হানিফ সংকেত
হানিফ সংকেত

ভবিষ্যৎ দেখতে চাই তারুণ্যের আয়নায়: হানিফ সংকেত

তিনি বলেন সাধারণ ও বিপন্ন মানুষের কথা। তিনি জ্বলেন ভন্ডামি দেখলে। তিনি চলেন দর্শকের ভালোবাসা নিয়ে। মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসা আর আশীর্বাদ পাওয়া এই সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হানিফ সংকেত। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন কবির বকুল

প্রশ্ন

আপনার প্রথম টিভি উপস্থিতি ফজলে লোহানীর ‘যদি কিছু মনে না করেন’ দিয়ে। শুরুতেই যদি তাঁকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করতেন।

হানিফ সংকেত: ফজলে লোহানী ছিলেন একজন লেখক, সাংবাদিক, উপস্থাপক; একজন উদার হৃদয়ের বিবেকবান আধুনিক মানুষ। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের টিভি সাংবাদিকতার জনক। টেলিভিশনের প্রথম সুপারস্টার। একসঙ্গে দীর্ঘদিনের পথচলায় তিনি হয়ে উঠেছিলেন আমার বন্ধু এবং অভিভাবক। তিনি কখনো সিরিয়াস বা গম্ভীর থাকতেন না, সব সময় থাকতেন হাসিখুশি। তাঁর সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি। কোনটা রেখে কোনটা বলব।

প্রশ্ন

বিটিভিতে ‘ইত্যাদি’র প্রথম পর্ব প্রচারিত হয়েছিল ১৯৮৯ সালের মার্চ মাসে। সে হিসাবে তিন যুগ হয়ে গেল। ছত্রিশ বছর একটি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানকে সমান দর্শকপ্রিয়তায় ধরে রাখা—কীভাবে সম্ভব হয়েছে?

হানিফ সংকেত: সেই নব্বইয়ের দশক থেকেই আমরা শিকড়ের সন্ধানে ‘ইত্যাদি’কে স্টুডিওর চারদেয়াল থেকে বের করে গিয়েছি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে, দেশকে জানতে এবং জানাতে। উপহার দিয়েছি অনেক শিল্পী, অভিনেতা ও নতুন প্রতিভা—যাঁরা আজ প্রতিষ্ঠিত। দর্শকেরা তাঁদের মূল্যবান সময় বের করে ইত্যাদি দেখছেন—সেই ব্যাটারিচালিত টিভি দেখার দিন থেকে বর্তমান অনলাইনের যুগ পর্যন্ত। দর্শকের ভালোবাসা আর সমর্থনের কারণেই ইত্যাদির এই দীর্ঘ যাত্রা সম্ভব হচ্ছে। আর এতে ছিল আন্তরিকতা, পরিশ্রম, মেধা, সততা ও দেশের জন্য, সমাজের জন্য, মানুষের জন্য কাজ করার দায়বোধ।

প্রশ্ন

ইত্যাদির শুরু থেকে আজ পর্যন্ত এর ফরম্যাট প্রায় অপরিবর্তিত। দর্শকের আগ্রহ কীভাবে ধরে রেখেছেন?

হানিফ সংকেত: দর্শকের মনে স্থান পাওয়ার বিষয়টিই আমাদের কাছে মুখ্য। আসলে আমরা সময়কে ধরে দর্শকদের কথা চিন্তা করে বিষয়–বৈচিত্র্যে অনুষ্ঠান সাজাই। ফরম্যাট থাকলেও নতুন নতুন স্থানে করার কারণে প্রতিটি অনুষ্ঠানের আঙ্গিক ও বিষয়বস্তু থাকে নতুন। প্রতিটি অনুষ্ঠানেই দর্শকেরা একেকটি জেলার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারেন। প্রতিটি অনুষ্ঠানেই লক্ষাধিক দর্শকের সমাগম হয়। দর্শকের এই ভালোবাসাও আমাদের শক্তি।

প্রশ্ন

অনুষ্ঠান তৈরির সময় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী থাকে?

