Thank you for trying Sticky AMP!!

আফজালের ল্যান্ডফোনে প্রায়ই কল করে দুষ্টুমি করতেন সজল

নন্দিত অভিনয়শিল্পী, নির্মাতা ও চিত্রশিল্পী আফজাল হোসেনের সঙ্গে তাঁরই পরবর্তী প্রজন্মের অভিনয়শিল্পী সজলের পরিচয় দীর্ঘ ২৩ বছরের। ২০০০ সালে আফজাল হোসেনের পরিচালনায় বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজের মধ্য দিয়ে বিনোদন অঙ্গনে সজলের পথচলা শুরু। সময়ের পথ পরিক্রমায় তাঁরা সম্পর্কটা এখন অনেক বেশি আত্মিক ও পারিবারিক। দুজন দুজনের রক্তের কেউ না হলেও তাঁদের সম্পর্কটা বাবা-ছেলের মতোই। কেউবা বলেন গুরু–শিষ্য। শুক্রবার সন্ধ্যায় তাঁদের দুজনকে একসঙ্গে পাওয়া গেল ফটোশুটে। রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলের সেই ফটোশুটের পেছনে রয়েছে ভিন্ন এক গল্প। আপাতত সেই গল্প দুজনের কারও কাছ থেকে জানা যায়নি। একনজরে দেখে নেওয়া যাক আফজাল হোসেন ও সজলের কয়েকটি স্থিরচিত্র
সজল তখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ প্রথম বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। ওই সময়টায় জানতে পারেন, আফজাল হোসেনের প্রতিষ্ঠান থেকে তৈরি বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেল হিসেবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। স্ক্রিন টেস্ট দিতে ছুটে যান এই অভিনয়শিল্পী ও পরিচালকের পল্টন এলাকার ‘মাত্রা’ কার্যালয়ে। প্রথম বিজ্ঞাপনচিত্রে স্ক্রিন টেস্ট দিয়ে টিকে গেলেও পরীক্ষা থাকায় কাজের সুযোগ হাতছাড়া হয়। পরে আবার সুযোগ হয় আফজাল হোসেনের পরিচালনায় কাজের। তাঁরই পরিচালিত বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেল হয়ে কাজ করে বিনোদন অঙ্গনে যাত্রা শুরু হয় সজলের। দুই দশকের বেশি সময়ের ক্যারিয়ারে ১০টি মতো বিজ্ঞাপনচিত্রে অভিনয় করেন সজল। এর মধ্যে আটটি আফজাল হোসেনের পরিচালিত
বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজের সুবাদে আফজাল হোসেনের সঙ্গে একটা চমৎকার সম্পর্ক তৈরি হয় সজলের। এরপর নাটকেও কাজ শুরু করেন আফজাল হোসেনের নির্দেশনায়। অভিনয়জীবনের দ্বিতীয় কাজটিতে পরিচালক হিসেবে পেয়ে যান তাঁকে। ‘মুনিরা মফস্বলে’ শিরোনামের টেলিছবিটি ছিল সেলিম আল দীনের লেখা। পরবর্তী সময় আফজাল হোসেন পরিচালিত ‘হীরাফুল’ নাটকে অভিনয়শিল্পী হিসেবে দর্শকমহলে স্বীকৃতি পান সজল
‘মুনিরা মফস্বলে’ টেলিছবির শুটিং করেছিলেন ঢাকার অদূরে ধামরাইয়ে। এই টেলিছবিতে সজল সহশিল্পী হিসেবে পেয়েছিলেন নুসরাত ইমরোজ তিশাকে। সজল জানালেন, ১ ঘণ্টা ৯ মিনিট ব্যাপ্তির এই টেলিছবির শুটিং সে সময় ১৭ দিন করেছিলেন তাঁরা।
