কোটি কোটি টাকা লোকসান হয়ে গেল

গত ১৮ মার্চ শেষ শুটিং করেছেন তানজিন তিশা। ছবি: ফেসবুক থেকে
গত ১৮ মার্চ শেষ শুটিং করেছেন তানজিন তিশা। ছবি: ফেসবুক থেকে
>গত ১৮ মার্চ শেষ শুটিং করেছেন তানজিন তিশা। পরদিন থেকেই ঘরবন্দী। এক মাসেরও বেশি সময় হয়ে গেল। এত দীর্ঘ সময় একটানা ঘরে থাকার অভ্যাস নেই তাঁর। তাই ঘরে বসে প্রতিদিনই নতুন নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছেন তিনি। সময় পার করতে বাসায় নানা ধরনের কাজে নিজেকে যুক্ত করছেন তিশা। সময় করে প্রতিদিন নাটক, সিনেমাও দেখছেন। একঘেয়েমি জীবনে বিরক্তবোধও করছেন এই অভিনেত্রী।

এক মাসেরও বেশি সময় ঘরে। সময় কীভাবে পার করছেন?

শেষ শুটিং করেছি ‘ব্রেকআপ লিস্ট ২’ নামে একটি নাটকের। এরপর থেকেই ঘরে ঢুকে গেছি। প্রথম দিকে বাসায় রান্না শেখার চেষ্টা করেছি। আমার জুতা সংগ্রহ বেশি। অভিনয় করার কারণে প্রচুর কস্টিউম। শুটিংয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে দীর্ঘদিন ধরে সবকিছু এলোমেলো ছিল। জুতা, জামাকাপড় গোছানো শুরু করেছি। এখনো চলছে। নিজের ঘর নিজেই পরিষ্কার করছি প্রতিদিন। পাশাপাশি আধা ঘণ্টা করে জিম করি। সিনেমা, ওয়েব সিরিজ দেখি। বই পড়ার চেষ্টা করছি। আগে যেসব পরিচিতজনদের সঙ্গে কথা হতো, তাঁদের সঙ্গেও ফোনে কথা বলে নিজেকে হালকা রাখার চেষ্টা করছি।

বাসায় নানা ধরনের কাজে নিজেকে যুক্ত করছেন তিশা। ছবি: ফেসবুক থেকে

কী ধরনের সিনেমা দেখছেন?

হলিউড, বলিউডের থ্রিলার রকমের মুভি ও সিরিজ দেখছি। আমাদের দেশের প্রচুর নাটকও দেখা হয়েছে এ কদিনে। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে, এই দুর্যোগ, মহামারির দিনে একটু রোমান্টিক, একটু কমেডি ধাঁচের মুভি, সিরিজ দেখা উচিত। ভাবছি এখন থেকে দেখব।

ঘরে থাকার সময়টা আরও দীর্ঘ হতে পারে নতুন কিছু শেখা বা করার আগ্রহ হচ্ছে না?

হ্যাঁ, এর মধ্যে প্রস্তুতি নিচ্ছি। ছোটবেলা থেকে গিটার বাজানোর খুব ইচ্ছা ছিল, হয়নি। এখন যেহেতু সময় পাচ্ছি, তাই গিটারটা শিখব। মার্কেট বন্ধ। কেনার সুযোগ নেই। দুই বন্ধুর সঙ্গে কথা হয়েছে, তারা গিটার ব্যবস্থা করে দেবে। পাশাপাশি নিজের ইউটিউব চ্যানেলটির দিকে গুরুত্ব দিচ্ছি। অনেক আগেই চ্যানেলটি খুলেছি কিন্তু এত দিন সচল ছিল না।

প্রতিদিনই ঘুম থেকে উঠে ঘরের মধ্যে একইভাবে সময় কাটছে, বিরক্ত লাগছে না?

গত তিন চার দিন হলো খুব বিরক্ত হচ্ছি। আগে শুটিং করতে করতে টায়ার্ড হতাম, এখন ঘরে থাকতে থাকতে টায়ার্ড হয়ে যাচ্ছি। আরও কত দিন এভাবে ঘরেই থাকতে হবে তা কে জানে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে নিজে বাঁচতে হলে, পরিবারকে বাঁচাতে হলে এভাবেই ঘরে থাকতে হবে।

করোনাভাইরাস নিয়ে আপনি কতটুকু আতঙ্কবোধ করছেন?

যখন আমাদের এখানে ধরা পড়ল, তখন ততটা গুরুত্ব দিইনি। ভাবছিলাম কয়েক দিন পর সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কিন্তু দিন দিন বিস্তার বেড়েই চলেছে। এতে নিজের মধ্যে আতঙ্কটা বেড়ে গেছে। সবচেয়ে বড় আতঙ্ক এর কোনো ওষুধ এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। তাই বাসায় পরিবারের সবাইকে নিয়ে করোনা প্রতিরোধের সব নিয়মই  মেনে চলছি। সামনে মহাদুর্যোগ আসতে পারে। তাই সবারই বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থার নিয়ম মেনে চলা উচিত। নিজে নিরাপদ অবস্থা তৈরি করলে, পরিবার নিরাপদ থাকবে। এতে পুরো দেশই নিরাপদ থাকবে।

অভিনয় শিল্পী সংঘের ব্যানারে স্বল্প আয়ের অভিনয়শিল্পী, কলাকুশলীদের জন্য ফান্ড গঠন করা হয়েছে। সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, অনেক জনপ্রিয় শিল্পী সাড়া দেননি। কী বলবেন?

দেখুন, আমি ব্যক্তিগতভাবে যতটুকু পেরেছি, দিয়েছি। তা ছাড়া এক জায়গায় তো বড় অঙ্কের অর্থ দেওয়া যাবে না। কারণ, আমার চারপাশের পরিচিতজন, আত্মীয়স্বজন এই মহামারিতে বিপদে আছেন, তাঁদেরও সহযোগিতা করছি। এর মধ্যে আমি ব্যক্তিগতভাবে কয়েকজন মেকআপম্যান, প্রোডাকশন বয়, ট্রলিম্যানকেও কিছু সহযোগিতা করেছি। অনেক শিল্পীর ক্ষেত্রে একই অবস্থা। সবাই তো ফান্ডে টাকা দিতে পারবেন না। কারণ, তাঁদেরও আত্মীয়স্বজন, কাছের মানুষদের দেখতে হচ্ছে। ফান্ডে না দিলেও তো কোথাও না কোথাও বিপদগ্রস্ত মানুষকে সহযোগিতা করছেন তাঁরা। গত সপ্তাহে শরীয়তপুরে আমার দাদা ও নানাবাড়ির এলাকায় অনেকগুলো পরিচিত পরিবারকে সহযোগিতা করেছি। আমার দায়িত্ব থেকেই করেছি।

সময় করে প্রতিদিন নাটক, সিনেমাও দেখছেন তিশা। ছবি: ফেসবুক থেকে

প্রতি ঈদে অনেক নাটকে কাজ করেন। করোনা আতঙ্কের মধ্যে আগামী ঈদে কোনো নাটকেই কাজ করার সুযোগ নেই। আর্থিকভাবে কেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন?
শুধু আমি না, আরও যাঁরা ঈদের সময় অনেক নাটকে কাজ করেন, সবারই একই অবস্থা। শুধু তা–ই না, এসব নাটকের সঙ্গে জড়িত সব মানুষ তথা পুরো নাটক ইন্ডাস্ট্রির কোটি কোটি টাকা লোকসান হয়ে গেল।  যদিও দেশের সব সেক্টরের অবস্থা ভালো নয়।