চাঁদপুর সরকারি কলেজের ৭৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে গান গাইতে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে এসেছেন ওপার বাংলার জনপ্রিয় শিল্পী নচিকেতা চক্রবর্তী। ঢাকায় তাঁর মুখোমুখি হয়েছিলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী গীতিকবি কবির বকুল
কত দিন পর বাংলাদেশে এলেন?
প্রায় ছয়–সাত বছর পর। সম্ভবত ২০১৬ সালে এসেছিলাম।
এবার কী উদ্দেশ্যে এসেছেন?
এসেছি চাঁদপুরে সরকারি কলেজের ৭৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে গান গাইতে। ভিসা পাওয়া থেকে শুরু করে কলকাতা থেকে চাঁদপুর যাওয়া—অনেক ঝক্কি মোকাবিলা করতে হয়েছে। তবে অনুষ্ঠানে গিয়ে মঞ্চে ওঠার পর সব অবসাদ, বিরক্তি ভালো লাগায় পরিণত হয়েছে। প্রায় ৫০ হাজার ছেলেমেয়ে, দর্শক দাঁড়িয়ে আছেন, আমার সঙ্গে গাইছেন। ক্লান্তি ধুয়েমুছে গেল। অভিমান কোথায় উড়ে গিয়ে অনুরাগ হয়ে গেল! অসাধারণ! অসাধারণ! অসাধারণ! এর আগে যতবার এসেছি, সাধারণ মানুষের সামনে গান গাওয়া হয়নি। এবার মুক্তমঞ্চে উন্মুক্ত দর্শকের সামনে গেয়েছি। অসাধারণ লেগেছে।
ঢাকায় আসার অভিজ্ঞতা কেমন?
ঢাকা তো জ্যামের শহর হয়ে গেছে। এটা নিয়ে গান লেখা উচিত। মানুষের জীবনের চার–পাঁচ ঘণ্টা যদি জ্যামেই নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে আর এগোবে কীভাবে? আমি তো ঠিক করেছি, এরপর এসে যেখানে থাকব, সেখানেই গান রেকর্ড করব, সবাইকে ডেকে আড্ডা দেব, একই জায়গায় থাকব। কোথাও যাব না। জ্যামবন্দী থাকার চেয়ে ঘরবন্দী থাকা ভালো।
এবার এসে কী পরিবর্তন দেখতে পেলেন?
আমি তো তোমার বাড়িতেই ছিলাম। প্রথম দিন মধ্যরাত অবধি ঘরোয়া আড্ডা দিলাম। গান করলাম। সেখানে প্রচুর নতুন ছেলেমেয়ের দেখা মিলল।
গানের মধ্যে কী পরিবর্তন লক্ষ করলেন?
আগে বাংলাদেশে যাদের গান শুনেছি, অধিকাংশই ফোকের ওপর বেশি কাজ করতে দেখেছিলাম। কিন্তু এবার ওই আড্ডায় অনেক ছেলেকে দেখলাম, শুনলাম। শান, সাব্বির, রাশেদ, মেহরাব। রাশেদ ছেলেটা ‘মা’ নিয়ে গান গাইল। কী অসাধারণ গাইল!
আপনার গানে যে দর্শন, এখনকার গানে সেটা দেখা যায় না। কিন্তু নতুন ছেলেমেয়েরা আবার আপনার এই ধারার গানের ভক্ত। বিষয়টাকে কীভাবে দেখেন?
অবশ্যই ভালো লাগে, নতুন ছেলেমেয়েরা আমার গান পছন্দ করে। আমাকে অনুসরণ করে। আমি এবারের ট্যুরে এসে সাংঘাতিক অবাক হয়ে গেছি। দেখলাম, গানের কথায়, সুরে আমূল পরিবর্তন হয়েছে এবং সেটা ইতিবাচক একটা দিক।
‘এই বেশ ভালো আছি’তে যে নচিকেতাকে আমরা পেয়েছিলাম, সেই ধারাবাহিকতায় আপনার অনেক গান পেয়েছি, যে গান মানুষের মুক্তির কথা বলে। সেই নচিকেতা কি এখনো ওই জায়গায় আছেন, নাকি সরে গেছেন?
না, সরে যাইনি। সেই জায়গাতেই আছি। কিন্তু তখন বয়সটা কম ছিল। তখন সাহিত্য বা কবিতার ভাষা এক রকম ছিল। এখন বয়সটা বেড়েছে, মনে হয় একটু নরম হয়েছি।
এই ‘নরম’ হওয়াটা কেমন?
