Thank you for trying Sticky AMP!!

আড্ডায় মেতেছিলেন অভিনয়শিল্পী দীপা খন্দকার, স্বাগতা, ফজলুর রহমান বাবু, সজল, সুইটি, দীব্য, সৌম্য, তাহমিনা মৌ ও জয়

‘আজ কোনো কাজের কথা হবে না’

তারকাদের জন্য দিনটি ছিল অন্য রকম। মেকআপ, শুটিং, বাড়ি ফেরা নিয়ে কোনো ব্যস্ততা ছিল না। দিনটি কেটেছে আড্ডা, হইহুল্লোড়ে। শিল্পীদের কারও সঙ্গে দুই বছর পরে দেখা হচ্ছে। কারও সঙ্গে এক যুগ পর! কেউ ‘বন্ধু’, কেউবা ‘ভাই’ বলে একে অন্যকে আলিঙ্গন করছেন, খোঁজখবর নিচ্ছেন। নবীন–প্রবীণ সবার মেলবন্ধনের উপলক্ষ ছিল অভিনয় শিল্পী সংঘের বিশেষ আয়োজন অ্যাক্টর ইকুইটি ডে। তারকাদের এই পিকনিক ও আড্ডার আয়োজনের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল পূর্বাচলের ইন্টারন্যাশনাল চেইন রিসোর্ট। গতকাল সকাল থেকে রাত পর্যন্ত গল্প, আড্ডায় মেতেছিলেন তারকারা।
শনিবার দুপুর। এক পাশে আড্ডা দিচ্ছিলেন মোশাররফ করিম, ফারুক আহমেদ, রোবেনা রেজা, শামীম জামানরা। কয়েকজন এসে মোশাররফের কাছে জানতে চাইলেন, মহানগর-২ কবে আসবে? এই অভিনেতা কিছুটা বিরতি নিয়ে বললেন, ‘আজ কোনো কাজের কথা হবে না। আজ আমরা আনন্দ করতে এসেছি।’ কিছুদূর এগোতেই দেখা গেল তানভীন সুইটি, মৌ, দীপা খন্দকার, জাকিয়া বারী মম, আজমেরী হক বাঁধন, সুষমা সরকাররা তুমুল আড্ডায় মেতেছেন। কার কতটা ওজন বাড়ল, কে কতটা সুন্দর হয়েছেন—সেসব বলেই হেসে কুটি কুটি হচ্ছিলেন।

এর মধ্যেই জাকিয়া বারী মম হঠাৎ উধাও। তাঁকে খুঁজছিলেন দীপা খন্দকার। একজন বললেন, মম খেতে গেছেন। শুনে দীপা বললেন, ‘ও কি এখানে খেতে এসেছে? কিছুক্ষণ পরপরই কিছু একটা খেতে যায়।’ আড্ডায় যোগ দিলেন অভিনেতা শহীদুল আলম সাচ্চু। তিনি বাঁধনের অভিনয়ের সমালোচনা করলেন। অবাক হয়ে বাঁধন বললেন, ‘আপনি এত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছেন! আপনার গঠনমূলক সমালোচনা ভালো লাগল।’
সকালে শুরু হয়ে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও জমতে থাকে আনন্দ। আড্ডা প্রাণ পায় দিলারা জামান, আবুল হায়াত, মামুনুর রশীদ, সুবর্ণা মুস্তাফা, ফজলুর রহমান বাবু, সজল, জয়দের ঘিরে। পাশেই সজল ও মৌসুমী। জমিয়ে ছবি তুলছিলেন তাঁরা। তাঁদের উদ্দেশে মামুনুর রশীদ বললেন, ‘আমি আর বাদ যাব কেন!’ তাঁকে ডেকে নিলেন সজল। পাশেই পাওয়া গেল তারিক আনাম খানকে। তিনিও আড্ডায় ব্যস্ত। বললেন, ‘এটা তো আমাদের পরিবারের মেলবন্ধন। পরিবার ছেড়ে কি থাকা যায়! দিনটায় সবার সঙ্গে দেখা হয়। ভালো লাগে।’
এদিন দুপুরে হয় অভিনয়শিল্পীদের সাধারণ সভা। সেখানে বসে ছিলেন দিলারা জামান। চোখমুখে খুশির আভা। বললেন, ‘শরীর ভালো না। দুই বছর পর আমাদের এই মিলনমেলা। পরিচিত অনেকেই আসে, তাদের সঙ্গে দেখা হলে মনটা ভরে যায়।’ ঘুরেফিরে এল শর্মিলী আহমেদের কথা। বললেন, ‘আমরা দুজন এর আগেও একসঙ্গে ছিলাম। এবার সে নেই। এই জন্য একা বসে আছি। কিছুটা খারাপ লাগছে।’ সবাই যখন আড্ডায় ব্যস্ত, তখন অভিনেতা ডা. এজাজ ছিলেন অন্য ভূমিকায়। তিনি স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছিলেন। এজাজ জানালেন, রোগী দেখেই তিনি আনন্দ পাচ্ছেন। রোগী দেখার সময় অনেকেই তাঁর রসিকতায় হাসছিলেন।