হানিফ সংকেত: প্রতিটি অনুষ্ঠানেই থাকে দর্শকদের প্রত্যাশার চাপ। তাঁদের সেই প্রত্যাশা পূরণ করা আমাদের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ। আমাদের লক্ষ্য থাকে প্রতিটি অনুষ্ঠানই যেন আগের পর্বের চেয়ে বেশি আকর্ষণীয় হয়।

হানিফ সংকেত। প্রথম আলো
প্রশ্ন

ইত্যাদির মাধ্যমে আপনি বরাবরই সমাজের অসংগতি ও ইতিবাচক দিক তুলে ধরেন—এই ভাবনা কীভাবে তৈরি হয়েছিল?

হানিফ সংকেত: টেলিভিশনের আগে স্কুল এবং কলেজজীবনে আমি লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। একসময় জাতীয় পত্রিকায় ছোটদের পাতায়ও লিখতাম। তখনো আমি চারপাশের অসংগতি নিয়ে লিখতে চেষ্টা করেছি। কারণ, আমি বিশ্বাস করি, অসংগতি-অনিয়ম দূর হলেই সমাজ শুদ্ধ হবে। এই ভাবনা থেকেই ইত্যাদিতেও অনিয়ম ও অসংগতি তুলে ধরি এবং এর বিপরীতে বিভিন্ন আলোকিত মানুষদের তুলে আনি।
ইত্যাদির মাধ্যমে আপনি সমাজে কী ধরনের পরিবর্তন আনতে চেয়েছেন?
হানিফ সংকেত: ইত্যাদির প্রতিবেদন যেমন বহুমুখী তেমনি সমাজসচেতনতায়ও বহুমাত্রিক। বিশেষ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক ক্ষেত্রে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিবেদিতপ্রাণ মানুষের অনুসন্ধানে আমরা ছুটে বেড়াই সারা দেশে। তুলে আনি প্রচারবিমুখ, সৎ, সাহসী ও জনকল্যাণে নিয়োজিত মানুষদের। তাঁদের মধ্যে অনেকেই পেয়েছেন সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সম্মান। অনেক দুর্নীতি ও অনিয়মের চিত্র তুলে ধরার ফলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সমস্যার প্রতি কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি পড়ে। ফলে এগিয়ে আসে সমস্যার সমাধানে। এ ছাড়া ইত্যাদির মাধ্যমে গড়ে উঠেছে অনেক সামাজিক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

প্রশ্ন

আপনি প্রায়ই সামাজিক বার্তা দেন। বর্তমান সমাজে কোন বিষয়গুলো আপনার কাছে সবচেয়ে উদ্বেগজনক?

হানিফ সংকেত: ভয়ংকর সব সামাজিক ব্যাধি আমাদের সমাজে ছড়িয়ে পড়ছে। ধর্ষণ, সন্ত্রাস, নারী নির্যাতন, দুর্নীতি, রাজনৈতিক সহিংসতা, হত্যাসহ নানা ধরনের অপরাধপ্রবণতা সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। পরিবেশ ও সামাজিক মাধ্যমে অশ্লীলতা ছড়ানো নিয়েও সবাই উদ্বিগ্ন। আমরা চাই এমন একটি দেশ, যার পরিবেশ হবে দূষণমুক্ত। বাতাস হবে নির্মল। পানি হবে স্ফটিক স্বচ্ছ। মাটি হবে সজীবতায় উর্বর।

প্রশ্ন

আপনার জীবনে কোনো ঘটনা কি আপনাকে সব সময় অনুপ্রাণিত করে রেখেছে?

হানিফ সংকেত: কোনো একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে সাধারণ মানুষের যে ভালোবাসা পাই, ইত্যাদির মাধ্যমে উপকৃত হওয়া অসহায় মানুষ ও তাঁদের পরিবারের মুখে যখন হাসি দেখি, ইত্যাদি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে কেউ যখন জনকল্যাণে এগিয়ে আসেন, তখন আমিও অনুপ্রাণিত হই। যেমন বাজিতপুরের হাওরের ভাসমান স্কুলে একসময় জীবন বাজি রেখে ছোট একটি নৌকায় করে স্কুলে আসত শিক্ষার্থীরা। ইত্যাদির মাধ্যমে একটি বড় ইঞ্জিনবোট পেয়ে সেই কিশোর-কিশোরীরাই যখন আনন্দে গান গাইতে গাইতে স্কুলে আসে কিংবা মিরসরাইয়ের পাহাড়ি এলাকা তালবাড়িয়া ত্রিপুরাপাড়ায় তিন যুগ ধরে পানির সংকটে থাকা ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী ইত্যাদির মাধ্যমে গভীর নলকূপ পেয়ে যখন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে, তখন অনুপ্রাণিত হই। এমন শত শত অনুপ্রেরণার ঘটনা রয়েছে ইত্যাদির দীর্ঘ যাত্রায়।

