‘পাগল ছাড়া দুনিয়া চলে না’, ‘সময় গেলে সাধন হবে না’ পরিবেশন করে স্টেডিয়ামজুড়ে তরঙ্গ ছড়িয়েছেন সুমি
‘পাগল ছাড়া দুনিয়া চলে না’, ‘সময় গেলে সাধন হবে না’ পরিবেশন করে স্টেডিয়ামজুড়ে তরঙ্গ ছড়িয়েছেন সুমি

জয় বাংলা কনসার্টে তারুণ্যের জোয়ার

‘আমি শুনেছি বিজয়ের গান/আমি পেয়েছি নতুন আহ্বান’, সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত নামতেই আলোচিত গান ‘রাতের শেষ’ কণ্ঠে তুলল ক্রিপটিক ফেইট; ভোকালিস্ট সাকিবের দরাজ কণ্ঠের সঙ্গে তালে তালে দুলে উঠল আর্মি স্টেডিয়াম। গ্যালারি থেকে মাঠ, উত্তর থেকে দক্ষিণ; হাজারো কণ্ঠ মিলেমিশে একাকার। মুখ থেকে মুখে ছড়িয়ে পড়ল ‘মুক্ত আমি বাঙালি হয়ে, বাংলায় আমার প্রাণ’।

বার্তা সংস্থা বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ স্মরণে আয়োজিত এ কনসার্ট প্রত্যক্ষ করেন। সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ এবং বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র ও সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) ট্রাস্টি রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।

কনসার্টে তরুণ দর্শকের সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মতো

এরপর সাকিব কণ্ঠে তোলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান ‘তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর’; ক্রিপটিক ফেইটের ভাষ্যে, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সবচেয়ে হেভি মেটাল গান এটি। এরপর একে একে ‘চোখে যত জল’, ‘ভবঘুরে’ পরিবেশন করেছে ব্যান্ডটি।

ক্রিপটিক ফেইটের পর গান পরিবেশন করেছে আর্টসেল, চিরকুট ও নেমেসিস।
এর আগে সন্ধ্যা নামার মুখে লালনের গানে জমিয়ে তুলেছে লালন ব্যান্ড; ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে’ দিয়ে পরিবেশনা শুরুর পর একে একে ‘পাগল ছাড়া দুনিয়া চলে না’, ‘সময় গেলে সাধন হবে না’ পরিবেশন করে স্টেডিয়ামজুড়ে তরঙ্গ ছড়িয়েছেন সুমি। বন্ধুদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে গানের তালে নাচতে দেখা গেছে দর্শকদের।
দুই বছর পর গতকাল জয় বাংলা কনসার্টের আয়োজন করেছে সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ইয়াং বাংলা। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের দিনটিকে স্মরণ করে প্রতিবছর ৭ মার্চ কনসার্টের আয়োজন করে ইয়াং বাংলা। পবিত্র শবে বরাতের কারণে ৭ মার্চের বদলে এবার কনসার্টের আয়োজন ছিল গতকাল; সরকারি ছুটির দিনে বাঁধভাঙা উল্লাসে মেতেছিলেন তরুণেরা।

এ আয়োজনে প্রথমবারের মতো পাওয়া গেল মেঘদল ব্যান্ডকে

কেউ বন্ধুদের সঙ্গে, কেউ একা; কেউ পরিবারের সঙ্গে; ভিড় ঠেলে সবার পথ এসে মিলেছে আর্মি স্টেডিয়ামে। বিকেল থেকেই দর্শকের উপস্থিতি দেখা গেছে; বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দর্শকের সংখ্যা। দর্শকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই বছর বিরতির মধ্যে অধীর হয়ে অপেক্ষায় ছিলেন তাঁরা; কেউ গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জের মতো দূর শহর থেকেও এসেছেন জমকালো এ আয়োজনে।
বন্ধুদের সঙ্গে দল বেঁধে কনসার্টে এসেছেন ঢাকার ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান; তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছুটির দিন হওয়ায় আমরা কয়েকজন বন্ধু এসেছি। প্রথমবারের মতো বড় কনসার্টে এসেছি, খুব উপভোগ করছি।’
লালন ব্যান্ডের আগে মঞ্চে আসে অ্যাভোয়েড রাফা, ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে’ দিয়ে নিজেদের পরিবেশনা শুরুর পর ‘কষ্ট’, ‘আনমনে’, ‘আমি আকাশ পাঠাব’সহ বেশ কয়েকটি গান পরিবেশন করে ব্যান্ডটি।

‘কষ্ট’, ‘আনমনে’, ‘আমি আকাশ পাঠাব’সহ বেশ কয়েকটি গান পরিবেশন করে অ্যাভোয়েড রাফা

কালজয়ী দেশাত্মবোধক গান ‘মুক্তির মন্দির সোপান তলে’ পরিবেশন করেছে মেঘদল। এরপর আলোচিত গান ‘এ হাওয়া’, ‘এসো আমার শহরে’সহ বেশ কয়েকটি গান পরিবেশন করেছে ব্যান্ডটি। এবারই প্রথমবারের মতো এ আয়োজনে পাওয়া গেল মেঘদলকে।
মেঘদলের আগে মঞ্চে এসেছে আরেক ব্যান্ড কার্নিভ্যাল, শুরুতেই পরিবেশন করে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ‘সব কটা জানালা খুলে দাও না’; এরপর ‘আমার সত্য’, ‘সেই সব দিনরাত্রি’ পরিবেশন করেছে ব্যান্ডটি।

কনসার্টে তরুণ দর্শকের সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মতো

বেলা তিনটায় কনসার্টের শুরুতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান ‘আমার এ দেশ সব মানুষের’ পরিবেশন করেছে আরেকটি রক ব্যান্ড। এরপর নতুন অ্যালবাম থেকে ‘ঘুম পাড়ানোর গান’ শোনায় ব্যান্ডটি। কনসার্টের শুরুতে গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া এলাকায় বিস্ফোরণে নিহত মানুষদের স্মরণ করে ও শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিটের নীরবতা পালন করা হয়।

গান শুনিয়েছে চিরকুট