৫টি কিংবা ১০টি নয়, ৫৪টি দৃশ্য বদলের পর সিনেমাটিকে ‘অ্যাডাল্ট’ সনদ দিয়েছিল ভারতের সার্টিফেকেশন বোর্ড। সাম্প্রতিককালে এতগুলো দৃশ্য বদলের পরও ‘অ্যাডাল্ট’ সনদ পাওয়ার ঘটনা কলকাতার সিনেমায় দেখা যায়নি। বহুল আলোচিত সেই সিনেমা ‘দ্য একাডেমি অব ফাইন আর্টস’ মুক্তির কথা ছিল গতকাল শুক্রবার। কিন্তু ফেডারেশনের বাধার মুখে পড়ে ছবির মুক্তি আটকে যায়। যা নিয়ে কলকাতায় এখন চলছে তুমুল বিতর্ক।
জয়ব্রত দাশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটের কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে, নিজেদের পুঁজি দিয়ে চার বছর ধরে এই ছবি তৈরি করেছেন জয়ব্রত। বহুবার বন্ধ হয়ে গেছে ছবির কাজ। আবার ফান্ড জোগাড় করে তা শুরু হয়। ছবিটি তৈরি হয় ২০২১ সালে। কোভিড-পরবর্তী সময়ে এসআরএফটিআইয়ের ছাত্রছাত্রীরা মিলে ছবিটি তৈরি করেন। বাজেট প্রায় ২৫ লাখ রুপির কাছাকাছি। কলকাতায় ফেডারেশনের অনুমতি নেওয়া হয়নি বলে ছবির মুক্তি আটকে দিয়েছে সংগঠনটি।
পরিচালক জয়ব্রতের কথায়, ‘আমরা ফিল্ম স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা মিলে ছবিটা তৈরি করি। নিজেরা ক্রাউড ফান্ডিং করে টাকা তুলি। আমরা জানতামই না যে, ছবি বানাতে গেলে ফেডারেশনের থেকে এমন অনুমতি নিতে হয়। তাঁদের এত নিয়ম আছে। আমাদের টিমে আসলে স্পটবয় থেকে চিত্রগ্রাহক, সবাই ফিল্ম স্কুলের ছাত্রছাত্রী। এখন খুব উৎকণ্ঠায় আছি।’
বলা হচ্ছে পশ্চিমঙ্গের গিল্ডের একজন শিল্পী না নিয়ে কাজ করায় ফেডারেশন এই ছবির মুক্তি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে। যদিও এই প্রসঙ্গে ফেডারেশনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস জানান, তিনি এখনই এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চান না। অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ বলেন, ‘ফেডারেশনের ঠিক কোন জায়গায় আপত্তি সেটি পুরোটা জানি না। তবে শুনছি, ছবির মুক্তি নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। আর গিল্ডের কাউকে না নিয়ে যে ছবি করার কথা বলা হয়েছে, এটা প্রথম নয়। এর আগেও তো ইনডিপেনডেন্ট ছবি হয়েছে এভাবে, যারা পুরস্কারও পেয়েছে। একটি হলো ‘দোস্তজী’, অন্যটি গৌতম ঘোষের ছেলের ছবি ‘ঝিল্লি’। আমার মনে হয়, দুই পক্ষ বসে মিটিয়ে নেওয়া উচিত। আর যদি কিছু কম করে কোনো জরিমানা দিতে হয়, সেটি দেখুন। কারণ, তাঁরা সবাই নিজেদের টাকা দিয়ে ছবিটা করেছেন। তাই ফেডারেশনের এতটা কড়া হওয়া উচিত নয়।’