এন্ড্রু কিশোর ও হানিফ সংকেত। হানিফ সংকেতের ফেসবুক থেকে
প্রশ্ন

প্রতিটি পর্ব তৈরির সময় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন কোন বিষয়টিতে—বিনোদন, বার্তা নাকি নৈতিকতা?

হানিফ সংকেত: প্রথমেই নৈতিকতা, এরপর বার্তা নয় বরং বস্তুনিষ্ঠ বার্তা, যা সচরাচর দেখা যায় না। টেলিভিশনের মূলমন্ত্র হচ্ছে শিক্ষা-তথ্য ও বিনোদন। আর ইত্যাদি যেহেতু তথ্য-শিক্ষা ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান, তাই ‘ইত্যাদি’তে থাকে এ তিনটির সমন্বয়।

প্রশ্ন

ইত্যাদির বাংলাদেশ ট্যুরের ধারাবাহিকতায় কতগুলো জেলায় এ পর্যন্ত ইত্যাদি ধারণ করা হয়েছে? কতগুলো বাকি আছে?

হানিফ সংকেত: বাংলাদেশের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ স্থানেই ইত্যাদি করা হয়েছে। আর জেলাভিত্তিক এ পর্যন্ত ৫১টি জেলায় করা হয়েছে। এখনো ১৩টি জেলা বাকি রয়েছে। তবে জেলা ছাড়াও ইতিহাস-ঐতিহ্য-শিল্প-সংস্কৃতি, প্রত্নসম্পদ বিবেচনায় দেশের আরও অনেক স্থানেই ইত্যাদি ধারণ হয়েছে। সে ক্ষেত্রে কোনো কোনো জেলায় তিন–চারবারও করা হয়েছে।

প্রশ্ন

নতুন প্রজন্মের দর্শকদের কথা ভেবে কি ইত্যাদিতে কোনো পরিবর্তনের পরিকল্পনা আছে?

হানিফ সংকেত: আমরা তিন যুগ ধরে বিভিন্ন প্রজন্মকে সঙ্গে নিয়ে অনুষ্ঠান করছি। সব সময়ই আমরা সময়কে গুরুত্ব দিয়ে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে, সব বয়সের, সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য অনুষ্ঠান করি।

‘ইত্যাদি’র মঞ্চে হুমায়ুন ফরিদীর সঙ্গে হানিফ সংকেত। ছবি: সংগৃহীত
প্রশ্ন

চারদিকে এত চ্যানেল, তারপরও এখনো শুধু বিটিভিতেই কেন অনুষ্ঠান করেন?

হানিফ সংকেত: এই প্রশ্নের উত্তর বহুবার দিয়েছি। আমি যখন অনুষ্ঠানটি শুরু করি, তখন দেশে কোনো স্যাটেলাইট চ্যানেল ছিল না। তা ছাড়া বিটিভির সঙ্গে আমার একটা আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে। এই টিভিতেই আমার যাত্রা শুরু হয়েছে। ছোটবেলা থেকে আমাকে এই পর্দায় দেখে দেখেই অনেকে বড় হয়েছেন। যেহেতু এই টেলিভিশনটি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন, কোনো ব্যক্তিবিশেষের নিয়ন্ত্রিত নয়, সরকার নিয়ন্ত্রিত। স্বভাবতই সরকারি টেলিভিশন হিসেবে বিটিভি যখন যে সরকার তখন তার, আর আমি সবার। যেহেতু আমি রাজনীতি থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকি, তাই সরকার বদলালেও ইত্যাদি কখনো বদলায়নি।

প্রশ্ন

আমরা মাঝেমধ্যে শুনি বাংলাদেশ টেলিভিশনে সময়ে–সময়ে কালোতালিকাভুক্তির একটা প্রচলন আছে? আপনি কি এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন?

