রকসল্টের সদস্যরা। ছবি: ব্যান্ডের সৌজন্যে
রকসল্টের সদস্যরা। ছবি: ব্যান্ডের সৌজন্যে

প্রতিযোগিতায় সেরা হওয়া নতুন এই ব্যান্ড সম্পর্কে কতটা জানেন

দেশের রক মিউজিক পেল নতুন এক ব্যান্ড। তরুণ রক মিউজিশিয়ানদের নিয়ে শুরু হওয়া প্রতিযোগিতা ‘দ্য কেইজ’ জয় করে উঠে এল রকসল্ট। শুক্রবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে (কেআইবি) আয়োজিত গ্র্যান্ড ফিনালের শেষে ঘোষণা করা হয় ব্যান্ডটির নাম। তাদের ছয় মাসের জার্নির গল্প শুনলেন নাজমুল হক

গেল ডিসেম্বরে দেশের নানা প্রান্তের সম্ভাবনাময় মিউজিশিয়ানদের কাছ থেকে পারফরম্যান্স ভিডিও আহ্বান করা হয়। ই–মেইলে পাওয়া ভিডিওগুলো দেখে বাছাই ২০০ তরুণ মিউজিশিয়ানকে ডাকা হয়। এ পর্ব থেকে ইয়েস কার্ড পাওয়া ৭৯ জনকে নিয়ে শুরু হয় মূল প্রতিযোগিতা। নিজেরা দলে দলে ভাগ হয়ে গঠন করে ১৭টি ব্যান্ড। এরপর গ্রুমিং সেশন শেষে শুরু হয় লড়াই। দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসায় সবাই ছিল অপরিচিত। সেই মানুষগুলোই কিন্তু একসময় হয়ে ওঠে একেকটা পরিবার।

রকসল্টের সদস্যরা। ছবি: ব্যান্ডের সৌজন্যে

রকসল্টও তা–ই। ব্যান্ডের পাঁচ সদস্যের মাঝে ড্রামার আওয়ান ও বেজিস্ট রাজীব শুধু ঢাকায় থাকতেন। বাকি সদস্যের মাঝে গিটারিস্ট অরূপ থাকতেন ঈশ্বরদীতে, রাযিন চট্টগ্রাম আর ভোকাল নাহিয়ান থাকতেন বরিশালে। প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার পর ঢাকায় চলে আসেন তাঁরা, শুরু হয় নতুন এক ভ্রমণ। যার শেষটায় গত শুক্রবার তাঁদের হাতে ওঠে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি।

রকসল্টের পাঁচ সদস্যের সঙ্গে প্রথম আলোর আড্ডায় শুরুর গল্পটা শোনালেন রাজীব। ‘আমরা সবাই কিন্তু একক পারফরম্যান্স দিয়ে প্রাথমিক ধাপ পার করি। এরপর শুরু হয় চ্যালেঞ্জ। বিচারকেরা আমাদের নিজেদের মধ্যে আলাপ-পরিচয় করার পরামর্শ দেন। এরপর গড়তে হবে ব্যান্ড। সময় দেওয়া হয় মাত্র দুই ঘণ্টা! তখন কেউ কাউকে চিনতাম না, কার গানের টেস্ট কেমন, তা–ও জানা ছিল না। কিন্তু হাতে সময় কম, যা করার এই সময়েই করতে হবে। অরূপ, রাযিন ও নাহিয়ান—এ তিনজন প্রথমে এক হন।

রকসল্টের সদস্যরা। ছবি: ব্যান্ডের সৌজন্যে

এরপর যুক্ত হন আওয়ান আর সবশেষে আমি।’ রাযিন বলেন, আগে নিজেদের মধ্যে পরিচয় না থাকলেও প্রতিযোগিতায় এসে আড্ডার ফাঁকে তিনজনের সখ্য গড়ে ওঠে। রাজীব বলেন, ‘সবশেষ তো আমি যুক্ত হই। অনেকের সঙ্গেই কথা হচ্ছিল, কিন্তু গানের টেস্ট যেন মেলাতে পারছিলাম না। সবার সঙ্গে কথা বলতে বলতে সব মিলে যায়। পরিকল্পনা হয় এই পাঁচজনেই শুরু করব আমরা, দুজন গিটারিস্ট যেহেতু আছে, কি–বোর্ড আপাতত না হলেও চলবে। এভাবেই শুরু।’