এই ছবির অন্যতম অভিনেতা সৌরভ দাস জানান, তিনি একেবারেই ফেডারেশনের নিয়মকানুন সম্পর্কে অবহিত নন। তিনি অভিনেতা, সেটিই তাঁর কাজ। একটি সিনেমার সব কটি বিভাগে তিনি মাথা ঘামান না; বরং নিজের চরিত্রটার দিকে মনোযোগী হন। সৌরভ বলেন, ‘যেহেতু ছবিটা ছাত্রছাত্রীরা মিলে বানিয়েছেন, তাই আমরা অভিনেতারা কেউ কোনো পারিশ্রমিক পর্যন্ত নিইনি; কিন্তু ছবিটা নিয়ম মেনে, নাকি নিয়ম ভেঙে বানানো, সেটি নিয়ে কোনো ধারণা ছিল না। তবে ছবিটা মুক্তি পাওয়া উচিত। এই ছবিটা মুক্তি পেলে আরও অনেক ছেলেমেয়ে এ রকম ইনডিপেনডেন্ট ছবি তৈরির সাহস পাবেন।’
মুক্তির দুই দিন আগে এমন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ছবির পরিবেশক পঙ্কজ লাডিয়া জানান, তিনি এখনই কিছু বলতে চান না। ফেডারেশন ও পরিচালক, প্রযোজক—সব পক্ষ বসে যে সিদ্ধান্ত নেবে, সেটিই মেনে চলবেন তাঁরা। তাতে যদি ছবি মুক্তি না পায়, সেটিই মেনে নেবেন।
ছবির অন্যতম প্রযোজক সৌম্য সরকার বলেন, ‘আমরা ছবিটার সঙ্গে ছিলাম ২০২৩ থেকে। শুটিং তত দিনে হয়ে গেছে। আমাদের প্রযোজনা সংস্থা সব সময় ফেডারেশনের নিয়ম মেনেই ছবি করেছে। তবে এ ক্ষেত্রে পরিচালক জয়ব্রত, ফেডারেশন মিলে যা সিদ্ধান্ত নেবেন সেটিই মানা হবে।’
শোনা যাচ্ছে, বৃহস্পতিবার ফেডারেশনের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পরিচালক-প্রযোজক। যদিও জয়ব্রত বলেন, ‘ছবি মুক্তি পাক সেটিই চাইব, না পেলেও ছবি তৈরি করা ছাড়ব না। বাংলা ভাষায় না হোক, তখন অন্য কোনো ভাষায় ছবি বানাব।’
কী আছে সিনেমায়
এক বিরল ও অমূল্য অ্যান্টিক মদের বোতল ঘিরে ‘দ্য একাডেমি অব ফাইন আর্টস’ সিনেমার গল্প এগিয়েছে। কয়েকজন অপরাধী সেই বোতলটা চুরির পরিকল্পনা করেন, এর পরই শুরু হয় প্রতারণা, পরকীয়া, চুরি-ডাকাতি ও বিশ্বাসঘাতকতার টানটান দৌড়।
নির্মাতার দাবি, প্রতিশোধ ও প্রলোভনের খেলার পরতে পরতে উত্তেজনায় ভরা চিত্রনাট্য দর্শককে নিশ্বাস নিতে দেবে না। টালিপাড়ায় গুঞ্জন, বাংলা ছবিতে এ রকম ‘বোল্ড’ ও ‘বিস্ফোরক’ যৌন দৃশ্য আগে খুব একটা দেখা যায়নি। ফলে দর্শকও অপেক্ষায় অন্য ধারার পরীক্ষামূলক সিনেমা দেখতে।
জয়ব্রত দাশের কথায়, এটি একটি পাল্প অ্যাকশন থ্রিলার, পরিচালক কুইন্টিন ট্যারান্টিনোর প্রতি ভালোবাসা থেকেই প্রেরণা। তবে থ্রিলারের সঙ্গে এখানে রয়েছে কমেডির এক ঠিকঠাক মিশেল-বাংলা দর্শকের জন্য একদমই নতুন অভিজ্ঞতা।
হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা ও আনন্দবাজার পত্রিকা অবলম্বনে