নাটক, সিনেমা কিংবা ওয়েব—সব প্ল্যাটফর্মেই তিনি সরব। তবে অনেকেই হয়তো জানেন না, এই অভিনেতা চাকরির ফাঁকে শুটিং করেন। একসঙ্গে দুই জায়গায় মানিয়ে নিতে পারছিলেন না। এ কারণে দু–তিন মাস পরপরই সিদ্ধান্ত নেন, চাকরি ছাড়বেন। তাঁর এই চাকরি ছাড়ার কথা শুনলেই এখন সহকর্মীরা হাসাহাসি করেন। এই অভিনেতার নাম মোস্তফা মন্ওয়ার। আজ তাঁর জন্মদিন।
এই অভিনেতা এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, চাকরি ছাড়ার কথা তিন-চার মাস পরপর বলবেন—এটা সহকর্মীরা ধরেই নিয়েছেন। কারণ, শুটিংয়ে সময় দিতে হয়। অফিসেও দায়িত্ব পালন করতে হয়।
মোস্তফা মন্ওয়ার বলেন, ‘দীর্ঘ দুই দশকের বেশি সময় ধরে আমি অভিনয় ও চাকরি একসঙ্গে করছি। অনেকবার চেয়েছি চাকরি ছেড়ে শুধু শুটিং শুরু করি। কিন্তু কোনোভাবেই এটা হচ্ছে না। অর্থনৈতিক কারণে অভিনয়কেই শুধু পেশা হিসেবে নিতে পারছি না। চাকরিও ছাড়তে পারছি না। এর আগে চার-পাঁচবার চাকরি ছেড়েছি। কিন্তু আবার চাকরিতেই ফিরতে হয়েছে। ছুটির দিনে পরিবারকে সময় দিতে পারি না। শুটিংয়ে যাই।’
কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করে পেশা হিসেবে কী বেছে নেবেন, এটা নিয়ে অস্তিত্বসংকটে ছিলেন। এমন সময় ডাক পড়ল মহল্লার এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে, অভিনয় করতে হবে। সেই প্রথম অভিনয়। সেদিন যে নাটকের মহড়া করেছিলেন, সেটি পরে আর মঞ্চস্থ হয়নি। কিন্তু না হওয়া সেই নাটকের মহড়া বানিয়েছেন অভিনেতা মোস্তফা মন্ওয়ারকে। মহড়া করতে গিয়েই যে অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয় তাঁর।
মোস্তফা মন্ওয়ার ১৯৯৮ সালে অভিনয় শিখতে প্রাচ্যনাটে যোগ দেন। মঞ্চে টানা পাঁচ বছর অভিনয় করেন। ২০০৩ সালে প্রথম সুযোগ পান টেলিভিশনে, বন্ধু অনিমেষ আইচের ‘কুফা’ নাটকে। পরে অনেক পরিচালকের সঙ্গে অভিনয় করেছেন। কিন্তু মনের মতো চরিত্র পাচ্ছিলেন না। পছন্দমতো চরিত্র পেতে তাঁকে অপেক্ষা করতে হয় ১২ বছর!
মন্ওয়ার এর আগে প্রথম আলোকে বলেন, ‘দিনের পর দিন ছোট চরিত্রে অভিনয় করেছি। অনেকে কাজেই ডাকেনি, অনেক কাজ করা হয়নি; এগুলোতে আমার মন খারাপ হয়নি। কোনো দিন কাজ পেতে লবিং করিনি। এগুলো আমি এনজয় করেছি। কিন্তু মন খারাপ থাকত ভালো চরিত্রের জন্য। পছন্দের চরিত্র পেতে ১২ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। এই চরিত্র আমাকে দিয়েছিলেন পরিচালক আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ।’
২০১৬ সালে মুক্তি পাওয়া ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’ সিনেমার সাজ্জাদ চরিত্রটি এখনো তাঁর কাছে সেরা। সিনেমাটির সিঙ্গাপুর ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সেরা পরিচালকের পুরস্কার জেতে। একই সঙ্গে সেরা অভিনয়ের জন্যও পুরস্কার জিতেছিলেন মন্ওয়ার।
অভিনয় ও চাকরি একসঙ্গে করতে গিয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে মোস্তফা মন্ওয়ারকে। গল্প বাছাই করতে অনেক বাছবিচার করতে হয়। সারা বছরের অভিনয়ের ক্ষুধা মেটাতে হয় অল্পসংখ্যক কাজ করে। এ জন্য তাঁর কাছে অন্যদের ১০টি কাজের সমান নিজের একটি কাজ। এটা তাঁর কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।
এই প্রসঙ্গে মোস্তফা মন্ওয়ার প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘আমি নিয়মিত অভিনয় করলে ১০টি কাজ থেকে যে অভিনয়ক্ষুধা মেটাতে পারতাম, সেটা এখন একটি কাজ থেকে মেটাতে হচ্ছে। এ জন্য আমি সব সময় নতুন চরিত্রে অভিনয় করি। নতুন অভিজ্ঞতা নিতে চাই। অভিনয় শেখা যাবে এমন গল্প, চরিত্রগুলোয় নাম লেখাতে চাই। যে গল্পগুলো অনেক গভীরে চলে যাওয়া যায়।’
বর্তমানে মোস্তফা মন্ওয়ার অভিনীত ‘সাবা’, ‘বালুর নগরীতে’ (স্যান্ড সিটি) ছাড়াও বেশ কিছু সিনেমা মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। ‘সাবা’য় তাঁর সহকর্মী মেহজাবীন চৌধুরী। এটি মেহজাবীন অভিনীত প্রথম সিনেমা। এ মাসের শেষের দিকে সিনেমাটি মুক্তির কথা রয়েছে। আজ মন্ওয়ারের জন্মদিন।