তখন আমি যেভাবে চিৎকার করতাম, আমি দুই বাংলার ক্ষেত্রেই যদি ধরি। মানুষকে যেমন কোনোভাবে বিভক্ত করা যায় না। যেমন আমার দুটো লাইন—‘জাতিবিদ্বেষেতে ব্যস্ত যারা, তাদের বলা হোক, পৃথিবীতে দুটোই জাতি, গরিব আর বড়লোক।’ এটাতে আমার বিদ্বেষ, রাগ, ক্ষোভটা বেরিয়ে পড়ে। আর এখন যেভাবে লিখছি—‘এক পৃথিবীর স্বপ্ন দেখি আমি, যে পৃথিবীর শুরুও নেই শেষ/যে পৃথিবীর সীমান্ত নেই কোনো, যে পৃথিবীর একটা মাত্র দেশ।’ আসলে বয়সের একটা ভার আছে না, বয়সের একটা নির্দিষ্ট দৃষ্টিকোণও আছে, সেই দৃষ্টিকোণের কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। আমার মনে হয়, নতুনদের মধ্য থেকেই এমন কেউ বের হয়ে যাবে, যারা এমন গান গাইবে, লিখবে। দেখো, সৃজনশীল ভাবনাচিন্তা অনেক কিছুই হত্যা করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তারপরও মানুষ কিন্তু প্রতিবাদের গান শোনে। এখন মুঠোফোন থেকে কিছু মানুষ মুখ তুলছে।এটাই ইতিবাচক দিক। বিশাল চক্রান্ত মানুষকে একা করে দেয়, সবকিছু ভার্চ্যুয়াল করে দেয়, আসল সমস্যার কথা ভুলে যায় মানুষ। তারপরও এই জায়গা তৈরি হয়ে গেছে, এখান থেকেও যে গান উঠে আসছে, সেটাও রহস্যের একটা কারণ। তুমি তোমার কথাই ধরো। প্রথমে প্রেমের গান, ফিল্মের গান লিখতে। এই মুহূর্তে তুমি যখন গান লিখছ, এই যে আমার জন্য যে গান লিখলে, বেলাল খানের সুরে যে গান আমি গাইলাম, ‘তুমি তোমার কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের দিকে হেঁটে যাচ্ছ।’ এটা কিন্তু একটা কবিতার লাইন, গানের লাইন নয়। দেখো তোমার মধ্যেও একটা সময়ের ছাপ পড়ছে, সময় তোমাকে ডাকছে।
তাহলে সময়কে ধরে চলা উচিত?
তুমি চলবে কি, সময় তোমাকে চালিয়ে নেবে।
নাহলে পিছিয়ে পড়ার ব্যাপার আছে কি?
দেখো সংস্কৃতি কখনো পিছিয়ে পড়ে না। একেকজন একেকভাবে লেখে, কেউ এগিয়ে নেয়, কেউ পিছিয়ে নেয়। মানুষ ইতিহাস মনে রাখে।
আপনি শুধু নিজেই গান করেন না। নতুন অনেক প্রতিভাবান শিল্পীকেও তুলে আনেন। এর মধ্যে শুভমিতা অন্যতম। এ ছাড়া সুদেষ্ণাও রয়েছেন। এটা কি এখনো অব্যাহত রয়েছে?
এটা সারাক্ষণই চলছে। তূণীর চক্রবর্তী নামে একজন রয়েছে। খুব ভালো গান করে। চেষ্টা করছি ওকে দিয়ে ভালো কিছু করা যায় কিনা।
প্রতিভাবান শিল্পী বের করে আনার জন্য রিয়েলিটি শো কতটা কার্যকর? নাকি আর কোনো পথ আছে?
রিয়েলিটি শো থেকে ট্যালেন্ট আসছে ঠিক। কিন্তু দেখো, তারা কিন্তু পুরোনোদের গানই করে যাচ্ছে। নতুন গান করার উদ্যোগ নেই। কালজয়ী গানগুলো এত বেশি চর্চিত হওয়ায় ফিকে হয়ে যাচ্ছে, বর্ণহীন হয়ে যাচ্ছে। এটাকে আমি ভালোভাবে দেখছি না। দেখলে নতুন গান লিখতাম না।
এটা পরিবর্তনের রাস্তা কী?
এটাও একধরনের খেলা। আমাদের এখানে এফএমে নতুন গান হয়। কিন্তু বাজানো হয় না। তাহলে একটা নতুন গানের প্রমোশন কীভাবে হবে? কেন হয় না, তার কোনো ব্যাখ্যা নেই কিন্তু। নিশ্চয়ই একটা চক্রান্ত আছে। তাদের চেষ্টা নতুন গানকে দাবিয়ে রাখা। সমকালীন কোনোকিছুকে কোনোভাবে প্রোমোট করতে চায় না এই চক্র। ফলে কালের গহ্বরে হারিয়ে যাবে নতুনদের কাজ।
শ্রীকান্ত আচার্য যেমন হেমন্ত কিংবা অন্য শিল্পীদের গান করে জনপ্রিয় হয়েছেন এবং নতুন প্রজন্মের কাছে সেটা আর হেমন্তের গান থাকছে না। নতুন প্রজন্ম জানছে, এটা শ্রীকান্ত আচার্যর গান।
শ্রীকান্তকে আমি ভালোবাসি, শ্রদ্ধাও করি। প্রচুর জ্ঞান তার। শ্রীকান্ত কিন্তু প্রচুর গান শোনে, প্রচুর চর্চা করে। কিন্তু সে এই ফাঁদে পড়ে গেছে। ওর গায়ে এই ট্যাগ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আসলে এটা একটা চক্রান্ত।
আপনার ট্রেন্ডে অনেকেই হাঁটছেন। সফল কাকে বলবেন?
সফল কেউ হয়নি। শুধু অঞ্জন আছে। ওর দু–তিনটা গান তো অসাধারণ। তবে টোটাল মিউজিক্যালি কাজটা অনেকেই করেছেন। তাঁরা সফল না হলেও ফেলে দেওয়ার মতো নয়।
কবীর সুমনকে কী বলবেন?
তাকে নিয়ে আমি কোনো কথাই বলতে চাই না।
তিনি কি তাহলে আলাদা পড়ে গেলেন?
সেটা তো আমার ব্যাপার নয়। সব দায়িত্ব কি আমার?
গান করতে গিয়ে অনেকে সুবিধাবাদীর দলে ভিড়ে গেছেন। আপনাকে সেই জায়গায় দেখা যায়নি বা আপনি সুবিধা নেননি।
তোমরা আমাকে দেখেছ, জেনেছ। আমার কোনো লোভ নেই। যার লোভ নেই, চাহিদা নেই, তাকে কোথাও বাঁধা যায় না। তবে অমরত্বের প্রতি লোভ আছে। আমি না থাকলেও আমার গান আমাকে অমরত্বের স্বাদ দেবে।
জনশ্রুতি আছে, আপনি এমএলএ, মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাবও পেয়েছিলেন।
আমাকে অনেকবার বলেছে। আমি বিনয়ের সঙ্গে বলেছি, কাজটা আমি পারব না। এমপি হব, কিন্তু সংসদে যাব না, মিটিং করব না, অন্যরা আমার কাজগুলো করবেন—এ আমাকে দিয়ে হবে না। আমি ভীষণ মাথাগরম লোক। আমি যে কাজ করিনি, সেটার ফল আমি নিতে পারব না। আমি হিপোক্রেট হতে পারব না।
আপনার অনেক সতীর্থই তো এই সুবিধা নিয়ে এখন এমএলএ, মন্ত্রী।
তাঁরা পারছেন জনগণের সেবা করতে। আমি পারি না।
আপনি তো একসময় রাজনীতি করতেন। সেই জায়গা ছেড়ে কেন গানের জগতে চলে এলেন?
আমি তো আমার গানে জনমানুষের কথাই বলি, বঞ্চিত মানুষের কথাই বলি। সবাই স্টেনগান নিয়ে যুদ্ধ করবে, তা তো নয়। কাউকে না কাউকে এই কাজও করতে হবে। আমি সেই কাজই করছি। একসময় কমিউনিস্ট পার্টি করতাম। মাওবাদে বিশ্বাসী ছিলাম। এখনো আমি কমিউনিস্ট। তবে আমি প্রাইভেট। আমার কোনো দল নেই।
একটা সময় মমতা ব্যানার্জির জন্য ক্যাম্পেইন করেছিলেন, নাকি তিনি আপনাকে নিয়ে গিয়েছিলেন?
আসলে ওই সরকারের বিরুদ্ধে আমিও নেমেছিলাম, তিনিও নেমেছিলেন। আমি আপামর জনগণের মতোই নেমেছিলাম। কিন্তু আমিই টার্গেট হয়ে গেলাম। তখন দেখলাম, একা কিছু তো করা সম্ভব নয়। তাই তার সঙ্গে যুক্ত হলাম। বক্তৃতা দিলাম। তার সঙ্গে একটা সখ্য হলো। সম্পর্কটা ভাই–বোনের হয়ে গেল। প্রচুর ঝগড়া করি আমরা। ওর বকুনিটাই একমাত্র শুনি। পৃথিবীতে আর কারওটা শুনি না।
আপনি যেসব বিষয় নিয়ে গান লেখেন, মানুষ তা গ্রহণ করে। তখন কি আপনার ওপর এমন কোনো চাপ থাকে যে এ গান লেখা যাবে না?
