‘ডু ইউ ওয়ানা পার্টনার’ সিরিজে তামান্না ভাটিয়া ও ডায়না পেন্টি। আইএমডিবি
‘ডু ইউ ওয়ানা পার্টনার’ সিরিজে তামান্না ভাটিয়া ও ডায়না পেন্টি। আইএমডিবি

তামান্না কি এবার পারলেন

স্টার্টআপ! নিজের ব্যবসা! ব্যবসা করার একটা ছোট্ট ইচ্ছা সবারই থাকে। কিন্তু প্রতি পদে পদে যে ঝামেলার ভার কি সবাই নিতে পারে? দুই বন্ধু, শিখা রায় চৌধুরী (তামান্না ভাটিয়া) আর অনাহিতা মাকুজিনা (ডায়ানা পেন্টি)। দুজনেই ভালো চাকরি করে। কিন্তু ভাগ্যের ফেরে শিখার কর্মরত কোম্পানিটি কিনে নেন বিক্রম ওয়ালিয়া (নীরজ কবি)। শিখা হঠাৎ করেই চাকরি হারায়। কিন্তু বিক্রমের সঙ্গে শিখার রয়েছে অতীতের এক শত্রুতা। শিখার বাবা সঞ্জয় রায় ছিলেন একজন ব্রিউমাস্টার, তিনি খুব ভালো বিয়ার বানাতেন। সঞ্জয় আর বিক্রম ছিলেন বন্ধু এবং ব্যবসার পার্টনার। কিন্তু বিক্রম সঞ্জয়ের সঙ্গে প্রতারণা করে নিজেই হয়ে ওঠেন এই ব্র্যান্ডের মালিক। পেছনে পড়ে থাকেন সঞ্জয়।

একনজরেসিরিজ: ‘ডু ইউ ওয়ানা পার্টনার’ধরন: কমেডি-ড্রামাপরিচালক: অর্চিত কুমার, কলিন ডি’কুনহাস্ট্রিমিং: অ্যামাজন প্রাইম ভিডিওঅভিনয়: তামান্না ভাটিয়া, ডায়ানা পেন্টি, নকুল মেহতা, জাভেদ জাফেরি, নীরজ কবি, শ্বেতা তিওয়ারিপর্ব: ৮

ঠিক এই সময়েই অনাহিতার পদোন্নতি হতে গিয়েও হয় না। বড় একটা চুক্তি সফলভাবে সম্পন্ন কারার পরও তার কোম্পানির কাছে সে নিজেকে প্রমাণ করতে পারে না; বরং তাদের ধারণা, সুন্দর চেহারার কারণেই এই সাফল্য! নিজের সঙ্গে হওয়া এ প্রতারণা মানতে না পেরে সে–ও চাকরি ছেড়ে দেয়।

শিখার বাবার এ স্বপ্নকে সত্যি করতে এবার দুই বন্ধু শুরু করে ক্রাফট বিয়ারের ব্যবসা। কিন্তু পদে পদে বাধার সম্মুখীন হয় তারা। বিয়ার বানানো, তহবিল জোগাড় করা, কারখানা ভাড়া করা, নেটওয়ার্কিং, রাজনীতি; একের পর এক বিপদ যেন ওঁত পেতে থাকে। তাদের সম্পর্কেও শুরু হয় টানাপোড়েন। শিখা আর অনাহিতা কী পারে তাদের এ ব্যবসা দাঁড় করাতে? নাকি ব্যবসা শুরুর আগেই হার মানতে হয় তাদের? এমন গল্পই তুলে ধরা হয়েছে ‘ডু ইউ ওয়ানা পার্টনার’ সিরিজটিতে। গত ১২ সেপ্টেম্বর অ্যামাজন প্রাইমে মুক্তি পাওয়া সিরিজটি কেমন হলো?

‘ডু ইউ ওয়ানা পার্টনার’–এর দৃশ্য। আইএমডিবি

‘ডু ইউ ওয়ানা পার্টনার’ একটি বেশ প্রাণবন্ত সিরিজ, যা দর্শকদের স্টার্টআপের যাত্রা, নারী উদ্যোক্তাদের বাধা এবং ব্যবসার অনেক খুঁটিনাটি সম্পর্কে ধারণা দেয়। স্টার্টআপ মানেই অগ্নিপরীক্ষা। এখানে কেউ বিনিয়োগ করবে না, ভরসা করবে না; বরং ব্যবসা একটু দাঁড়ানো শুরু করলে আসতে থাকে একের পর এক বাধা। ‘ডু ইউ ওয়ানা পার্টনার’ সিরিজটিতে দর্শকেরা একটা ক্রাফট বিয়ারের বাজারে আসার পদ্ধতি দেখতে পান। এখানে পরিকল্পনা থেকে শুরু করে বাজারজাত করা পর্যন্ত প্রতিটি বিষয় একটু একটু করে হলেও দেখাতে চেয়েছেন নির্মাতারা। সিরিজটিতে উঠে এসেছে ভারতের নয়াদিল্লির গুড়গাঁও শহরের স্টার্টআপ সংস্কৃতি। সিরিজের একেকটি পর্বের নামও দেওয়া হয়েছে স্টার্টআপ সংস্কৃতির আদলে—বুটস্ট্র্যাপ, ইউএসপি, ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর, দ্য লঞ্চ ইত্যাদি।

