বছর চারেকের পথচলায় বাংলা সংগীতে নিজস্ব ছাপ ফেলেছে কাকতাল
বছর চারেকের পথচলায় বাংলা সংগীতে নিজস্ব ছাপ ফেলেছে কাকতাল

হঠাৎ কাকতালের গান ছাড়ার ঘোষণা, নেপথ্যে কী

‘আবার দেখা হবে’, ‘গোলোকধাঁধা’ কিংবা ‘সোডিয়াম’—একের পর এক গানের কথা-সুরে মাদকতা ছড়িয়েছে ‘কাকতাল’। বছর চারেকের পথচলায় বাংলা সংগীতে নিজস্ব ছাপ ফেলেছে ব্যান্ডটি। তরুণ শ্রোতাদের বিভোর করেছে কাকতাল।

গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কনসার্ট শেষে রাতে এক ফেসবুক পোস্টে কাকতাল লিখেছে, ‘অনির্দিষ্টকালের জন্য ব্যান্ডটি আর গাইবে না।’

কাকতালের এমন আচমকা ঘোষণায় বিষ্মিত হয়েছেন ভক্তরা। ফেসবুকে রীতিমতো আলোচনার ঝড় ওঠে। অনেকে প্রশ্ন করছেন, ‘কাকতালের কী হলো?’ বিষয়টি নিয়ে আলোচনার মধ্যে আজ রোববার দুপুরে ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা ও ভোকালিস্ট আসিফ ইকবালের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। শ্রোতাদের কাছে অন্তু নামে পরিচিত এই সংগীতশিল্পী জানান, গতকালই সিদ্ধান্তটি নিয়েছেন তাঁরা।

কেন এই সিদ্ধান্ত, এমন প্রশ্নের উত্তরে আসিফ ইকবাল আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা মনের শান্তির জন্য গান করি। তবে এখন মনে হচ্ছে, পুরোপুরি শান্তিটা পাচ্ছি না। নিজেদের থেকে নিজেদের, আবার মানুষের কাছ থেকেও আমাদের প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। বিষয়টি আমাদের জন্য প্রেশার (চাপ) তৈরি করেছে। আমরা মিউজিক (সংগীত) থেকে একটু দূরে চলে যাচ্ছি। মজা না পেলে মিউজিক করার কোনো মানে নেই।’

কাকতাল ব্যান্ডের সদস্যরা
আমরা মনের শান্তির জন্য গান করি। তবে এখন মনে হচ্ছে, পুরোপুরি শান্তিটা পাচ্ছি না। মজা না পেলে মিউজিক করার কোনো মানে নেই।
আসিফ ইকবাল, প্রতিষ্ঠাতা, কাকতাল

গতকালে রাতে দেওয়া ফেসবুক পোস্টটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ১৭ ঘণ্টার ব্যবধানে প্রায় ৬ হাজারবার শেয়ার হয়েছে, ৪ হাজার মন্তব্য এসেছে। বেশির ভাগই লিখেছে, ‘কাকতাল ফিরে আসুক।’

কাকতাল কি আর কখনোই ফিরবে না? এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ ইকবাল বলেন, ‘জানি না, এটা চিরদিনের জন্য নয়, আবার হতেও পারে। আমাদের মূল উদ্দেশ্য, আমাদের একটা বিরতি দরকার। এটা সম্ভবত একটা দীর্ঘবিরতি হচ্ছে। আমরা নিজেদের জন্য সময় নিচ্ছি।’ তাঁর ভাষ্য, ‘অনির্দিষ্টকালের জন্য আমাদের কার্যক্রম বন্ধ করেছি।’

কাকতাল ব্যান্ডের সদস্যরা
এটা সম্ভবত একটা দীর্ঘবিরতি হচ্ছে। আমরা নিজেদের জন্য সময় নিচ্ছি।
আসিফ ইকবাল, প্রতিষ্ঠাতা, কাকতাল