হানিফ সংকেত: ব্যক্তিগতভাবে আমি কখনোই এই পরিস্থিতির শিকার হইনি। তবে কালোতালিকা শব্দটি একটি অলিখিত প্রচলন। ইত্যাদির এই ৩৭ বছরে পাঁচটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং পাঁচটি রাজনৈতিক সরকারের সময়কাল অতিবাহিত হয়েছে। টেলিভিশন থেকে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক কারণে কিছু শিল্পীকে নিষিদ্ধ করা হতো। আমার অনুষ্ঠানেও দু–একজন শিল্পীর ব্যাপারে বিভিন্ন সময়ে আপত্তি উঠেছে। তবে রাজনৈতিক দোষে দুষ্ট ও সুবিধাভোগী শিল্পীদের আমি এমনিতেই এড়িয়ে চলি। ব্যক্তিগতভাবে আমি রাজনীতি সচেতন, তবে কোনো রাজনীতি করি না। কারণ, আমি মনে করি, শিল্পীদের সরাসরি রাজনীতিতে জড়িত হওয়া উচিত নয়।

হানিফ সংকেত
প্রশ্ন

আপনি সব সময় সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তনের কথা বলেন। কীভাবে একজন সাংস্কৃতিক কর্মী সমাজে প্রভাব ফেলতে পারেন বলে মনে করেন?

হানিফ সংকেত: প্রথমত একজন শিল্পীকে দর্শকের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। নীতিনৈতিকতা, সততা, সবকিছু দিয়ে দর্শকের কাছে তাঁকে সচ্চরিত্রের মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। সুস্থ সাংস্কৃতিক চর্চা করতে হবে, অপসংস্কৃতি নয়। ইত্যাদিতে আমরা সুস্থ সংস্কৃতি, দেশীয় সংস্কৃতি তুলে ধরতে চেষ্টা করি। কারণ, শিক্ষা যেমন জাতির মেরুদণ্ড, সংস্কৃতিও তেমনি সমাজবদ্ধ জাতির পরিচয়। সবাই যদি যার যার ক্ষেত্রে সৎ, সৃষ্টিশীল এবং সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা করেন, তবেই সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারবেন।

প্রশ্ন

আপনি সব সময় সুস্থ বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান উপহার দিয়ে আসছেন এবং এটাই ইত্যাদির বৈশিষ্ট্য। কিন্তু এখন হাতে হাতে মুঠোফোনের কারণে অসুস্থ বিনোদনের উৎস অবারিত। এই স্রোত নিয়ন্ত্রণ করা কি সম্ভব?

হানিফ সংকেত: এই অসুস্থ স্রোত নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রয়োজন সম্মিলিত উদ্যোগ। সংস্কৃতিকর্মী, শিক্ষক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ, সবারই এ ব্যাপারে দায় ও দায়িত্ব রয়েছে। আর প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রণ যেহেতু সরকারের হাতে, তাই এ ব্যাপারে সরকারকেও আরও কঠোর ও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

প্রশ্ন

প্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের যুগে শিল্প-সাহিত্য কতটা চ্যালেঞ্জের মুখে?

হানিফ সংকেত: এখনকার প্রযুক্তি এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের যুগে শিল্প-সাহিত্য নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। এই ডিজিটাল মাধ্যমের কারণে মানুষের স্বভাবে নানা প্রভাব পড়ছে। মনোযোগের মাত্রা কমে যাচ্ছে। ভালো জিনিসের চেয়ে খারাপ জিনিস ছড়িয়ে যাচ্ছে খুব দ্রুত। এ থেকে উদ্ধার করাটাই একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এ ব্যাপারে গণমাধ্যমসহ সবারই আরও বেশি সচেতন হতে হবে। যাতে প্রযুক্তি এবং শিল্প-সাহিত্য হাত ধরাধরি করে চলতে পারে। তবে এই চ্যালেঞ্জের মধ্যেই নতুন সম্ভাবনা আর সৃজনশীলতার ক্ষেত্রও তৈরি হচ্ছে।

২০০৩ সালে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার অনুষ্ঠানের ফাঁকে প্রয়াত নায়করাজ রাজ্জাক ও প্রয়াত চিত্রনায়িকা কবরীর সঙ্গে হানিফ সংকেত। ছবি: প্রথম আলো
প্রশ্ন

আমাদের সংস্কৃতির জগৎটা ক্রমান্বয়ে অবক্ষয়ের দিকে যাচ্ছে বলে সংস্কৃতিবোদ্ধাদের অভিমত। আপনি কী মনে করেন?

