গভীর সম্পর্কগুলো গড়ে ওঠে নীরবতায়, অনুভবে।
‘কালিধর লাপাত্তা’ সিনেমাটি বারবার মনে করিয়ে দেয়, জীবন যতই কঠিন হোক, ভালোবাসা আর আশার জায়গা কখনো পুরোপুরি ফুরিয়ে যায় না। জীবনের পথে কেউ যখন একা হয়ে পড়ে, তখন হয়তো একজন বল্লুই যথেষ্ট, যে হাত ধরে বলে, ‘চলো, আবার শুরু করি…’
‘কালিধর লাপাত্তা’ সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন মধুমিতা। এটি ৪ জুলাই মুক্তি পেয়েছে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম জি–ফাইভে।