‘বন অ্যাপাটিট, ইয়োর ম্যাজেস্টি’র দৃশ্য। নেটফ্লিক্স
‘বন অ্যাপাটিট, ইয়োর ম্যাজেস্টি’র দৃশ্য। নেটফ্লিক্স

সেই নির্মম রাজার গল্প

মাত্র তিন পর্ব প্রচারের পরই নেটফ্লিক্সের বৈশ্বিক তালিকার সেরা দশে উঠে গেছে ‘বন অ্যাপাটিট, ইয়োর ম্যাজিস্টি’। প্রেম, ইতিহাস আর কল্পনার মিশেলে তৈরি কে-ড্রামা সিরিজটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখন তুমুল আলোচনা। তবে খুব কম দর্শকই জানেন গল্পটির মূল উৎস; কোরিয়ার সবচেয়ে নিষ্ঠুর শাসকদের একজনের জীবনের ছায়া অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে এই সিরিজ!

গল্পে কী আছে
বিমানে ভ্রমণের সময় হঠাৎ টাইম স্লিপে জেসন যুগে চলে যান আধুনিক যুগের এক শেফ ইয়ন জি-ইয়ং (ইম ইউন-আহ)। সেখানেই রূঢ় ও নির্মম এক রাজা লি হেয়নের (লি চে-মিন) সঙ্গে তাঁর দেখা। হাস্যরস, রোমান্স ও ইতিহাসের মিশেলে টাইম ট্রাভেল কাহিনিটি তৈরি করেছে ভিন্ন আবহ।

‘বন অ্যাপাটিট, ইয়োর ম্যাজেস্টি’র দৃশ্য। নেটফ্লিক্স

পার্ক গুক-জের উপন্যাস ‘সারভাইভিং অ্যাজ ইয়নসানগুন শেফ’ থেকে সিরিজটি তৈরি হয়েছে। তবে উপন্যাসে যে রাজাকে ইয়নসানগুন নামে দেখানো হয়েছে, নেটফ্লিক্স সংস্করণে তাঁর নতুন নাম (লি হেয়ন) দেওয়া হয়েছে। কারণ, ইয়নসানগুন কোরিয়ার ইতিহাসে এতটাই বিতর্কিত ও ভয়ংকর এক চরিত্র যে বাস্তব নামটি ব্যবহার করা হলে নানা বিতর্ক দেখা দেওয়ার আশঙ্কা ছিল।

ইতিহাসের ইয়নসানগুন
১৪৯৪ থেকে ১৫০৬ সাল পর্যন্ত কোরিয়া শাসন করেছিলেন ইয়নসানগুন। শৈশবেই জীবনের অন্ধকার দিকের মুখোমুখি হন। তাঁর জন্মদাত্রী মা রানি ইউনকে নির্বাসনে পাঠানো হয়; পরে বিষ প্রয়োগে তাঁকে হত্যা করা হয়। দীর্ঘদিন তিনি ভেবেছিলেন সৎমা রানি জংহিয়নই তাঁর মা। সত্য জানার পরই বদলে যান ইয়নসানগুন।

ক্ষমতায় আসার পর মায়ের সম্মান পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চান, কিন্তু বিরোধিতার মুখে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ওঠেন। অনেককে মৃত্যুদণ্ড দেন, নিজ হাতেও অনেককে হত্যা করেন; এমনটাও শোনা যায়। তাঁর নিষ্ঠুরতা এরপর ধীরে ধীরে আরও বেড়ে যায়। তিনি শিক্ষার সুযোগ বন্ধ করে দেন, রাজকীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে ভোগবিলাসের ক্ষেত্রে পরিণত করেন। জনগণ তাঁকে হানগুল ভাষায় সমালোচনা করলে ভাষাটিই নিষিদ্ধ করেন। তাঁর মনোরঞ্জনের জন্য শত শত নারীকে অপহরণ করে প্রাসাদে আনা হতো।

তিনি বৌদ্ধমন্দির বন্ধ করে দেন, প্রতিবাদীদের দমন করেন, শিক্ষিত ও প্রভাবশালী মানুষদেরও হত্যা করেন। ১২ বছরের শাসন শেষে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়, নির্বাসনে পাঠানোর দুই মাস পর মারা যান এই শাসক।

‘বন অ্যাপাটিট, ইয়োর ম্যাজেস্টি’র দৃশ্য। নেটফ্লিক্স

সিরিজ আর বাস্তবের ফারাক
সিরিজটিতে ঐতিহাসিক উপাদান থাকলেও এটি ইয়নসানগুনের বায়োপিক নয়; বরং ইতিহাসের ভয়ংকর এক অধ্যায়কে পটভূমিতে রেখে ভিন্নধর্মী এক প্রেমের কাহিনি। কোরিয়ান চলচ্চিত্রেও বারবার উঠে এসেছেন ইয়নসানগুন। ‘প্রিন্স ইয়নসান’, ‘দ্য কিং অ্যান্ড দ্য ক্লাউন’ ইত্যাদি সিনেমাতেও উঠে এসেছে তাঁর শাসনের ভয়াবহতা।
১২ পর্বের সিরিজটির প্রথম দুই পর্ব মুক্তি পেয়েছে ২৩ আগস্ট, ৩১ আগস্ট এসেছে তৃতীয় পর্ব। বাকি ৯ পর্ব মুক্তি পাবে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস