Thank you for trying Sticky AMP!!

রাহুল আনন্দের স্টুডিওতে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ

বাংলা গানে মজলেন মাখোঁ

ধানমন্ডির এই বাড়িতে গানের দল ‘জলের গান’–এর সংগীতশিল্পী, অভিনয়শিল্পী ও বাদ্যযন্ত্রী রাহুল আনন্দ ও চিত্রশিল্পী ঊর্মিলা শুক্লা দম্পতি ভাড়া থাকেন, সঙ্গে ছেলে তোতা। পুরোনো বাড়িটির কোনো নাম নেই, এটিকে ভালোবেসে ‘ভাঙাবাড়ি’ নাম দিয়েছেন রাহুল আনন্দ।

তাঁদের সংসারে অতিথি হয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ। অতিথিকে বরণ করতে বাড়তি কৃত্রিমতা রাখনেনি তাঁরা। সদর দরজার চৌকাঠ পেরোলেই পিচঢালা আঙিনা, সন্ধ্যায় আঙিনায় রংবেরঙের ফুলের পাপড়ি বিছিয়ে আলপনা এঁকেছেন ঊর্মিলা শুক্লা।
গতকাল রোববার রাত ১১টার দিকে এমানুয়েল মাখোঁকে ‘ভাঙাবাড়ি’–তে বরণ করে তাঁকে স্টুডিওতে নেওয়া হয়। স্টুডিওর দেয়ালজুড়ে থরে থরে সাজানো রয়েছে বাদ্যযন্ত্র। দ্রৌপদী, পাগলা, পদ্মা, মনদোলা, তোতাবান, চন্দ্রবান—রাহুল আনন্দের নির্মিত সেই সব বাদ্যযন্ত্রের কী বাহারি নাম। এটিকে স্টুডিও বললে ভুলই হবে, এটি যেন রীতিমতো বাদ্যযন্ত্রের জাদুঘর।
গানে–আড্ডায় বাংলাদেশের লোকসংগীতের সমৃদ্ধ ভান্ডারের সঙ্গে মাঁখোর পরিচিত ঘটিয়েছেন রাহুল আনন্দ। লালন থেকে প্রতুল মুখোপাধ্যায়, আব্বাসউদ্দীন আহ্‌মদ থেকে আবদুল আলীমের গান শুনিয়েছেন তিনি। কখনো ‘আমি বাংলায় গান গাই’, কখনো ‘নাইয়ারে নায়ের বাদাম তুইলা, কোন দূরে যাও চইলা’ গেয়ে শোনান রাহুল আনন্দ।

সংগীতের সুর নিজেই একটি ভাষা, ভাষার ব্যবধান ছাপিয়ে রাহুল আনন্দের সুরলহরিতে মজেছিলেন মাখোঁ। মাখোঁ এতোটাই মশগুল ছিলেন যে সূচি অনুযায়ী রাহুল আনন্দের স্টুডিওতে ৪০ মিনিটের মতো অবস্থানের কথা ছিল মাখোঁর, তবে সেটা বাড়তে বাড়তে ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিটে গিয়ে থেমেছে।

‘ভাঙাবাড়ি’–তে এমানুয়েল মাখোঁর সঙ্গে রাহুল আনন্দ, ঊর্মিলা শুক্লা ও তোতা

এমানুয়েল মাখোঁকে একটি একতারা উপহার দিয়েছেন রাহুল আনন্দ। তাঁর কাছে একতারা বাজানো শিখেছেন মাখোঁ। ফরাসি প্রেসিডেন্টের তরফ থেকে একটি কলম উপহার পেয়েছেন তিনি।

রাহুল আনন্দ বলেন, ‘উনি বলেছেন, আমি যেন এই কলম দিয়ে গান, কবিতায় প্রকৃতির কথা লিখি, সেই গান, কবিতা উনি শুনবেন। আমি ছোট মানুষ, আমার সাধ্যের মধ্যে তাঁকে সুখী করার চেষ্টা করেছি।’
গান-আড্ডায় অল্প সময়ের মধ্যেই সবার সঙ্গে ফরাসি প্রেসিডেন্টের সখ্য গড়ে ওঠে। আড্ডায় ব্ল্যাক কফিতে চুমুক দিতে দেখা গেছে এমানুয়েল মাখোঁকে। তবে এর বাইরে আর কোনো খাবার খাননি তিনি।

ফরাসি প্রেসিডেন্টের তরফ থেকে একটি কলম উপহার পেয়েছেন রাহুল আনন্দ

আড্ডার একপর্যায়ে রাহুল আনন্দকে ফরাসি প্রেসিডেন্ট জিজ্ঞাসা করেন, ‘তোমার স্বপ্ন কী?’ রাহুল আনন্দ বলেন, ‘সবুজ পৃথিবী দেখতে চাই।’ এরপর ফরাসি প্রেসিডেন্ট জানতে চান, ‘সে ক্ষেত্রে তোমার ভূমিকা কী?’ রাহুল আনন্দ বলেন, ‘আমি যেখানেই গান করি, সেখানেই গাছ লাগানো, নদী-প্রকৃতির যত্ন নেওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করি। ১৯৯৪ সাল থেকে ফাঁকা জায়গায় আমি গাছ লাগাই, কিছুদিন আগে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তেও গাছ লাগিয়েছি।’
রাহুল আরও বলেন, ‘আমি বাদ্যযন্ত্র বানাতে ভালোবাসি। বাদ্যযন্ত্র বানাতে কাঠ লাগে, কাঠের জন্য গাছ দরকার। আর আমি নিজেকে পাখি মনে করি। পাখির জন্য গাছ অপরিহার্য। আমি গাছ না লাগালে পরবর্তী সময় যন্ত্র বানানোর জন্য গাছ কোথায় পাবে? পাখিরা কোথায় থাকবে?’

ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ একজন সংগীত-অনুরাগী। তিনি নিজেও শখের বশে গান করেন। এই বছর এপ্রিলে প্যারিসের রাস্তায় গান গাইতে দেখা গেছে তাঁকে, পরে সেই ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তিনি একজন পিয়ানিস্টও।

রাহুল আনন্দের স্টুডিওতে এমানুয়েল মাখোঁসহ অন্যরা

ফ্রান্সের এমানুয়েল মাখোঁ প্রশাসন সংস্কৃতিকে আলাদা গুরুত্ব দেয়। যেকোনো দেশে সফরে গেলে সেই দেশের শিল্পীদের স্টুডিও থেকে ঘুরে আসেন তিনি, বাংলাদেশে এসে রাহুল আনন্দের স্টুডিও ঘুরলেন তিনি। এ সময় তাঁর সঙ্গে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সংগীতশিল্পী আশফিকা রহমান, কামরুজ্জামান স্বাধীন ও আফরোজা সারাসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।


দুই দিনের সফর থেকে আজ সোমবার বিকেলে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর ঢাকা ত্যাগ করার কথা রয়েছে।

Also Read: রাহুল আনন্দের স্টুডিও ঘুরবেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট