আজ অভিনেতা আরশ খান এর জন্মদিন। এই দিনে সামনে এসেছে ওটিটির কাজে যুক্ত হওয়ার খবর। ‘রক্তঋণ’ নামে ওয়েব সিরিজে অভিনয় করছেন। বিশেষ এই দিনের শুরুতেই মায়ের কাছ থেকে পছন্দের উপহার পেয়েছেন। দিনটিতে নানা পরিকল্পনা থাকলেও কীভাবে কাটাচ্ছেন, সেসব নিয়ে ‘বিনোদন’-এর মুখোমুখি হলেন।

শুভ জন্মদিন।
আরশ খান: অনেক ধন্যবাদ।
দিনটি কীভাবে কাটছে?
আরশ খান: আসলে এই দিনে বয়স বেড়ে যায়। জীবন থেকে একটি বছর কমে গেল। এসব চিন্তার মধ্যে খারাপও লাগে। পরিচিত অনেকে চান তাঁদের সঙ্গে সময় কাটাই, কিন্তু হয়ে ওঠে না। আর এই দিনে মনের কোথায় যেন একটা কষ্ট থাকে। সব মিলিয়ে দিনটি খুব বেশি আনন্দে কাটাতে পারি না। তবে সবাই খোঁজখবর নেন, আমাকে নিয়ে পরিকল্পনা করেন, এগুলো ভালো লাগে।
ফেসবুকে রাতে মায়ের সঙ্গে ছবি পোস্ট করেছেন...
আরশ খান: জন্মদিনে মা আমাকে চমকে দিয়েছেন। আমার ঘরে কোনো আয়না ছিল না। এবার মা আয়না উপহার দিয়েছেন। সেই আয়নার সামনে এখনো মুখ দেখছি। এ ছাড়া বই দিয়েছেন। পছন্দের বই। পরিবারের সঙ্গেই দিনটা দারুণ কাটছে।
আপনার পছন্দের লেখক কারা?
আরশ খান: বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় আমার পছন্দের শীর্ষে। আহমদ ছফা, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, একসময় হুমায়ূন আহমেদের লেখা অনেক পড়েছি। আমি পড়তে ভীষণ ভালোবাসি। শুটিং না থাকলে পড়েই সময় কাটে।
সাম্প্রতিক সময়ে আপনার কাজের সংখ্যা কম মনে হচ্ছে?
আরশ খান: আমি এখন কম কাজ করি। দেখা যায় আগে দুই দিনে একটি নাটকের শুটিং করতাম। এখন তিন চার দিনে চেষ্টা করি একটি ভালো কাজের। তা ছাড়া আমার লেখালেখির শখ শৈশব থেকেই। অনেক নাটকের গল্পও আমার লেখা। একটি কাজের পেছনে সময় দেওয়ার জন্যই কাজের সংখ্যা বাড়াচ্ছি না। আমার বেঁচে থাকার জন্য যে টাকা দরকার, সেটাই আয় হলেই খুশি। বাড়তি কিছুই আমার দরকার নেই।
বাড়তি কিছু বলতে...
আরশ খান: ধরেন একজন অভিনেতার কী দরকার? একটা গাড়ি। এখনো কিন্তু আমার কোনো গাড়ি নেই, বাড়ি নেই। আমার অবস্থা এমন যে আমি যদি এই মাসে কাজ না করি তাহলে আগামী মাস চলতে পারব না। বাসাভাড়া দিতে পারব না। আমার জমানো টাকাও নাই। জুলাই বিপ্লবের মধ্যে কাজ না করায় এক মাস পরে বাসা ভাড়া দিয়েছি।
আপনার জীবনযাপন সম্পর্কে কিছু বলবেন?
আরশ খান: আমি সাধারণ জীবনযাপন করি। আমি উচ্চাভিলাষী না। কষ্ট কী সেটা আমি জানি। সত্য বলতে, আমার গাড়ি-বাড়ি কিছুই নাই, আমি পোশাক ভ্যানগাড়ি থেকে কিনি। এসব নিয়ে আমার কষ্ট নাই। যখন যা ভালো লাগে, সেটাই করি। এটাই আমি।
ভ্যানগাড়ি থেকে পোশাক কিনতে গেলে দোকানদাররা চিনে ফেলেন না?
আরশ খান: আমি ভ্যান থেকে জামাকাপড় কিনতে গেলে তাঁরাই অবাক হন। কিন্তু আমি কখনোই এগুলোকে অন্যভাবে নিই না। এসব প্যান্ট দামি ব্র্যান্ডেরই। আমাদের দেশের গার্মেন্টসের তৈরি। এসবই বিদেশে যায়। আমাকে অনেক সময় দামি ব্র্যান্ড টানে না। এখানেই আমি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। অনেক সময় দেখা যায়, তরুণেরা কেউ কেউ দামি জামাকাপড়ের জন্য পরিবারকে চাপ দেয়। তাদের অনুরোধ করব, জামাকাপড়ের জন্য মা-বাবার ওপর চাপ সৃষ্টি করবেন না। বাবা-মায়ের হয়তো কষ্ট হবে।
আপনি বললেন, এ মাসে কাজ না করলে আগামী মাস চলতে পারবেন না...
