Thank you for trying Sticky AMP!!

চ্যাম্পিয়ন, অপমান, অবসাদ, মাদক, অতঃপর...

‘ইন্ডিয়ান আইডল’ প্রতিযোগিতার একাদশ সিজনের বিচারক নেহা কাক্কর ও অনু মালিকের সঙ্গে বিশাল দাদলানির সেলফি। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া

‘ইন্ডিয়ান আইডল’ প্রতিযোগিতার একাদশ সিজনে অডিশন দিতে এসেছেন একটি ছেলে। তাঁর হাতে হারমোনিয়াম। বিচারকের আসনে আছেন নেহা কাক্কর, বিশাল দাদলানি আর অনু মালিক। মঞ্চে আসা ছেলেটিকে চিনতে পারেন নেহা কাক্কর। জিজ্ঞেস করেন, ‘তুমি আজমত?’ ছেলেটি বললেন, ‘জি।’ বিশাল দাদলানি বললেন, ‘আপনি ছেলেটিকে চেনেন?’ নেহা কাক্কর বললেন, ‘হ্যাঁ, আমি এর আগে ওকে বাচ্চাদের একটি রিয়েলিটি শোতে দেখেছি। ও কিন্তু খুব জনপ্রিয় ছিল।’

জানা যায়, ছেলেটির নাম আজমত হোসেন। ২০১১ সালে জি টিভির ‘সা রে গা মা পা লিটল চ্যাম্পস’ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। গ্র্যান্ড ফিনালেতে তাঁর হাতে পুরস্কার তুলে দেন শাহরুখ খান। তখন আজমত হোসেনের গানের প্রশংসায় বলিউডের ‘বাদশা’ ছিলেন পঞ্চমুখ। এরপর?

এ সময় আজমত হোসেনের কথা শুনে অবাক হন তিন বিচারক। আজমত হোসেন বলেন, ২০১১ সালে ‘সা রে গা মা পা লিটল চ্যাম্পস’ জয়ের পর বদলে যায় তাঁর জীবন। স্টেজ শো, খ্যাতি, অর্থ—ওইটুকু বয়সে কোনো কিছুর অভাব ছিল না। কিন্তু হঠাৎ পরিস্থিতি পাল্টে যায়। বয়স বাড়ছে আজমত হোসেনের। বয়ঃসন্ধিকালের সরাসরি প্রভাব পড়ে তাঁর কণ্ঠে। আজমত হোসেনের কণ্ঠ বদলে যায়, কণ্ঠ ভারী হয়। কিন্তু তাঁর সেই শারীরিক পরিবর্তন স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেননি শ্রোতারা। যে শিশু আজমত হোসেনকে তাঁরা লুফে নিয়েছিলেন, তাঁর কণ্ঠ আর গান ছিল সবার দারুণ পছন্দ; সেই কিশোর আজমত হোসেনের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন সবাই। যে শ্রোতারা তাঁর সেই ছোটবেলার কণ্ঠ শুনে অভ্যস্ত, তাঁরা আজমত হোসেনের পরিণত কণ্ঠ পছন্দ করেননি।

২০১১ সালে জি টিভির ‘সা রে গা মা পা লিটল চ্যাম্পস’ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন আজমত হোসেন। ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া

‘ইন্ডিয়ান আইডল’ প্রতিযোগিতার একাদশ সিজনের অডিশনের মঞ্চের পরিবেশ ক্রমেই ভারী হয়। আজমত হোসেন বলেন, ওই সময় একেবারেই কমে যায় তাঁর স্টেজ শো। অনেকেই মন্তব্য করেন, তাঁর কণ্ঠ খারাপ হয়ে গেছে, তাই তাঁর গান আর ভালো লাগে না। এই পরিস্থিতিকে মেনে নিতে পারেননি আজমত হোসেন। পুরো ব্যাপারটিকে নিজের কাছে অপমান মনে হয়। অবসাদে ভুগতে শুরু করেন। তিন বছর কোনো গান করেননি। ওই সময় পা রাখেন অন্ধকার জগতে। জড়িয়ে পড়েন মাদকের সঙ্গে।

একদিন কিছু পুরোনো ছবি দারুণ নাড়া দেয় আজমত হোসেনকে। এরপর পরিবারের মানুষ তাঁকে নিয়ে যান মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্রে। চিকিৎসা আর কাউন্সেলিংয়ের ফলে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন আজমত হোসেন। কলেজের পড়াশোনায় মন দেন। পাশাপাশি চলে গানের চর্চা। কিন্তু এখনো তাঁর মনে আছে ভয়, আবার হবে তো? ফিরে পাবেন সেই নাম, যশ আর খ্যাতি?

‘ইন্ডিয়ান আইডল’ প্রতিযোগিতার একাদশ সিজন সঞ্চালনা করবেন আদিত্য নারায়ণ। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া

আবেগঘন পরিবেশে আজমত হোসেনের পাশে দাঁড়ান ‘ইন্ডিয়ান আইডল’ প্রতিযোগিতার এই সিজনের অন্যতম বিচারক বিশাল দাদলানি। বললেন, ‘আমরা আজমতকে উৎসাহ দিচ্ছি, দেব। দর্শকদের বলতে চাই, এবার এই মঞ্চ থেকে অন্য আজমতকে সবাই খুঁজে পাবেন। ওর কণ্ঠ চমৎকার। ওর কণ্ঠে আছে জাদু। গানের প্রতি ওর যে ভালোবাসা আমরা দেখছি, সেই ভালোবাসা ওকে আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসবে।’

এদিকে ‘ইন্ডিয়ান আইডল’ প্রতিযোগিতার একাদশ সিজনের প্রতি পর্বের জন্য তিন বিচারক আর সঞ্চালক কত পারিশ্রমিক পাচ্ছেন, ইন্ডিয়া টিভির একটি প্রতিবেদনে তা প্রকাশ করা হয়েছে। এই অনুষ্ঠানের আগের সিজনে সঞ্চালক ছিলেন মনীশ পল। কিন্তু এবার সঞ্চালক আদিত্য নারায়ণ। ‘সা রে গা মা পা লিটল চ্যাম্পস’, ‘রাইজিং স্টার’, ‘কিচেন চ্যাম্পস’সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করে দারুণ জনপ্রিয় তিনি। জানা গেছে, ‘ইন্ডিয়ান আইডল’ প্রতিযোগিতার একাদশ সিজনের প্রতি পর্বের জন্য তিনি পাচ্ছেন আড়াই লাখ রুপি।

‘ইন্ডিয়ান আইডল’ প্রতিযোগিতার একাদশ সিজনের অডিশনে আজমত হোসেন। ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া

বিচারকদের মধ্যে সুরকার ও সংগীত পরিচালক অনু মালিক পাচ্ছেন সাড়ে চার লাখ রুপি। এর চেয়ে কিছু কম অর্থ পাচ্ছেন সংগীত পরিচালক ও সংগীতশিল্পী বিশাল দাদলানি। ‘ইন্ডিয়ান আইডল’ প্রতিযোগিতার আগের সিজনে বিচারকের আসনে ছিলেন বলিউডের সংগীত তারকা নেহা কাক্কর। তাঁর জন্য তখন এই রিয়েলিটি শো দারুণ জনপ্রিয় হয়। তাই কর্তৃপক্ষ এবারও বিচারকের আসনে রেখেছেন তাঁকে। আর প্রতি পর্বের জন্য নেহা কাক্করকে দেওয়া হচ্ছে পাঁচ লাখ রুপি।

সনি এন্টারটেইনমেন্ট টেলিভিশনে শুরু হয়েছে ‘ইন্ডিয়ান আইডল’ প্রতিযোগিতার একাদশ সিজন। প্রচারিত হচ্ছে শনি ও রোববার রাত সাড়ে আটটায়।