আফজাল হোসেনের সঙ্গে সজলের কাজের সূত্রে সরাসরি পরিচয়টা একটা সময় বেশ গভীর হয়। তবে দেশের নন্দিত এই অভিনয়শিল্পীর সঙ্গে তাঁর অন্য রকম একটা পরিচয় হয়েছিল, যখন সজল পুরান ঢাকার হাজারীবাগে থাকতেন এবং চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী। কথা প্রসঙ্গে সেই সময়ের স্মৃতি মনে করলেন। সজল বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমার মা, খালা ও বাবাদের কাছে স্বপ্নের একটি নাম ছিল আফজাল হোসেন। তাদের দেখাদেখি আমারও ভালো লাগত। একদিন বেশ ইন্টারেস্টিং একটি ঘটনা ঘটল। আমাদের বাসায় একটা ফোন এল। ধরতেই একজন জিজ্ঞাসা করলেন, এটা কি আফজাল হোসেনের বাসা? বললাম না তো। একই সঙ্গে জানতে চাইলাম, তা কত নম্বরে ফোন করেছেন? ফোন নম্বরটা বললেন। দেখলাম, আমাদের নম্বর ছিল ৫০১৫৫০ আর আফজাল আঙ্কেলেরটা ছিল ৫০১৫৫৬। আমি তো মহাখুশি। আফজাল হোসেনের ফোন নম্বর পেয়ে গেছি। দুষ্টু আমি এরপর প্রায়ই তাঁর বাসায় ফোন করতাম। অনেক দুষ্টুমিও করতাম।’
কথায় কথায় সজল এ–ও বলেন, ‘শুটিং করতে করতে একটা সময় আফজাল হোসেনের সঙ্গে আমার চমৎকার সম্পর্ক তৈরি হয়। কখন যে এতটা আন্তরিক হয়ে উঠেছি, তা বলে বোঝাতে পারব না। বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া এই আমি পরীক্ষার গ্যাপে শুটিং করতাম। শুটিং অবসরে আবার পড়াশোনা করতাম। আমি যখন পড়তে বসতাম, তখন আমার পড়াশোনার ব্যাঘাত যাতে না ঘটে, সেই ব্যবস্থা করতেন। নিজেই আমাকে পড়ার টেবিলে চা-নাশতা এনে দিতেন। অদ্ভুত এক ভালো লাগা কাজ করতে শুরু করে। একটা সময় তা ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায় রূপ নেয়। আমার ভীষণ আবেগের জায়গা তিনি।’ সজল জানালেন, সম্পর্কটা খুব গভীর থেকে যখন গভীরে ঠিক একদিন ল্যান্ডফোনে ছোটবেলায় করা দুষ্টুমির গল্প আফজাল হোসেনকে জানান। এটা শুনে তিনিও অবাক হন এবং বেশ হাসাহাসি করেন তাঁরা।
আফজাল হোসেনের পরিচালনায় সজল সর্বশেষ অভিনয় করেন ছোট কাকু সিরিজের গল্প নিয়ে তৈরি ঈদের বিশেষ নাটকে, ‘খালি খালি নোয়াখালী’। একুশে পদকপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগরের ছোট কাকু সিরিজের গল্প নিয়ে তৈরি বিশেষ নাটকটি ২০১৯ সালের ঈদে প্রচারিত হয়। ওই নাটকে চলচ্চিত্রের খলনায়ক আকিজ খান চরিত্রে অভিনয় করছেন সজল।
আফজাল হোসেনের হাত ধরে অভিনয়ে এসে দারুণভাবে দর্শকপ্রিয়তা পান। একসময় নিজের অভিনয় দিয়ে সজল নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। তাই তো আফজাল হোসেনের প্রতি তাঁর কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। সজল জানালেন, ‘আমার এই জীবনে যার অবদান সবচেয়ে বেশি, তিনি দ্য আফজাল হোসেন। তিনি আমার গুরু, আমি তাঁর শিষ্য। যার কাছ থেকে দাঁড়ানো, ওঠা, বসা, কথা বলা, হাউ টু এক্সপ্রেস ইয়োরসেলফ। কী করা উচিত, কী করা উচিত নয়, কী ভাবা উচিত, কীভাবে ভাবা উচিত, সবকিছু , সবকিছু শেখা। ধন্য, আপনার মতো একজন শিক্ষক পেয়েছিলাম এ জীবনে।’