
‘১০-১২ বছর আগে এশিয়াটিকের নেভিল ও আমরা একসঙ্গে আড্ডা দিতাম। রাতে খেতাম। তার সঙ্গে কথা বলতে বলতে মনে হতো, এই যে তার করপোরেট জীবন সে ধারণ করছে, যদি এখান থেকে সে কোনো দিন বের হয়ে যায়, তাহলে কী হবে! এই বিরক্তি, হতাশা, জীবনবোধ কীভাবে উঠে আসবে। মূলত, ঢাকা মেট্রো গাড়িটি নিয়ে সে একদিন বাসা থেকে বের হয়ে যায়। চলে যায় ঢাকার বাইরে। তার হতাশা, বিরক্তি, নতুন পরিবেশ অন্যভাবে উঠে আসে।’ বললেন অমিতাভ রেজা চৌধুরী। তিনি এবার তৈরি করেছেন শ্বাসরুদ্ধকর গল্প নিয়ে একটি ওয়েব সিরিজ। নাম ‘ঢাকা মেট্রো’।
তিনজন মানুষের যাত্রা নিয়ে এই ওয়েব সিরিজের গল্প। তাঁদের একজন অপি করিম। তাঁর চরিত্রের নাম জয়গুন, কখনো কখনো তাঁকে জবা বলেও ডাকা হয়। এ ছাড়া আবদুল কুদ্দুস চরিত্রে নেভিল এবং রহমান চরিত্রে শরিফুল ইসলাম অভিনয় করেছেন।
ওয়েব সিরিজটি প্রযোজনা করেছে অমিতাভ রেজা চৌধুরীর নির্মাণ প্রতিষ্ঠান হাফ স্টপ ডাউন। এবার পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে আগামী ১১ এপ্রিল অনলাইন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম হইচইয়ে ওয়েব সিরিজটি মুক্তি দেওয়া হবে। আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ‘ঢাকা মেট্রো’র অফিশিয়াল ট্রেলার প্রকাশ করেছে হইচই। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অমিতাভ রেজা চৌধুরী, অপি করিম, শারমিন জোহা শশী, নেভিল ফেরদৌস হাসান, শরিফুল ইসলাম, মনোয়ার কবিরসহ আয়োজক প্রতিষ্ঠান হইচইয়ের কর্মকর্তারা।
নির্মাতারা আশা প্রকাশ করেন, ওয়েব কনটেন্ট ও বিনোদন জগতে ‘ঢাকা মেট্রো’ এক নতুন মাত্রা যোগ করবে। সম্পর্ক, বিচ্ছেদ, স্মৃতি খুঁজে ফেরা, মুক্তি, বন্দিজীবন, আত্মনিয়ন্ত্রণ, অবসাদ, বিভ্রম ও অন্তিমযাত্রা—এই নয়টি বিষয় নিয়ে প্রথাগত ধারণার বাইরে এই ওয়েব সিরিজটি। ওয়েব সিরিজটির চিত্রনাট্য লিখেছেন নাসিফ আমিন। পরিচালনা করেছেন অমিতাভ রেজা চৌধুরী।
‘ঢাকা মেট্রো’ নির্মাণের প্রস্তুতি নিয়ে অমিতাভ রেজা চৌধুরী আরও বলেন, ‘নেভিলের কাছে তাঁর গল্পটা শুনে আদিত্য কবিরকে বললাম। সে এতটাই রোমাঞ্চিত যে এক রাতেই কাহিনি লিখে শেষ করেছে। ইচ্ছা ছিল এটা দিয়ে সিনেমা বানাব। কয়েকজন প্রডিউসারের কাছে গিয়েছি। গল্প শুনে তাঁরা বলতেন, ভালো হয়েছে, কিন্তু একটা প্রেমের ছবি বানান! আমার এ গল্পটা দিয়ে আর কাজ করা হয় না। এরপর হইচই যখন অফার করল আমাকে, ঠিক করলাম এটা দিয়েই ওয়েব সিরিজ করব।’
অমিতাভ রেজা চৌধুরী বলেন, ‘ওয়েব সিরিজের ধারণাটি আমাদের মিডিয়া জগতে নতুন এক দিগন্ত উন্মোচন করেছে। কাজটি করে আমি আনন্দিত। আমি নিশ্চিত, আমাদের কঠোর পরিশ্রমের ফল দর্শকদের মন ছুঁয়ে যাবে। ডার্ক কমেডি ও থ্রিলারের সমন্বয় দর্শকদের একটি ভিন্ন স্বাদ দেবে।’
আজকের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অপি করিম। ট্রেলারে দেখা যায়, অপি করিম বলছেন, ‘ছোটবেলায় বাপ আমারে শিখাইছিল মুরগি কেমনে জবাই করে। জবাই করমু কী, এক কোপে মাথাই আলাদা কইরা ফেলাইছিলাম।’ শুনে অতিথিরা হেসে ওঠেন। এরপর অপি করিম বললেন, ‘গত শীতে উত্তরবঙ্গে শৈত্যপ্রবাহের মধ্যে আমরা কাজটি করেছি। এই ওয়েব সিরিজে আমরা চরিত্রটি একজন খুনি, পলাতক ও এক মায়ের।’
আর প্রথম আলোকে অপি করিম বললেন, ‘শুধু কাজের জন্যই কাজ করতে হবে, এমনটি চাইনি। মাঝে অনেক চিত্রনাট্য পেয়েছিলাম, ভালো লাগেনি। অমিতাভ রেজা ভাইয়ের সঙ্গেও একটা-দুটো কাজের কথা হয়েছিল, সময়-সুযোগের অভাবে করা হয়নি। কিন্তু এই চিত্রনাট্যটি পড়তে গিয়ে দেখলাম, আমি যে চরিত্রটি করছি, তা বাংলাদেশের সব মেয়ের গল্প, যেন প্রতিটি মেয়েকেই উপস্থাপন করা হয়েছে চরিত্রটির মধ্যে। খুবই শক্তিশালী চরিত্র।’
হইচই বাংলাদেশের বিজনেস বিভাগের প্রধান সাকিব আর খান বলেন, ‘ওয়েব সিরিজটি দেখা যাবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম হইচইয়ে। বাংলাদেশের প্রতিভা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলাদেশের কনটেন্ট এবার সারা বিশ্বে পৌঁছে দেওয়ার জন্য এটি আমাদের প্রথম প্রচেষ্টা। হইচই অ্যাপ তা নিশ্চিত করবে। সামনে হইচই বাংলাদেশে নির্মিত আরও কনটেন্ট নিয়ে আসছে। এখন থেকে ক্রেডিট কার্ড ও ডেবিট কার্ড ছাড়া অন্যান্য লোকাল ওয়ালেটের মাধ্যমে বাংলাদেশি টাকায় হইচই সাবস্ক্রাইব করা যাবে।’
নয় পর্বের এই ওয়েব সিরিজের দৃশ্যধারণ শুরু হয় গত বছর। দৃশ্যধারণ হয়েছে উত্তরবঙ্গের দিনাজপুর, গাইবান্ধা ও বগুড়ার লোকেশনে। কাজ হয়েছে ঢাকায়ও।