আজ বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা হোন কিংবা জনপ্রিয় হলিউড তারকা জনি ডেপ, তাঁরা ধূমপান ছাড়া নিয়ে অনেক মন্তব্য করেছেন। সেসব কথা নিয়ে নেট দুনিয়ায় হয়েছে বিস্তর আলোচনা। জনি ডেপ আড়াই বছর ধূমপানমুক্ত থাকার পর একটি সিনেমায় চেইন স্মোকারের অভিনয় করেন। পরে তিনি ধূমপানমুক্ত থাকার প্রতিজ্ঞা ভেঙে আবার সে অভ্যাসে ফিরে যান। এদিকে বারাক ওবামা হোয়াইট হাউসে থাকতে লুকিয়ে সিগারেট খেতেন, এ কথা স্বীকার করেছেন তাঁর স্মৃতিকথায়। তিনি শেষ পর্যন্ত তাঁর স্ত্রী, সাবেক ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামার ভয়ে সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দেন।
আমাদের দেশের নন্দিত অভিনেতা আবুল হায়াতও একসময় ধূমপানে আসক্ত ছিলেন। তিনি বুয়েটে (তৎকালীন ইস্ট পাকিস্তান ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজিতে) পড়ার সময়ে ধূমপান শুরু করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি তাঁর আত্মজীবনী ‘রবি পথ’–এ লিখেছেন, ‘আমি বুয়েটের ফার্স্ট ইয়ারে হলের পানবিড়ির দোকানে বাকি–খাতা খুলে ফেললাম। দিনে চারবেলা চারটে ক্যাপস্টান সিগারেটের দাম খাতায় উঠতে লাগলো নিয়মিত। পাশ করে বেরুলাম পাক্কা সিগারেটখোর হিসেবে।’
পরের দিকে কাজের চাপে আবুল হায়াতের ধূমপানের এ নেশা আরও বেড়ে যায়। এ প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন, ‘নেশাটা আরও বাড়লো কাজের ক্ষেত্রে গিয়ে। অনেক সময় রাতভর সাইটে কাজ করতে হতো। তখন চা–সিগারেটই ছিল সাথী। সর্বদা নাটক, সিনেমা, চলচ্চিত্র, টিভি, রেডিও আবার অফিস। দম ফেলার সময় নেই। প্রচুর কাজ, প্রচুর টেনশন। আর প্রচুর ধূমপান।’
কাজের সূত্রে আবুল হায়াত তিন বছর লিবিয়ায় ছিলেন। এরপর দেশে ফিরে এসে আবার অভিনয়ের জগতে ফিরে যান। তিনি বলেন, দেশে তখন ধূমপানবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। তিনিও ভাবছিলেন, ধূমপান ছেড়ে দেবেন। কিন্তু কিছুতেই হয়ে উঠছিল না।
একদিন আবুল হায়াতের ছোট মেয়ে নাতাশা স্কুল থেকে ফিরে এসে তাঁকে ধূমপান করতে দেখে। তাঁর হাত থেকে সিগারেট কেড়ে নিয়ে ছোট্ট নাতাশা বলে ওঠে, ‘তুমি সিগারেট খাবে না। আপা (বড় বোন বিপাশা হায়াত) বলেছে, তুমি সিগারেট খেলে তার ধোঁয়া আমাদের খেতে হয়। তাতে আমরা মরেও যেতে পারি। তুমি কি তা–ই চাও?’
মেয়ের কথা শুনে আবুল হায়াত সিদ্ধান্ত নেন ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি কিছুতেই সিগারেট খাওয়া ছাড়তে পারছিলেন না। ‘রাতে ছাড়লে দিনে ধরি, দিনে ছাড়লে রাত্রে ধরি’; এই ছিল তাঁর অবস্থা। শেষে এক বিদেশি ম্যাগাজিনে এক মনোবিজ্ঞানীর লেখা তাঁকে ধূমপান ছাড়তে সাহায্য করে। সেই মনোবিজ্ঞানীর লেখায় উল্লেখ ছিল—‘ধূমপান ছাড়ার সহজতম উপায়।’
আবুল হায়াত বলেছেন, ‘আমি জানি, পৃথিবীতে বহু ধূমপায়ী আছেন, যাঁরা ধূমপান ত্যাগ করার জন্য অস্থির হয়ে আছেন। কিন্তু পারছেন না। আসলে ধূমপান ত্যাগ করা খুবই সহজ, নইলে আপনি কী করে দিনে ১০–১২ বার ধূমপান ত্যাগ করেন। তবে এভাবে চলবে না, প্রকৃতই যদি আপনি ধূমপানের অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে চান, তার সহজতম উপায় আমি বাতলে দিচ্ছি, জাস্ট ডোন্ট স্মোক।’
আর এ ছোট্ট কথাটি ম্যাজিকের মতো কাজ করেছে আবুল হায়াতের জন্য। ১৯৯২ সালের শুরুর দিকের কথা। কয়েক দিন পরেই ৪ ফেব্রুয়ারি ছিল তাঁর বিবাহবার্ষিকী। আর সেদিন থেকেই পুরোপুরি ধূমপান ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন আবুল হায়াত।
‘৩ তারিখ রাতে সিগারেটের ভরা প্যাকেট এবং লাইটার শিরীর (আবুল হায়াতের স্ত্রী) হাতে দিয়ে বললাম, এই হলো তোমার বিবাহবার্ষিকীর উপহার। আজ থেকে তোমার স্বামী ধূমপানমুক্ত ব্যক্তি।’
মজার ব্যাপার হলো, ধূমপান ছাড়ার জন্য আবুল হায়াতকে উপহারও দেওয়া হয়। এ ঘটনার কিছুদিন পরেই আবুল হায়াত ‘আমি ধূমপান করি না’–এর একটি স্মরণিকা উপহার পান।