রাত সাড়ে নয়টায় মঞ্চে এসে টানা দুই ঘণ্টা ‘কমলা রানির সাগর দিঘির পালা’র অংশবিশেষ শোনান ইসলাম উদ্দিন পালাকার
রাত সাড়ে নয়টায় মঞ্চে এসে টানা দুই ঘণ্টা ‘কমলা রানির সাগর দিঘির পালা’র অংশবিশেষ শোনান ইসলাম উদ্দিন পালাকার

ইসলাম উদ্দিনের কিচ্ছার রাত শেষ হলো ‘দেওরা’ দিয়ে

ভৈরবে অনুষ্ঠিত হলো সপ্তম ভৈরব পিঠা উৎসব। গতকাল রোববার ইসলাম উদ্দিন পালাকারের পালার মধ্য দিয়ে শেষ হয় তিন দিনব্যাপী এ আয়োজন। পালা ছাড়াও উৎসবে লাঠিখেলা, পুতুল নাচ, আঞ্চলিক ভাষায় আবৃত্তি, নৃত্য, পুঁথিপাঠ, যন্ত্রসংগীতের মেলবন্ধন, মঞ্চনাটক, বাউলগানসহ বাঙালি সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক উঠে এসেছিল। উৎসব ঘুরে এসে লিখেছেন নাজমুল হক।

মাঘের সন্ধ্যা, সরকারি কাদির বকস পাইলট মডেল হাইস্কুল মাঠে তখন তিলধারণের জায়গা নেই। ইসলাম উদ্দিন পালাকারের পালা দেখতে এদিন হাজির হয়েছিলেন বিভিন্ন বয়সের মানুষ। এর মধ্যে কারও কারও পালা দেখার অভিজ্ঞতা থাকলেও বেশির ভাগই দর্শকই প্রথমবারের মতো সামনে থেকে দেখতে এসেছেন পালা। আবার তরুণদের অনেকেই এসেছিলেন ইসলাম উদ্দিনের কণ্ঠে ‘দেওরা’ গান শুনতে। রাত সাড়ে নয়টায় মঞ্চে এসে টানা দুই ঘণ্টা ‘কমলা রানির সাগর দিঘির পালা’র অংশবিশেষ শোনান ইসলাম উদ্দিন পালাকার। পালা শেষে ‘দেওরা’ ও ‘বিয়ে কেন হলো না’ গান গেয়ে মঞ্চ থেকে বিদায় নেন তিনি।

এদিন অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নাট্যকার, নির্মাতা ও অভিনেতা কচি খন্দকার ও অভিনেতা আবদুল্লাহ আল সেন্টু। পালা শেষে প্রতিক্রিয়ায় কচি খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইসলাম উদ্দিনের অনেক নাম শুনেছি, আজ প্রথম সামনে থেকে তাঁর পালা শুনলাম। তিনি অসম্ভব গুণী একজন শিল্পী, মুগ্ধ হয়ে পালা শেষ করলাম। পালা শেষে তাঁর গানে, তরুণদের মধ্যে যে উচ্ছ্বাস দেখলাম, তা অনেক দিন মনে থাকবে।’

শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) উৎসবের উদ্বোধন হয়

পালা শেষে কথা হয় ইসলাম উদ্দিন পালাকারের সঙ্গে। গ্রিনরুমে তখন তিনি মেকআপ তুলছিলেন। সে কাজ করতে করতে তিনি বলেন, ‘প্রথমবারের মতো ভৈরবে পালা করতে এলাম। মাঠ দিয়ে যখন ঢুকি, তখন দেখলাম মুরব্বিদের থেকে তরুণ দর্শকের সংখ্যা বেশি। ভাবছিলাম, তাঁরা কীভাবে গ্রহণ করেন। কিন্তু ভুল ভাঙিয়ে সবাই শেষ পর্যন্ত পালা দেখেছেন। মনটা অনেক খুশি লাগছে।’
সমাপনী দিনের আয়োজন শুরু হয় নৃত্য দিয়ে। তিনটি নৃত্যের পর অতিথি ও পিঠা উৎসব উদ্‌যাপন পরিষদ উপদেষ্টাদের মঞ্চে আমন্ত্রণ জানান উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি আল আমিন নাজির। আলোচনা পর্ব শেষে নিজেদের পরিবেশনা নিয়ে আসে খুদেজা খানম স্কুল সাংস্কৃতিক দল।

পুতুল নাচের ঢংয়ে নৃত্য নিয়ে আসে ব্লু-বার্ড স্কুল

এরপর মঞ্চে পুতুল নাচের ঢংয়ে নৃত্য নিয়ে আসে ব্লু-বার্ড স্কুল। ‘অল্পনা বয়সের সখিনা ছেরি’ ও ‘আমার যমুনার জল দেখতে কালো’ গানে তাদের পরিবেশনা নজর কাড়ে দর্শকদের। পুতুল নাচের পরই ওস্তাদ ইসরাইল খান সংগীত নিকেতন গান পরিবেশন করে। এরপর ইসলাম উদ্দিন পালাকারের পরিবেশনায় শেষ হয় এ আয়োজন।

মাঠে তখন তিলধারণের জায়গা নেই

আয়োজন নিয়ে পিঠা উৎসব উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি আল আমিন নাজির বলেন, ‘পিঠা আমাদের বাঙালির লোকজ ঐতিহ্যের স্মারক। পিঠা উৎসব উদ্‌যাপন পরিষদ ভৈরব আমাদের শহুরে মানুষজনের বাহারি সেই পিঠার সঙ্গে পরিচিতি ঘটানো এবং আমাদের কৃষ্টি লালনের উদ্দেশ্যে ২০১৮ সাল থেকে ভৈরব পিঠা উৎসব আয়োজন করে আসছে। আমাদের পিঠা উৎসবে বিভিন্ন স্টলে পিঠা প্রদর্শন ও বিক্রয়ের পাশাপাশি আমাদের উন্মুক্ত মঞ্চে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, বিশেষত নানান লোকজ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা থাকে।’

কচি খন্দকার

শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) উৎসবের উদ্বোধনী দিনে অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়েছিলেন অভিনেতা শাহেদ আলী ও সোহেল মণ্ডল। এদিন লাঠিখেলার সঙ্গে ভৈরব আইডিয়াল স্কুল সাংস্কৃতিক দলের পরিবেশনা, আবৃত্তি ও বাউলগানের আয়োজন ছিল।