হানিফ সংকেত: এই অবক্ষয়ের প্রধান কারণ এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দায়বোধের চেয়ে আয়বোধের গুরুত্বটা বেশি। এখন ভিউ মানেই আয়। যেহেতু উচিত-অনুচিত সূচিত হয় রুচিগত পার্থক্যে। এখন নিম্নরুচির খারাপ বিষয়ও ‘কনটেন্ট’। তাই ভাইরাল নামের এক ভয়ংকর ভাইরাস আমাদের সংস্কৃতিকে গ্রাস করে ফেলছে। সৃজনশীলতার চেয়ে শিল্প-সংস্কৃতি এখন অনেকের কাছেই ব্যবসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চ্যানেল কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে বেশির ভাগ শিল্পী, নির্মাতার মধ্যেই ‘কী দিলাম এর চেয়ে কী পেলাম’–এর হিসাবটা বেশি। ফলে সংস্কৃতি তার আসল উপাদান হারিয়ে ফেলছে। এসব থেকে পরিত্রাণ তো দূরের কথা বরং টিভি সিরিয়ালে, ওয়েব সিরিজে, ওয়েব ফিল্মে গালির উত্তরণ ঘটছে। আজকাল বিদগ্ধ বলে কথিত ব্যক্তিরাও একে পৃষ্ঠপোষকতা করছেন। এঁরাও এখন গালিকে শিল্পের অলংকার ভাবা শুরু করেছেন। যে কারণে সুস্থ দর্শকদের অসুস্থ করার সময় এসেছে। আজকাল সুস্থ লেখা, নান্দনিক ভিডিও ছড়ায় না। ছড়ায় অশ্লীল কথা, অশ্লীল দৃশ্য, ফাঁস হওয়া নোংরা কলরেকর্ড। এ ধরনের ভাইরাল বিষয় তরুণ প্রজন্মের ওপর প্রভাব ফেলছে। এগুলো থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমাদের আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

প্রশ্ন

আগামী প্রজন্মের জন্য আপনার একটাই বার্তা কী হবে?

হানিফ সংকেত: আমরা দেশ বা সমাজের ভবিষ্যৎ দেখতে চাই তারুণ্যের আয়নায়। তরুণদের নিয়ে সব সময় আশার আলো দেখি—বিভিন্ন সময় তরুণদের অনেক সফলতার চিত্রও তুলে ধরেছি ইত্যাদির মাধ্যমে। তাই তরুণদের প্রধান গুণ হতে হবে সততা। সৎ ও নির্মোহ তরুণেরা তুলে নেবে ভার—সব অসংগতি দূর করে বিশ্বের শীর্ষে পৌঁছাবার।

প্রশ্ন

অনেকেই বলেন বা আমরা দেখি, আপনার কোনো উত্তরসূরি নেই। এর দায় কি আপনার ওপর কিছুটা বর্তায়?

হানিফ সংকেত: সব সময় সবার যোগ্য উত্তরসূরি থাকে না। কিছু অনুষ্ঠানে দর্শকেরা উত্তরসূরিকে গ্রহণ করেন না। তাঁকে নিজ মেধায় ও যোগ্যতায় নতুন কিছু সৃষ্টি করতে হবে। ইংরেজিতে ‘ইউনিকনেস’ বলে একটা কথা আছে। এর অর্থ, প্রতিটি বস্তু বা বিষয় অনন্য। মানুষের ক্ষেত্রেও সেটা প্রযোজ্য।

হানিফ সংকেত। ছবি : ফাগুন অডিও ভিশনের সৌজন্যে