Thank you for trying Sticky AMP!!

আসিফ আকবর। সংগৃহীত

সেটার জন্য যত দিন দেহে প্রাণ আছে যুদ্ধ চালিয়ে যাব

জীবনের দীর্ঘ সময়টাকে তিনি মূল্যায়ন করলেন এভাবে, ‘জন্ম থেকেই জ্বলছি। ফাইট অ্যান্ড রান, ফাইট অ্যান্ড রান অবস্থায় আছি। বলতে পারেন, এই সময়টা আমার জন্য বন্ধুর জার্নি। এই দীর্ঘ সময়ে সুখ, আনন্দ, বেদনা—কত কিছুই মিশে আছে এ জীবনে । আজকের দিনে এতটুকুই বলা।’ সংগীতশিল্পী আসিফ আকবর সোমবার নিজের জন্মদিনে এমন মন্তব্য করলেন। আজ ২৫ মার্চ জনপ্রিয় এই সংগীতশিল্পীর জন্মদিন। ৫২ পেরিয়ে ৫৩ বছরে পা দিলেন তিনি।
ছোটবেলা থেকে গান করলেও ১৯৯৮ সালে মান্না অভিনীত ‘রাজা নম্বর ওয়ান’ ছবিতে প্লেব্যাক করার মধ্য দিয়ে পেশাদারভাবে গানের রাজ্যে ঢুকে পড়েন আসিফ। তাঁর হিসাবমতে, পুরো বয়সের অর্ধেকই তাঁর গানের বয়স, ২৬ বছরে পড়েছে।
এই দীর্ঘ দুই যুগের বেশি সময়ে গান থেকে কী পেয়েছেন আসিফ?—জানতে চাইলে প্রথম আলোকে এই সংগীতশিল্পী বলেন, ‘অনেক কিছুই পেয়েছি। বাংলাদেশে অন্তত একটি খাতে সবাই আমাকে চেনেন, জানেন। মানুষ আমাকে ভালোবাসেন, এর চেয়ে বড় পাওয়া আমার আর কী হতে পারে! সবাই তো চায়, তাঁকে মানুষ চিনুক, জানুক। নামডাকের জন্য আমরা সবাই কিন্তু কাঙাল থাকি। একজন মহাপুরুষও কিন্তু নামডাক চান। আমি নামডাক পেয়েছি। এটি আমার কাছে শান্তির, আনন্দের। সবার জন্য অবিরাম ভালোবাসা।’
তবে এই সংগীতশিল্পী মনে করেন, শিল্পীরা যেমন নামডাক চান, তেমনি শিল্পীরা আবার দেশ, সমাজের জন্যও অনেক কিছুই করেন।

আসিফ বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেক সচেতনতামূলক গান করেছি। আমার কণ্ঠে ভালোবাসার গান, প্রেমের গান, আবেগের গান, বিদ্রোহের গান, সংগ্রামের গান, আন্দোলনের গান, সচেতনতার গান—নানা ধরনের গান করেছি। ক্রিকেট ও ফুটবল নিয়েও করেছি। কতটুকু সফল বা গানগুলো প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছে, তা আমি জানি না। তবে আমি মনে করি, মানুষ আমাকে মনে রাখবে বিভিন্নভাবেই।’
আসিফ আরও বলেন, ‘আমি কিন্তু বেসিক গায়ক নই, গানের প্রতি আমার কোনো দাবিও নাই। আমি তো গান থেকে সুবিধাভোগী। শুভ্রদেব, বিশ্বজিৎ দাদাসহ অনেক শিল্পীই গানটিকে এমনভাবে নিয়ে এসেছেন, অনেকেই আমরা তাঁদের গান করে খাচ্ছি। তাদের গান থেকে আমরা সুবিধাভোগ করছি।’

আসিফ আকবর

আসিফ নিজেকে এই ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে সৌভাগ্যবান ব্যক্তি মনে করেন। গান থেকে অনেক কিছু পেয়েছেন, আসিফ হিসেবে দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে গেছেন। এতে যেমন আনন্দ দেয়, আবার গানের জীবনে মনে কষ্টও গেঁথে আছে এই গায়কের মনে। বলেন, ‘এ জন্য এই ইন্ডাস্ট্রির জন্য আমাকে কিছু করতে হবে। যদিও আগে করেছি, আরও বেশি করতে হবে, করতে চাই। তবে একটি আক্ষেপ আমার রয়ে গেছে। শিল্পীদের স্বার্থে ইন্ডাস্ট্রিকে আন্দোলনমুখী করতে পারলাম না এখনো। এ কারণে আইনগতভাবে আমাদের শিল্পীদের পেনশন স্কিমের মধ্যে আনা গেল না, হলো না।’
এই শিল্পীর বক্তব্য, ‘ফিল্মের গানের সব টাকা হাতে গোনা কয়েকটি অডিও ও ভিডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান খেয়ে ফেলছে। আমাদের অনেক বয়স্ক শিল্পীরা আছেন, যাঁদের কণ্ঠে ফিল্মের অনেক জনপ্রিয় গান আছে। শিল্পীরা অনেকেই অবহেলায় অযত্নে দিন পার করছেন। আমি চেয়েছিলাম এমন একটি প্ল্যাটফর্ম হবে, যেখান থেকে শিল্পীরা পেনশন স্কিম আওতায় থাকবেন। তাঁদের কাছে মাসে মাসে একটা রেভিনিউ শেয়ার যাবে।’