শুধু আড্ডাই নয়, শিল্পীদের নানা বিষয় উঠে আসে সাধারণ সভায়। অ্যাক্টর হোম, অ্যাক্টরস ক্লাব, জীবনের নিরাপত্তার জন্য যা দরকার—সেসব নিয়ে কথা হয়। সেগুলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পৌঁছে দেবেন বলে জানান অভিনয় শিল্পী সংঘের সভাপতি আহসান হাবিব নাসিম। তিনি বলেন, ‘আমরা খুবই খুশি যে সব প্রজন্মের অভিনয়শিল্পীরা এসেছেন। আমাদের কোনো শিল্পীর বয়স ৯০ পেরিয়ে গেছে, কেউ একদমই তরুণ। সবার মেলবন্ধন ঘটছে। এতে শিল্পীদের ভেতরের বোঝা না–বোঝার বিষয়গুলো দূর হয়।’
অ্যাক্টর ইকুইটি ডের এই পিকনিক ও আনন্দ আয়োজন উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। দ্বিতীয় পর্বে ছিল শিল্পীদের সাধারণ সভা। এক বছর ধরে অভিনয় শিল্পী সংঘের কাজের ফিরিস্তি অভিনয়শিল্পীদের সামনে উপস্থাপন করা হয়। শিল্পীদের পরামর্শ নেওয়া হয়। তৃতীয় পর্বে অভিনয় শিল্পী সংঘের সদস্যদের মধ্যে একুশে পদক ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া শিল্পীদের সম্মানিত করা হয়। সাংস্কৃতিক পর্ব দিয়ে শেষ হয় অনুষ্ঠান। গান পরিবেশন করেন ফজলুর রহমান বাবুসহ আরও অনেকে।

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা পাওয়া ডলি জহুর বক্তব্য দিতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে যান, ‘একজন ডলি জহুরকে যখন কেউ মা বলে, তখন এতটা ভালো লাগে যে বোঝাতে পারব না। দীর্ঘ সময় অভিনয় করে এটা আমার অনেক বড় প্রাপ্তি। আমার সামনে থাকা আমার ছেলেমেয়েরাই আমার পুরস্কার।’
সবশেষে মামুনুর রশীদ বলেন, ‘আমরা বিনোদন দিতে দিতে নিজেরাই ভুলে যাই, নিজেদেরও বিনোদনের দরকার রয়েছে। সবাই এতটা ব্যস্ত থাকি যে সহকর্মীদের সঙ্গেই দেখা হয় না। অনেকের সঙ্গে দেখা হলো, কথা হলো, ভালো লাগছে। শিল্পীদের এটা মনে রাখতে হবে, ব্যস্ত থাকলেও আমাদের মনকে আনন্দ দিতে হবে।’