আরশ খান: আমি অনেক সংগ্রাম করে আজকের জায়গায় এসেছি। একসময় টাকার জন্য অডিশনে যেতে পারিনি। অনেকের সহায়তায় অডিশনে গিয়েছি। অর্থনৈতিক টানাপোড়েন তো ছিলই। একবার আমার মা অনেক অসুস্থ। কয়েক দিন হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল। ৭০ হাজার টাকা বিল আসে। আমার কাছে কোনো টাকাই ছিল না। হাহুতাশ ছাড়া কিছুই করার ছিল না। এর মধ্যে আমার পরিচিতি কিছু মানুষ কীভাবে কীভাবে আমাকে পুরো টাকা দেয়। সেই দিন আমি শিখেছি মানুষের পাশে আমাকে সব সময় দাঁড়াতে হবে। যে কারণে এখন আমি যে টাকা আয় করি, তার মধ্যে নিজের জন্য কিছু রেখে, বাকি টাকা সবই যার প্রয়োজন জানতে পারলে তাকে দিয়ে দিই। আমার কাছে এটাই মনে হয়, আবার আমার যদি কোনো দিন টাকা না থাকে, তখন কেউ না কেউ সহায়তায় এগিয়ে আসবেন। কারণ, আমার কষ্টের সময়গুলোয় আমি তারকা ছিলাম না।
বললেন, অডিশনে যাওয়ার ভাড়া ছিল না...
আরশ খান: আমাকে আজকের জায়গায় আসতে বহু মানুষ সহায়তা করেছেন। তাঁদের সবাই আমার জীবনের জন্য উপহার। এখনো যখন কোনো কাজে যাই সেসব মানুষের কথা স্মরণ করি। তাঁদের আমি সামনে রাখি। এটাই মনে করি, একজন আরশ একা নন। এই মানুষদের জন্য যদি একটু কিছু করতে পারি তাহলেই আমি ভালো থাকব। আমি এই মানুষগুলোর সঙ্গে সারা জীবন কাটাতে চাই। তাঁরাই আমার পরিবার।
এখনো তো চাইলে ৩০ দিনই অভিনয় করতে পারেন...
আরশ খান: আমি চাইলে পুরো মাস টানা কাজ করতে পারি। আমি লাখ লাখ টাকা কামাতে পারি। কিন্তু আমি তা চাই না। আমার একটা ভক্ত তৈরি হচ্ছে, তাঁদের মানসম্পন্ন কাজ উপহার দিতে চাই। এমন না সেটা তাঁদের পছন্দের কাজ। আমি তাঁদের আমার পছন্দের কাজ উপহার দিতে চাই। তাহলেই তাঁরা আমাকে বেশি ভালোবাসবেন। তাঁদের পছন্দের কাজ করলে গল্পগুলো হয়তো সস্তা হয়ে যাবে। সেটা আমার দর্শকেরা চান না। আমিও নিজের পছন্দের বাইরে তাদের সঙ্গে শুধু ভিউ হবে, এমন গল্প ভাগাভাগি করে তাঁদের সঙ্গে প্রতারণা করতে চাই না। কারণ, ভালোবাসা দায়বদ্ধতা থেকে টেকসই হয়।
আপনার দর্শকদের নিয়ে মজার অভিজ্ঞতা...
আরশ খান: আমার আলাদা একটি দর্শক তৈরি হয়েছে, সেটা বুঝতে পারি। এমনও হয়েছে দর্শকেরা আমাকে পেয়ে কাঁধে তুলে আনন্দিত হয়েছেন। ঢাকার বাইরে দূরদূরান্ত থেকে হাজার হাজার দর্শক এসেছেন শুটিং দেখতে। বরিশালে একবার, এত ভক্ত আমাকে দেখার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন যে পালিয়ে আমাকে বাইকে শুটিং লোকেশনে যেতে হয়েছিল। এই অভিজ্ঞতা এখন নিত্য। এই ভক্তরাই আমার সেরা অর্জন। এমন ভক্ত থাকলে যেকোনো সিদ্ধান্তই নেওয়া যায়।
যেকোনো সিদ্ধান্ত বলতে কী বুঝিয়েছেন?
আরশ খান: যেমন আমি পছন্দের গল্প না হলে করব না। বাধ্য হয়ে কোনো গল্পে নাম লেখাব না। একসময় অনেক পরিচালক আমাকে নিয়ে কাজ করতে চাইতেন না। তাঁদের মধ্যে এখন কেউ কেউ কাজ করছেন। যাঁরা এখনো আমাকে নিয়ে নাক সিটকান, তাঁদের সঙ্গে আর কাজ করার ইচ্ছা নেই। আমার একটি পরিবার হয়ে গেছে। এদের সঙ্গেই কাজ করব। একজীবনে সব তো হয় না। যা হয়েছে এতেই শুকরিয়া। যাঁরা যোগ্য ভাবেন না, তাঁদের কাছে যোগ্য হয়ে উঠতে হবে, সেটা আমি মনে করি না। আমি আমার মতো চলতেই পছন্দ করি।
এবার ভালোবাসা দিবসে কতগুলো কাজ করেছেন, কারও সঙ্গে জুটি হয়ে একাধিক কাজে দেখা যাবে?
আরশ খান: কতগুলো কাজ রিলিজ হবে জানি না। ৮-১০টা হতে পারে। কমও হতে পারে। তবে জুটি হয়ে কাজ করিনি। সবার সঙ্গেই আমি কাজ করছি। একসময় সবার সঙ্গে কাজ করা হতো না। এখন চেষ্টা করি দর্শকদের জন্য ভেরিয়েশন আনতে।
এখন তো ব্যস্ত তারকা আপনি। গাড়ির প্রয়োজন বোধ করেন কি?
আরশ খান: কী বলব ভাই, আমার যে গাড়ি নেই, এটা কাউকে বোঝাতে পারি না। আসলে আমার ওত টাকা নেই। টাকা হাতে এলে থাকে না। এটা বুঝি একটা গাড়ি খুবই দরকার। সামনে কোনো দিন হলে হবে। তবে ভালো আছি, এটাই শুকরিয়া। যেন, সুস্থ থাকতে পারি, সে জন্য সবার কাছে দোয়া চাই।