আসিফের কথা, ‘ফিল্মের গানের ওপর কোনো গান নেই। ফিল্মের গানই শিল্পীকে বেশি দিন বাঁচিয়ে রাখে। অনুপমসহ দু-একটি অডিও ও ভিডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ফিল্মের ভালো ভালো গান মাছের দরে কিনেছে। কিন্তু সেখানে কণ্ঠশিল্পীর, গীতিকার-সুরকারের কোনো স্বাক্ষর নেই। গান থেকে যে অর্থ আসছে, তার ভাগ শিল্পী, গীতিকার, সুরকার—কেউ পাচ্ছেন না। গতকাল এক সুরকার আমার কাছে এসেছিলেন। বয়স হয়েছে, ঠিকঠাক চলতে পারে না। আজ যদি গানের রেভিনিউ তাঁর কাছে যেত, তাহলে এই বয়সে সে ঘরে বসে বসে জীবনটা পার করতে পারতেন। কিন্তু অনুপমের মতো ওই প্রতিষ্ঠানগুলো সব পয়সা গিলে খাচ্ছে।’

নিজেকে ব্রাজিল ফুটবল দলের বনেদি সমর্থক মনে করেন আসিফ

আসিফ বলেন, ‘রেডিও, টিভি, বিভিন্ন রিয়েলিটি শো বা স্টেজে শিল্পীরা যে পরিমাণ ফিল্মের গান করেন, ঠিকমতো এর স্বত্ব পাওয়া গেলে এসব গানের গীতিকার–সুরকাররা আজ বিএমডব্লিউ চালাতে পারতেন। বিএমডব্লিউ না হোক, একটা ফ্ল্যাট তো কিনতে পারতেন। বাড়ি ভাড়া আর টানতে হতো না।’

Also Read: ২৫ বছর আগের সেই দিনের কথা বলতে গিয়ে আপ্লুত আসিফ

এই সংগীতশিল্পী আরও জানান, আইনি জটিলতায় গানের স্বত্বের ভাগ পাচ্ছেন না শিল্পী, গীতিকার ও সুরকাররা। আসিফ বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই বিষয়টি নিয়ে আমি কথা বলে যাচ্ছি। আইনি জটিলতায় আমি সফল হতে পারিনি। তবে আমি হাল ছাড়ছি না। এখন পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছি, যার প্রাপ্য তাঁর কাছেই গানের আয় শেয়ার যাবে, সেটার জন্য যত দিন দেহে প্রাণ আছে যুদ্ধ চালিয়ে যাব।’
এদিকে জন্মদিনে কোনো বিশেষ আয়োজন নেই এই গায়কের। পাঁচ বছর ধরেই সাধারণভাবে তাঁর জন্মদিন পালন হয়ে আসছে।

Also Read: সে নকল ও অশ্লীল গায়, বিএনপির রোড শোসহ সব প্রোগ্রামে তাকে নিয়মিতই দেখি, কাকে বললেন আসিফ

আসিফ বলেন, ‘আমার জন্মদিনটি ২৫ মার্চের ভয়াল সেই রাতের দিনই পড়ে গেছে। যেদিন থেকে সরকারিভাবে ২৫ মার্চ দিনটি পালন শুরু হয়েছে, আমি আর জন্মদিন উৎসব করে পালন করি না।’

ফয়’স লেকে প্রথম আলো আয়োজিত মাদকবিরোধী কনসার্টে গান করেন কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবর

তবে জন্মদিনে গান নিয়ে খুশির খবর দিয়েছেন গায়ক আসিফ। জানান, তাঁর সংগীতজীবনের তৃতীয় ইনিংস শুরু করতে যাচ্ছেন তিনি। এরই মধ্যে মুম্বাই বেজ কাজ শুরু করেছেন তিনি।
আসিফ বলেন, ‘সবকিছু এখনই বলছি না। আগামী ২১ এপ্রিল লেবাননে একটি কনসার্টের মধ্য দিয়ে ওয়ার্ল্ড ট্যুর শুরু করব। এ ছাড়া মু্ম্বাই বেজ কাজ শুরু করেছি। অনুরাধা পাড়োয়াল, শ্রেয়া ঘোষালের সঙ্গে গান করেছি। আন্তর্জাতিকভাবে আরও অনেক কাজ করার প্রস্তুতি চলছে। এভাবেই বাকি জীবনটা কাটাতে চাই।’

Also Read: ‘অধিনায়ক স্বাধীনভাবে কাজ করে, আমি তা মনে করি না’ -আসিফ আকবর