গতকাল সন্ধ্যায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শেষ কনসার্ট করেছে কাকতাল। ফেসবুকে কেউ কেউ লিখেছেন, সেই কনসার্টে হট্টগোল হয়েছে। সেই ঘটনার জেরে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যান্ডটি। তবে আসিফ ইকবাল বলছেন, বিষয়টি তেমন না। কনসার্টে গাওয়ার আগেই সিদ্ধান্তটি নিয়েছেন তাঁরা।

কাকতালের বাইরে আলাদাভাবে পরিচিতি পেয়েছেন আসিফ ইকবাল। ব্যান্ডের বেশির ভাগ গানের কথা, সুরও তাঁর। গান পরিবেশনও করেন তিনি। ব্যান্ডের বাইরে একক ক্যারিয়ার গড়ার কোনো পরিকল্পনা আছে? তিনি বলেন, ‘আমার আপাতত নিজের জন্য একটা বিরতি দরকার। আমার বাবার মৃত্যুর পর মিউজিকে ফোকাস করতে পারছি না। আমার ভালো না লাগলে করব না, ভালো লাগলে করব।’ ব্যান্ডের ম্যানেজার জাভেদ হক জানান, বাকি সদস্যরা একক ক্যারিয়ার গড়বেন কি না, তা এখনো জানা যায়নি।

কাকতালের পথচলা

২০২১ সালের ২০ আগস্ট ব্যান্ড হিসেবে কাকতাল আত্মপ্রকাশ করে। গত বছর প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আসিফ ইকবাল বলেন, ‘সেদিন আজিজ মহল্লাতে এক বন্ধুর অনুরোধে আমার একটা শো করার কথা হয়। আমাদের তখন কেউ চিনত না, কিন্তু ৬০-৭০ জন মানুষ গান শুনতে চলে এসেছিলেন। আমি, নাজেম ও শান্ত মিলে কাকতালের আত্মপ্রকাশ ঘটালাম।’

ব্যান্ডের নাম ‘কাকতাল’ কেন? সেই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘পুরো জার্নি খুবই কাকতালীয়। কোনো কিছু পরিকল্পনা করে হয়নি, যেভাবে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সব জোড়া লাগছে, সেভাবেই চলছে, সেভাবেই জড়িয়ে ধরছি। পরিকল্পনা না করে যখন জীবনের অনেক সুন্দর কিছু ঘটে যায়, সেই অনুভূতি অতুলনীয় ও মূল্যবান। কাকতাল নামে ‘কাক’ আছে। আমি কেন জানি কাকের সঙ্গে নিজের অনেক মিল খুঁজে পাই। কর্কশ সুরের সঙ্গে তাল। আমরা ধরে নিই, কোকিল তো গান গাইবেই। কিন্তু সেই দায়িত্বটা কাক নিলে কী ঘটতে পারে, সেটাই দেখতে চাই।’

পথচলাটা কেমন ছিল? তা নিয়ে গত বছর সেই সাক্ষাৎকারে আসিফ ইকবাল বলেছিলেন, ‘সারা দিন কাজের পর একটা গান বানাচ্ছি অথবা শো করছি, তখন পুরো দিনের প্যারাটা কমে যায়, উজ্জীবিত লাগে। আমার স্ট্রেসের ওষুধ হিসেবে গান কাজ করে।’

কাকতালে সক্রিয় সদস্যের মধ্যে ছিলেন নাজেম আনোয়ার, অ্যালেক্স জোভেন, ঋদ্ধ, অন্তর ও জাভেদ। নাজেম বাঁশি, ক্ল্যারিনেট, মেলোডিকা বাজান। আলেক্স ডেথ মেটাল ড্রামার। ঋদ্ধ বেজ গিটার বাজান, অন্তর কি-বোর্ড বাজান। আর জাভেদ ব্যান্ডটির ম্যানেজার।