আমার দৃষ্টিকোণ থেকে যা করি, সেটার প্রতি মমতা দিদির শ্রদ্ধা আছে। একটা অনুষ্ঠানে তিনি আমার গান শুনে বলেছেন, একজন রাজনীতিবিদ তিন ঘণ্টা বক্তৃতা দিয়ে যা করতে পারেন, নচি, তুমি একটা গান দিয়ে সেটাই সহজে করে দেখাতে পারো। তিনি ভীষণ রকম ভালো মানুষ। যে যা–ই বলুক, আমরা কিন্তু স্বাধীনতার পর এমন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ডায়নামিক নেতা আর পাইনি। এমন ভালো মানুষও পাইনি।
এই যে মমতা ব্যানার্জি কলকাতাকে ‘বাংলা’ নাম দিয়েছেন, এটাকে কীভাবে দেখছেন?
যা করছেন, ভালো করছেন। এটা নিয়ে আমি চিন্তিত নই। নাম বদলে গেলে কী যায় আসে!
আপনি গান লেখার পাশাপাশি কবিতাচর্চাও করেন। সাম্প্রতিক কোনো কবিতা...
দেখছে সবাই ছুটছি আমি, উড়িয়ে পথের ধুলো
হিংসে ছড়ায় হলুদ চোখে পথের মানুষগুলো
দেখছে সবাই।
দেখছে সবাই উড়ছে আমার লম্বা চুল, চোখের তারায় দম্ভ
আমার জন্য দুহাত বাড়িয়ে আকাশস্তম্ভ।
দেখছে সবাই।
দেখছে সবাই আমার গানের বেপরোয়া ছন্দ
ভাবছে সবাই ভাগ্যবান বেজায় আনন্দ।
দেখছে না কেউ আমার চলা বক্র নাকি সিধে
বাঘের পিঠে সওয়ার আমি বাঘটার খুব খিদে।
নচিকেতার বিরুদ্ধে গানের জন্য কতগুলো মামলা হয়েছে?
মামলা তো আমাদের দেশে তেমন হয় না। আমাদের দেশে সমালোচনা হয়, লেখালেখি হয়। এখন আমাকে নিয়ে কেউ তেমন নাড়াচাড়া করেন না।
এগুলো উপভোগ করেন?
উপভোগ করি না। আমার মেয়ে ধানসিঁড়ি বড় হচ্ছে। তার একটা জগৎ আছে। ও আমাকে ভুল ধরিয়ে দেয়, অন্যায় হয়েছে বলে।
বাংলাদেশের কার গান আপনার ভালো লাগে?
ওয়ান অ্যান্ড ওনলি রুনা লায়লা। রুনাদির পারফরম্যান্সের জবাব নেই। তাঁর গায়কী নিয়ে কী বলব! উনি একজন কমপ্লিট সিঙ্গার। আসলে রুনাদিকে কোনো তুলনা বা কোনো সারির মধ্যে রাখাটাই ঠিক নয়। তিনি অন্য লেবেলের ট্যালেন্ট। এবার এসে জানলাম, রুনাদি একজন ট্যালেন্টেড কম্পোজারও। তাঁর কম্পোজিশনে চারটা গান—একটা আশা ভোঁসলে, একটা হরিহরণ, একটা আদনান সামি, আরেকটা রাহাত ফতেহ আলী খান গেয়েছেন। গানগুলো এত অসাধারণ হয়েছে, রুনাদি যে কত ভালো সুরকার, এটা জানা উচিত। আসলে বাংলাদেশের গান বলতে রুনাদির গানকেই বুঝি। আইয়ুব বাচ্চুর সঙ্গে আমার পরিচয় ছিল, জেমসকেও চিনি। ওদের গান ভালো লাগে। অন্য ধারার গান করে। আমিও এমন গান গাওয়ার চেষ্টা করব।
নচিকেতা তো একটা দর্শন! নাকি?
না না, নচিকেতা একা কোনো দর্শন নয়। আমরা একঝাঁক মানুষ মিলেই দর্শন। আমরা সাংস্কৃতিক যোদ্ধা। প্রায় যুদ্ধ করছি সংস্কৃতি নিয়ে। আমাদের তেমন টাকা নেই, গানটাই আছে। আর নতুন কথা যে বলে, তাকেই তো দার্শনিক বলে। তুমিও তো দার্শনিক। কলমটা হাতে তুলে নিয়েছ। আমি বলব, যারাই নতুন কিছু ভাবছে, যারা পৃথিবীতে নতুন কিছু দিচ্ছে, তারা সবাই দার্শনিক।