
ধানমন্ডির ছায়ানট সংস্কৃতি–ভবন মিলনায়তনে এক সুরেলা সন্ধ্যার আবাহনে অনুষ্ঠিত হলো সংগীতানুষ্ঠান ‘ঠুমরির জলসা’। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ নজরুলসংগীত সংস্থার এই আয়োজন যেন হয়ে উঠেছিল এক নিটোল শ্রদ্ধার্ঘ্য। নজরুলের সংগীতভান্ডার থেকে বাছাই করা ঠুমরি ও রাগভিত্তিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শ্রোতারা পেলেন সুর ও বাণীর এক অপার অনুভব।
কাহারবা তালের একটি ঠুমরি পরিবেশনার মধ্য দিয়ে সন্ধ্যার আসর শুরু করেন মিরাজুল জান্নাত সোনিয়া। এরপর দাদরা তালে নজরুলসংগীত পরিবেশন করেন ঐশ্বর্য সমদ্দার। কাহারবা তালে মোহি খানের কণ্ঠে ‘পরান প্রিয়! কেন এলে অবেলায়/ শীতল হিমেল বায়ে ফুল ঝরে যায়’ গানটি শ্রোতামনে সঞ্চার করে এক বিষণ্ন আবহ। রাগ পাহাড়ি ঠুমরি আঙ্গিকের একটি গান পরিবেশন করেন টিংকু শীল।
মাহমুদুল হাসান পরিবেশন করেন বিরহের সুরে ‘প্রিয়া গেছে কবে পরদেশ পিউ কাঁহা ডাকে পাপিয়া/ দোয়েল শ্যামার শিসে তারি হুতাশ উঠিছে ছাপিয়া’। রাগ বেহাগে ত্রিতালভিত্তিক ঠুমরি পরিবেশন করেন শ্রাবন্তী ধর, শারমিন সাথী ইসলাম ও ইসলাম ময়না। তাঁদের পরিবেশিত গানের শিরোনাম ছিল ‘ভোলো অতীত স্মৃতি’।
বিজন চন্দ্র মিস্ত্রির পরিবেশনায় শোনা যায় ‘পেয়ে কেন নাহি পাই হৃদয়ে মম/ হে চির-সুদূর প্রিয়তম’। নৃত্যশিল্পী সামিনা হোসেন প্রেমা ‘উচাটন মন ঘরে রয় না’ গানটির সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবেশন করেন ভাবপ্রবণ এক নৃত্য। ‘গাগরী ভরনে চলে চপলা ব্রজনারী’ গানের সহযোগে সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে ওয়ার্দা রিহাবের নেতৃত্বাধীন নৃত্যদল।
নাসিমা শাহীন ফ্যান্সি গেয়েছেন ‘গুণ্ঠন খোলো পারুল মঞ্জরী’, আর ঋতুরাজ পরিবেশন করেন ‘না মিটিতে সাধ মোর’। রাগ খাম্বাবতীতে ঠুমরি পরিবেশন করেন সুপ্রিয়া দাশ। এ ছাড়া রাগ কাফি, দেশ, ভৈরবীতে ঠুমরি পরিবেশন করেন সমুদ্র শুভম, বিটু শীল ও সুস্মিতা দেবনাথ সূচি।
অনুষ্ঠানের শেষাংশে প্রিয়াংকা গোপ পরিবেশন করেন ‘ভাঙ্গা মন জোড়া নাহি যায়’, আর ছন্দা চক্রবর্তীর কণ্ঠে শোনা যায় ‘কেন করুণ সুরে’।
শিল্পীদের কণ্ঠে নজরুলসৃষ্টির এমন হৃদয়ছোঁয়া রূপায়ণ ও রাগভিত্তিক পরিবেশনার নিপুণতা ‘ঠুমরির জলসা’কে রূপ দেয় এক সার্থক সংগীতানুষ্ঠানে। কবির জন্মদিনের আগের দিন শনিবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠানটি শ্রোতাদের হৃদয়ে গেঁথে যায় অপূর্ব এক সংগীতসন্ধ্যার স্মৃতিতে।