নয়ীম গহরের গান অনেকে ফিরিয়ে দিয়েছেন!

নয়ীম গহর
নয়ীম গহর

‘জন্ম আমার ধন্য হলো মাগো’ এবং ‘নোঙর তোলো তোলো সময় যে হলো হলো’—কালজয়ী এ দুটি গান কে না শুনেছে?
মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রেরণা দেওয়া এ গান দুটি বাংলাদেশি সংগীতের কিংবদন্তি গীতিকবি নয়ীম গহরের। তাঁর মেয়ে অজন্তা গহরের ইচ্ছে, বাবার লেখা গান গাইবেন। সে জন্যই বাবার লেখা গান নিয়ে অনেক সংগীত পরিচালকের কাছে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বেশির ভাগের কাছ থেকে নিরাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, সংগীত পরিচালকদের দাবি করা টাকার অঙ্ক শুনে তিনি আঁতকে উঠেছেন।
অজন্তা গহর স্বামীর চাকরিসূত্রে এক যুগেরও বেশি সময় জেদ্দায় ছিলেন। ছোটবেলা থেকে গানের প্রতি তীব্র নেশা থাকলেও পড়াশোনা, বিয়ে এবং সাংসারিক ব্যস্ততায় একসময় গানে অনিয়মিত হয়ে পড়েন। জেদ্দা থাকার সময় নাকি স্বামীর অনুপ্রেরণায় আবার গান গাওয়া শুরু করেন। অজন্তা বলেন, ‘গানের প্রতি আমার ব্যাপক নেশা ছিল। দেশের বাইরে চলে যাওয়ার কারণে খুব একটা কাজ করা হয়নি। কিন্তু আমার স্বামী গানের ব্যাপারে খুব উৎসাহ দিতেন। আমাকে জোর করে আবার গানে ফেরালেন। এক যুগে জেদ্দায় অনেক স্টেজ শো করেছি। সেখানে আমার একটা পরিচিতিও তৈরি হয়। এখন আমার সাংসারিক চাপ অনেকটাই কম। বাচ্চারাও বড় হয়ে গেছে। তাই ভাবলাম, গলাটা সেধে দেখি, হয় কি না। আমার নিজস্ব একটা চাওয়াও বলতে পারেন। খুঁজছিলাম কোনো সংগীত পরিচালকের মাধ্যমে কিছু করা যায় কি না। কিন্তু বেশ হতাশ হই।’
বছর দশেক ধরে দেশেই আছেন অজন্তা গহর। দেশে ফেরার পর বাবা নয়ীম গহরের সঙ্গে নাকি গান নিয়ে তাঁর অনেক আলোচনা হতো। তাঁর বাবাই নাকি চেয়েছিলেন অজন্তা আবার যেন গান গায়। বাবা বেঁচে থাকতে মেয়ের কণ্ঠে গানও শুনতেন। শুধু তাই নয়, মেয়েকে নিয়ে বিভিন্ন সংগীত সংশ্লিষ্ট মানুষের কাছেও গেছেন তিনি। জীবিত থাকা অবস্থায় বাবার লেখা গান আর গাওয়া হয়নি তাঁর।

অজন্তা গহর


২০১৫ সালের ৬ অক্টোবর নয়ীম গহর মারা যান। অজন্তা গহর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি যখন দেশে ফিরলাম, আব্বা তখন বেঁচে ছিলেন। আব্বা তখন আমাকে নিয়ে কিছু জায়গায় গেলেন। তিনি চাইছিলেন তাঁর কিছু গান আমি করি। আমার কাছে তাঁর গানের পুরো ডায়েরিটা আছে। আমি কয়েকজন সংগীত পরিচালকের কাছে গেলাম, তাঁরা সবাই আমার কাছে এমন টাকা দাবি করলেন! শুনেই আঁতকে উঠি। শুধু তা–ই নয়, তাঁরা খুব একটা আন্তরিকও ছিলেন না। পরে যখন আব্বার কথা শুনলেন, তখন তাঁরা টাকার অঙ্কটা কিছুটা কমালেন, সেটাও আমার সাধ্যের বাইরে ছিল। আমি তো একটা সময় গান করার স্বপ্ন পুরোপুরি ছেড়েই দিয়েছিলাম। আমার মনে হয়েছে, টাকা ছাড়া গান করা সম্ভব না তাহলে!’
সংগীত পরিচালকদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে অজন্তা গহর যখন হতাশ, তার কিছুদিনের মধ্যে টেলিভিশনে একটি ফাহমিদা নবী ও শানের গাওয়া ‘সাদাকালো’ গানটি শুনলেন। গানটি অজন্তার খুব ভালো লাগে। এরপর তিনি খোঁজ-খবর নিয়ে যোগাযোগ করলেন শানের সঙ্গে। তাঁর সঙ্গে কথা বলে মুগ্ধ হন অজন্তা। বললেন, ‘তাঁকে সবকিছু বুঝিয়ে বলার পর তিনিও খুব সামান্য বাজেটে আমাকে চমৎকার একটা সুর তৈরি করে দেন। শানের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করেছে। আমার কাছে মনে হয়েছে, এখনো কিছু ভালো মানুষ পৃথিবীতে আছেন। সত্যি কথা বলতে, আমি সুপারস্টারও হতে চাই না, স্টেজ প্রোগ্রামও করতে চাই না। মনের খোরাকের জন্য গানটা করছি।’