দল গঠনের পর নাম ঠিক করতে বলেন বিচারকেরা। ‘রকসল্ট’ প্রস্তাব করেন রাজীব। দলের সবাই তখন বলে ওঠেন, লবণ নিয়ে নাম কেন! রাজীব তখন বলে ওঠেন, রক মিউজিকে আমরা এক্সট্রা লবণ ছিটাতে চাই। রাজীবের কথায় একমত হয়ে রাযিন ব্যান্ডের ট্যাগলাইন ঠিক করেন, ‘মিউজিক ইজ বেস্ট সার্ভড উইথ এক্সট্রা সল্ট’। এভাবেই শুরু হয় ‘রকসল্ট’–এর স্বপ্নযাত্রা। তারাসহ ১৭ ব্যান্ড নিয়ে শুরু হয় মূল প্রতিযোগিতা। বিচারকেরা ব্যান্ডগুলোকে প্রস্তুতির জন্য সময় দেন দুই দিন। জানানো হয় কভার গান করা যাবে, তবে নিজেদের মৌলিক গান হলে নম্বর বেশি পাওয়ার সুযোগ থাকছে। রকসল্টসহ বাকি ব্যান্ড নতুন গান তৈরিতে নেমে পড়ে।

রকসল্টের সদস্যরা। ছবি: ব্যান্ডের সৌজন্যে

নতুন গান তৈরির পেছনের গল্প জানান আওয়ান, ‘হাতে সময় মাত্র দুই দিন, এরই মধ্যে নতুন গান ও কম্পোজিশন—বেশ চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে সবাইকে। আমার ও নাহিয়ানের লেখা কিছু গান নিয়ে শুরু হয় পরিকল্পনা। সেখান থেকে আমার “আকাঙ্ক্ষা” শিরোনামের একটি গান প্রথমে তৈরি হয়। তবে এ গানটা শেষে করেছিলাম। প্রতিযোগিতায় আমাদের প্রথম গান “নিষ্পত্তি”।’ প্রতিযোগিতার পরবর্তী পর্বগুলোর কথা মাথায় রেখে এই দুই দিনে তৈরি করা হয় চারটি গান। গানগুলো দিয়েই সেরা সতেরো থেকে সেরা আট, সেরা ছয় পেরিয়ে চ্যাম্পিয়নের খেতাব জেতে রকসল্ট।

জয়ের পর নিজেদের দায়িত্ব বেড়ে গেছে, মনে করছেন ব্যান্ডটির সদস্য নাহিয়ান ও অরূপ। নাহিয়ানের কথায়, ‘কিছুটা চাপ অনুভব করছি। এর মাঝে একটা ফ্যানবেজও তৈরি হয়েছে। তাই দায়িত্বটা বেড়ে গেছে।’ নাহিয়ানের সঙ্গে অরূপ যোগ করেন, ‘আমাদের ব্যান্ড মিউজিক অনেক সমৃদ্ধ। এখানে প্রতিনিধিত্বের সুযোগ পাওয়া তরুণ হিসেবে আমার কাছে অনেক কিছু। পুরো জার্নিতে দেশের ব্যান্ড মিউজিকের অনেক মেন্টরের সান্নিধ্য পেয়েছি, যা ভবিষ্যতের পথচলায় অনেক সহযোগিতা করবে।’
‘রকসল্ট’ যে ইতিমধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে, তার প্রমাণ মিলেছে শুক্রবার। এদিন সবশেষে মঞ্চে আসে তারা। নিজেদের মৌলিক তিন গান ও একটি কভার পরিবেশন করে তারা। এ সময়ে প্ল্যাকার্ডসহ বেশ তরুণ-তরুণীর ভিড় জমে মঞ্চের সামনে। পারফরম্যান্স শেষে উপস্থিত দর্শকেরা দাঁড়িয়ে তাঁদের অভিবাদন জানান। দর্শক সারিতে সংগীতশিল্পী রফিকুল আলম, ফুয়াদ নাসের বাবু ও গিটারিস্ট আবদুল্লাহ আল মাসুদও ব্যান্ডটির পারফরম্যান্সের প্রশংসা করেন।

এর মাঝে ছয়টি গান বেঁধে ফেলেছে রকসল্ট। দুটির রেকর্ডিংও শেষ। আরেকটি গান যুক্ত করে সামনে নতুন অ্যালবাম আনার পরিকল্পনা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কনসার্টের প্রস্তাবও পাচ্ছে রকসল্ট। ফাইনালের আগে গত ২৪ জুন রাজধানীর উত্তরার শেফস অ্যাভিনিউতে কনসার্টে গান শুনিয়েছে। শুধু দেশের গণ্ডিতে নয়, বিশ্বমঞ্চেও দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে চান তাঁরা।