সাহিল সানজান
সাহিল সানজান

গান নিয়ে দেশজুড়ে ঘুরতে চান সাহিল

‘অনুভূতি’, ‘থান্ডার’-এর মতো গান গেয়ে টিকটকে ‘ভাইরাল’ সাহিল সানজান। গাওয়ার পাশাপাশি নিজেই গান লেখেন, সুর করেন, সংগীত প্রযোজনা করেন চট্টগ্রামের এই তরুণ সংগীতশিল্পী।

টিকটক ছাড়িয়ে ইউটিউব আর ফেসবুকেও ছড়িয়ে পড়েছে ‘অনুভূতি’। গানটি দিয়ে তরুণ শ্রোতাদের মনে একধরনের আকুলিবিকুলির জন্ম দিয়েছেন সাহিল সানজান। গানটির মধ্যে অভিমান আর প্রেমকে খুঁজে ফিরছেন তরুণেরা। ২০২২ সালের ৪ মে মুক্তি পাওয়া লাভ ভার্সেস ক্রাশ নাটকে গানটি গান সাহিল। গানটির সুর বেঁধেছেন পিরান খান, কথা লিখেছেন পিরান ও তানজিব সৌরভ।

প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গানটি বিষয়ে সাহিল বলেন, ‘সেই সময় বিরহের গান গাইতে বেশি পছন্দ করতাম। আমার মনে হতো, আমার কণ্ঠের সঙ্গে সেটাই সবচেয়ে বেশি যায়। একই সঙ্গে আমার নিজের কণ্ঠ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষারও ইচ্ছা ছিল। গানটি একেবারে নিখুঁত করার জন্য পিরান ভাইয়ের সঙ্গে প্রায় পাঁচবার রেকর্ড করেছি।’

সাহিল সানজান

২০১৭ সালে ইউটিউব চ্যানেল খোলেন সাহিল সানজান। ২০১৮ সালে স্টুডিও রেকর্ড করা শুরু করেন। তখন গান কাভার করতেন তিনি। এর মধ্যে অড সিগনেচার ব্যান্ডের ‘আমার দেহখান’, খালিদের ‘সরলতার প্রতিমা’সহ বেশ কয়েকটি গান কাভার করে আলোচিত হন। ‘সরলতার প্রতিমা’ বিষয়ে সাহিল বলেন, ‘গানটির প্রতি মানুষের ভালোবাসা আমাকে বুঝতে সাহায্য করেছিল, অন্য সব ভাষায় গান গাইলেও বাংলা গানই হবে আমার প্রধান পরিচয়।’

এর মধ্যে ২০২১ সালে গ্রামীণফোনের ‘নতুন গানের খোঁজে’ ক্যাম্পেইনে প্রথম স্থান অর্জন করেন তিনি। সেই বছরের মার্চে গায়ক, সুরকার ও সংগীত পরিচালক ফুয়াদ আল মুক্তাদিরের সঙ্গে ‘ওড়াও স্বপ্নঘুড়ি’ গানে কোলাবরেশন করেছেন সাহিল। সেটিই তাঁর প্রথম মৌলিক গান।

এরপর গত চার বছরে ‘ফিরে পাব না’, ‘হারাবার মতো কিছু নেই’, ইংরেজি গান ‘থান্ডার’, ‘আমার ভাই’সহ বেশ কয়েকটি মৌলিক গান প্রকাশ করেছেন সাহিল। নিজের বেশির ভাগ গান নিজেই লেখেন, সুর করেন তিনি। সংগীত প্রযোজনাও করেন।

সাহিল সানজান

‘হারাবার মতো কিছু নেই’ দিয়ে সংগীত প্রযোজক হিসেবেও অভিষেক। সাহিল বলেন, ‘এটিই আমার প্রথম গান, যেখানে আমি নিজেই মিউজিক প্রোডাকশন শুরু করি। এটি আমার প্রথম লেখা ও সুর করা গান। গানটির কাজ ২০২১ সালের ডিসেম্বরে শুরু করি এবং সেখান থেকেই আমার সংগীত প্রযোজনার যাত্রা শুরু হয়। আমি অনেকগুলো বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারলেও এই গানের আগে কখনো প্রফেশনাল প্রোডাকশনে আমার এই দক্ষতা ব্যবহার করিনি।’

সাহিল সানজান

ব্যান্ড ও পরিবার থেকে অনুপ্রেরণা

পরিবারের উৎসাহেই গানে এসেছেন সাহিল। মা ডেইজি চৌধুরী গান করেন। তাঁর কাছেই সংগীতে হাতেখড়ি। সংগীতগুরু প্রয়াত শহীদুল্লাহ কায়সারের কাছে গান শিখেছেন। তবে সংগীতের প্রতি ভালোবাসা জন্মে ২০১৪ সালে, ওয়ান ডিরেকশন ব্যান্ডের পরিবেশনা দেখে। সাহিল বলেন, ‘ওয়ান ডিরেকশন ছাড়াও চার্লি পুথ ও এড শিরান আমাকে ইংরেজি পপ গাইতে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করেছে। বাংলাদেশের সংগীতশিল্পীদের মধ্যে ফুয়াদ ভাই, হাবিব ভাই, ওয়ারফেজ ও অর্থহীন আমার খুব প্রিয়, তারা আমাকে বাংলা সংগীতকে আরও বেশি ভালোবাসতে শিখিয়েছে।’

শাস্ত্রীয় সংগীত, লালনগীতি ও নজরুলসংগীত গাইতে ভালোবাসেন সাহিল। বাংলা, ইংরেজি, উর্দু ও হিন্দি ভাষায় গান করেন। সাহিলের জন্ম ও বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে। বর্তমানে চট্টগ্রামেই বাস করছেন। তাঁর বাবা হুমায়ুন চৌধুরী গান লেখেন, বড় ভাই সিয়ামও গান গাইতেন।

গায়ক হয়ে ওঠার পেছনে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের ভূমিকা রয়েছে বলে জানান সাহিল, ‘২০১৭ সালে ইউটিউবে আমার প্রিয় কিছু ইংরেজি গানের কাভার আপলোড করা শুরু করি। আমি গাইব, মানুষ শুনবে, তখন এ পর্যন্তই ছিল আমার স্বপ্ন। ইউটিউব আমার সংগীতজীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। কারণ, টানা তিন বছর সেখানে গান আপলোড করতে করতে আমি আমার মৌলিক দক্ষতাগুলো দৃঢ়ভাবে শিখেছি ও বুঝতে পেরেছি। এরপর মৌলিক গান করার পরিকল্পনা করি।’

সাহিল বলেন, ‘পরে অন্যান্য প্ল্যাটফর্মেও গান আপলোড করতে শুরু করি, যা আমাকে আরও সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গান আপলোড করার ধারণাটাও আমি ইউটিউবারদের দেখেই পেয়েছিলাম। যদি ইউটিউবে না আসতাম, তাহলে হয়তো এ সংগীতযাত্রাই শুরু হতো না।’

এ বছর বেশ কয়েকটি মৌলিক গান প্রকাশ করেছেন সাহিল, নাটকের জন্যও গান করেছেন। শিগগিরই আরও নতুন গান প্রকাশের পরিকল্পনা আছে। সাহিলের চাওয়া, ‘যখন মৌলিক গানের সংখ্যা যথেষ্ট হয়েছে বলে মনে করব, তখন দেশজুড়ে ট্যুর করে লাইভ পারফরম্যান্স করতে চাই।’