ইমতিয়াজ বর্ষণ
ইমতিয়াজ বর্ষণ

নতুন সিনেমা, নতুন শুটিং—পুরোদমে ব্যস্ত বর্ষণ

একাধিকবার মুক্তির ঘোষণা দিয়েও নানা জটিলতায় আটকে যায় ইমতিয়াজ বর্ষণ অভিনীত ওয়েব ফিল্ম অমীমাংসিত। অবশেষে সোমবার রাতে আইস্ক্রিনে মুক্তি পেয়েছে রায়হান রাফী পরিচালিত ওয়েব ফিল্মটি। এ মাসেই প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে বর্ষণের আরেকটি সিনেমা, শুরু করছেন নতুন সিনেমার শুটিংও। সাম্প্রতিক কাজ, আসন্ন সিনেমা ও আগামীর পরিকল্পনা নিয়ে বর্ষণের সঙ্গে কথা বলেছেন মনজুর কাদের

জানা গেছে, বর্ষণের চরিত্রটির নাম অর্ণব—একজন জনপ্রিয় টেলিভিশন সাংবাদিক। ওয়েব ফিল্মটির একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো এর নির্মাণশৈলী। বেশির ভাগ দৃশ্যই ধারণ করা হয়েছে ওয়ানটেক শটে। ফলে শুটিংয়ের চেয়ে মহড়ায় দিতে হয়েছে বেশি সময়। মাত্র ১০ দিনে পুরো শুটিং শেষ হলেও এর আগে দীর্ঘ সময় ধরে প্রস্তুতি নিতে হয়েছে অভিনয়শিল্পীদের।

ইমতিয়াজ বর্ষণ

বর্ষণ বলেন, ‘আমরা ক্যামেরা ছাড়াই অন সেটে মহড়া করেছি। না হলে ওয়ানটেক শট ঠিকঠাকভাবে শেষ করা সম্ভব হতো না। চরিত্রটি সাংবাদিকের হওয়ায় তদন্তের নানা বিষয় ছিল। সে জন্য কয়েকজন জনপ্রিয় টেলিভিশন সাংবাদিককে অনুসরণ করেছি। তদন্তের জায়গাগুলো নিয়ে নিজের পর্যবেক্ষণ পরিচালকের সঙ্গে ভাগ করেছি। এসব মিলিয়েই চরিত্রটিকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার চেষ্টা করেছি।’ দীর্ঘ সময় ধরে মুক্তি না পাওয়ায় হতাশা কাজ করেছিল বর্ষণের মনে। তিনি বলেন, ‘একটি সিনেমার সঙ্গে শুধু শিল্পী নন, অনেক মানুষের শ্রম ও বিনিয়োগ জড়িত থাকে। প্রযোজক অর্থ লগ্নি করেন, পরিচালক তাঁর সৃজনশীল চিন্তা ঢেলে দেন। একজন শিল্পীও কেবল টাকার জন্য কাজ করেন না। শিল্পকর্ম যদি মানুষের কাছে পৌঁছাতে না পারে, তখন কষ্টটা সত্যিই বেশি হয়।’

গত মঙ্গলবার দুপুরে আলাপচারিতার এক পর্যায়ে বর্ষণ জানালেন, সকাল থেকেই মনটা বেশ ভালো। কারণ, ‘অমীমাংসিত’তে অভিনয়ের জন্য ইতিমধ্যে প্রশংসা পেয়েছেন দুজন সমালোচকের কাছ থেকে। অভিনেতা বলেন, ‘ক্রিপটিক ফেইট ব্যান্ডের সাকিব ভাই ফোন করে জানালেন, আমার অভিনয় তাঁর ভালো লেগেছে। তিনি গল্প বলার ধরন নিয়েও প্রশংসা করেছেন। আরেকজন বললেন, গল্প অনুযায়ী দৃশ্যায়ন একেবারে ঠিকঠাকভাবে এগিয়েছে। এমন কথা শুনে ভালো লেগেছে।’

ইমতিয়াজ বর্ষণ

‘এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি’
আহমেদ হাসান পরিচালিত সিনেমা ‘এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি’ মুক্তি পাচ্ছে ২৬ ডিসেম্বর। ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন বর্ষণ। সিনেমাটির পটভূমি ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান হলেও এতে বাংলাদেশের বিভিন্ন সময়ের রাজনৈতিক ইতিহাসও তুলে ধরা হয়েছে। বর্ষণ মনে করেন, রাজনৈতিক সচেতনতা ছাড়া সমাজকে বোঝা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রায়ই দেখি, রেস্টুরেন্ট বা নানা জায়গায় লেখা থাকে—রাজনৈতিক আলাপ নিষেধ। কিন্তু আসলে রাজনৈতিক আলাপটাই সবচেয়ে জরুরি। মানুষ যত বেশি রাজনৈতিকভাবে সচেতন হবে, দেশ নিয়ে ভাবনাও তত গভীর হবে। এই ছবিতে আমরা সেটাই বলতে চেয়েছি।’