সিরিজটি কমেডি-ড্রামা ঘরনার। খুব গম্ভীর কিছু না রেখে পুরো সিরিজ তৈরি হয়েছে কমেডির মোড়কে। গল্প নিখুঁত নয়, কিন্তু শক্তিশালী অভিনয় সিরিজটিকে করে তুলেছে উপভোগ্য। হাসির আড়ালে এখানে উঠে এসেছে কর্মক্ষেত্রে ও ব্যবসা করতে গেলে নারীরা যেসব সমস্যার মুখোমুখি হয়, সেগুলো। তামান্না ভাটিয়া ও ডায়ানা পেন্টির রসায়ন দেখতে ভালো লাগে, প্রকৃত বন্ধুর মতো তাঁরা একে অন্যের হাত ধরে সিরিজটি এগিয়ে নিয়ে গেছেন। সিরিজটি কলকাতা ও গুরগাঁওয়ে পরিবেশের মধ্যে ওঠা-নামা করলেও বুঝতে অসুবিধা হয় না; বরং দুটি শহরের সংস্কৃতি ও যাপনের অনেক কিছু উঠে এসেছে এই সিরিজে।  

‘ডু ইউ ওয়ানা পার্টনার’–এর দৃশ্যে ডায়ানা ও তামান্না। আইএমডিবি

গত বছর ‘স্ত্রী ২’ সিনেমার আইটেম গানে আবেদনময়ী রূপে হাজির হয়ে ঝড় তুলেছিলেন তামান্না ভাটিয়া। তবে এ সিরিজে তিনি হাজির হয়েছেন খোলনলচে বদলে। সিরিজটিতে তিনি দারুণ অভিনয় করেছেন। জেদ, আত্মবিশ্বাস, প্রতিশোধ ও ছোটবেলার ট্রমাকে তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন বেশ ভালোভাবেই। ডায়ানা পেন্টির উপস্থিতি ছিল সতেজ। তিনি দৃঢ়চেতা নারীর চরিত্রে যেমন তাঁর করপোরেট পরিচয়কে সামলেছেন; তেমনি বন্ধু, বোন, প্রেমিকা হিসেবে তাঁর চরিত্রের ভঙ্গুর দিকগুলো ফুটিয়ে তুলেছেন ভালোভাবে। প্রধানত দ্বৈত চরিত্রে অভিনয়ের দিকটা বেশ মজার ছিল।

‘ডু ইউ ওয়ানা পার্টনার’–এর দৃশ্যে ডায়ানা ও তামান্না। আইএমডিবি

তামান্না ও ডায়ানার রসায়ন পর্দায় দেখতেও ভালো লেগেছে। ববির চরিত্রে নকুল মেহতা ভালো ছিলেন, কিন্তু তাঁর চরিত্রটি খুব একটা বিকাশের সুযোগ দেওয়া হয়নি। তবে বিক্রম ওয়ালিয়ার চরিত্রে নীরাজ কবির অভিনয় মাঝেমধ্যে অতিনাটকীয় লেগেছে। শক্ত প্রতিপক্ষ হলেও তাঁকে সেভাবে উপস্থাপন করতে পারেননি নির্মাতারা। চরিত্রটি ক্লিশে লাগেছে অনেক সময়।

ডিলানের চরিত্রে জাভেদ জেফরি দারুণ, তবে সিরিজে তাঁর চরিত্রটি না থাকলেও কিছু ক্ষতি হতো না। ফেরদৌসের চরিত্রে সুফি মোতিওয়ালা বেশ ভালো। ডায়ানার সঙ্গে তাঁর খুনসুটি দেখতে ভালো লাগে। তবে এ সিরিজে নিজের উপস্থিতি দিয়ে আলাদাভাবে নজর কেড়েছেন শ্বেতা তিওয়ারি। লাইলা সিংয়ের মতো গ্যাংস্টারের চরিত্র তিনি যেভাবে ঠান্ডাভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন, তা দুর্দান্ত।

‘ডু ইউ ওয়ানা পার্টনার’–এর পোস্টার। আইএমডিবি

সিরিজটিতে নারীর সংগ্রাম প্রাধান্য পেলেও এখানে পুরুষেরা ছিলেন সহযোদ্ধা। প্রতিটি পর্বে এত সুন্দরভাবে তাঁদের সহযোগিতা তুলে ধরা হয়েছে; বোঝানো হয়েছে পুরুষেরা শত্রু নন, তাঁরা সহযোদ্ধা।

সিরিজের কিছু দুর্বল দিকও রয়েছে। এখানে স্টার্টআপ জার্নিটা আরেকটু ভালোভাবে উপস্থাপন করা যেত। বেশ কিছু দৃশ্যের পেছনের কার্যকারণ খুব স্পষ্টভাবে দেখানো হয়নি। যেমন শিখা কেন লাইলা সিংয়ের প্রস্তাবে রাজি হলো, তা দেখানো হয়নি ভালোভাবে। হঠাৎ করে তার বন্ধুর বিপক্ষে চলে যাওয়ার কারণও স্পষ্ট নয়। গল্পের ধারায় নতুনত্ব থাকলেও সিরিজটি তার সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারেনি। গল্প কখনো গতি হারিয়েছে আবার কিছু সাব-প্লট দেখানো পূর্ণতা পায়নি। তবে সব মিলিয়ে ‘ডু ইউ ওয়ানা পার্টনার’ উপভোগ্য সিরিজ। আট পর্বের সিরিজটি দেখতে বসলে শেষ না করে ওঠা মুশকিল।

‘ডু ইউ ওয়ানা পার্টনার’–এর দৃশ্যে ডায়ানা ও তামান্না। আইএমডিবি