আহমেদ হাসান সানি ও ইমতিয়াজ বর্ষণ। কোলাজ

নতুন দুই সিনেমা

বর্তমানে সিনেমার কাজেই বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন বর্ষণ। টেলিভিশন নাটকে কাজ কমিয়ে দিয়েছেন, নিয়মিত কাজ করছেন ওটিটিতেও। সম্প্রতি রাজীব সালেহীনের ‘রবি ইন ঢাকা’ ছবির শুটিং শেষ করেছেন। ২৩ ডিসেম্বর শুরু হবে সৈকত রায়ের ‘রেকর্ডিংস’ ছবির শুটিং। এতে তাঁর সহশিল্পী শার্লিন ফারজানা। এই জুটিকে সর্বশেষ দেখা গেছে মাসুদ হাসান উজ্জ্বলের ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ চলচ্চিত্রে। বর্ষণ বলেন, ‘“ঊনপঞ্চাশ বাতাস” মুক্তির পর আমাদের দুজনকে নিয়ে আরও কিছু ছবির প্রস্তাব এসেছিল। তবে গল্প পছন্দ না হওয়ায় সেগুলো করা হয়নি।’

মূলধারার বাণিজ্যিক সিনেমাতেও অভিনয়ের আগ্রহ রয়েছে বর্ষণের। তিনি বলেন, ‘নাচ, গান, ফাইটনির্ভর সিনেমাও আমার পছন্দ। অনেকেই মনে করেন, আমি আর্টহাউস ঘরানার সিনেমায় বেশি মানাই। তবে আমি বিশ্বাস করি, মূলধারার সিনেমাতেও আমি খারাপ করব না।’ শিহাব শাহীন, রায়হান রাফী ও তানিম নূরের সঙ্গে বড় পর্দায় কাজের আগ্রহের কথাও জানান তিনি।

‘হ্যালির ধূমকেতু’ ব্যান্ডের দুই সদস্য ইমতিয়াজ বর্ষণ ও আহমেদ রাজীব

গানেও আছেন

অভিনয়ের বাইরে ঘোরাঘুরি করতে ভালোবাসেন বর্ষণ। এই ঘোরাঘুরির সঙ্গী গীতিকার, গায়ক ও সুরকার আহমেদ রাজীব। ভ্রমণ করতে করতেই দুজন মিলে গড়ে তোলেন ট্রাভেল ব্যান্ড ‘হ্যালির ধূমকেতু’। শুরুতে কাভার গান প্রকাশের পর তাঁরা নিজেদের মৌলিক গান নিয়ে হাজির হন। এর মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে ‘মেঘে মেঘে’ ও ‘হাওয়ার চিঠি’।

বর্ষণ বলেন, ‘থিয়েটার করতে গিয়ে গানের চর্চা শুরু। কোনো প্রাতিষ্ঠানিক তালিম নেই। গাইতে গাইতেই গানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। রাজীব ভাই আমাকে গানে সবচেয়ে বেশি উৎসাহ দিয়েছেন। গান আমার প্যাশন, ভীষণ উপভোগ করছি। এরই মধ্যে একটি স্টেজ শোতেও পারফর্ম করেছি।’

ইমতিয়াজ বর্ষণ

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ‘অমীমাংসিত’ মুক্তি পাওয়ায় ইমতিয়াজ বর্ষণের মনে এসেছে স্বস্তি। একই সঙ্গে সামনে খুলছে নতুন কাজের পথ। প্রেক্ষাগৃহের সিনেমা, নতুন শুটিং ও সংগীতচর্চা—সব মিলিয়ে সময়টা ব্যস্ত তাঁর। ক্যারিয়ারের এমন এক পর্যায়ে তিনি এখন দাঁড়িয়ে, যেখানে অভিজ্ঞতা ও প্রত্যাশা মুখোমুখি হচ্ছে। চরিত্র বাছাইয়ে সচেতনতা আর কাজের বৈচিত্র্য ধরে রাখতে পারলে এই সময়টাই বর্ষণের অভিনয়জীবনে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে—এমনটাই মনে করছেন সমালোচকেরা।