সিডনিতে মাজনুন মিজান
সিডনিতে মাজনুন মিজান

সিডনিতে মাজনুন মিজান ও তাঁর ‘মায়া জীবন’

অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে প্রিমিয়ার হয়ে গেল বাংলা নাটক ‘মায়া জীবন’। শুক্রবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ছয়টায় সিডনির বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকা লাকেম্বার সিনিয়র সিটিজেন হলে প্রথমবার প্রদর্শিত হয় সিডনিতে নির্মিত নাটকটি। নাটকটির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন বাংলা টেলিভিশন নাটকের পরিচিত মুখ অভিনেতা মাজনুন মিজান। সম্প্রতি সিডনিতে থিতু হয়েছেন এই অভিনেতা। সিডনিতে বসবাস, নাটক নির্মাণ ও অভিনয় নিয়ে পরিকল্পনা প্রসঙ্গে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন প্রথম আলোর সিডনি প্রতিনিধি কাউসার খান

নাটক নির্মাণে নতুন না হলেও সিডনিতে ‘মায়া জীবন’ মাজনুন মিজানের প্রথম নির্মাণ। দেশ ছেড়ে পরিবার নিয়ে প্রবাসে এসে নতুন জীবনের সফরের এই মূল গল্প লিখেছেন মাজনুন মিজানই। প্রধান চরিত্রে অভিনয়ও করেছেন তিনি। এই নাটকে তিনি আরও তুলে ধরেছেন প্রবাসজীবনের কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ও পুরোনো পারিবারিক রীতি ভাঙার গল্প। নাটকের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে আরও অভিনয় করেছেন রুপন্তি আকিদ, শিশুশিল্পী অ্যাবেলিয়া, ডলি জহুর, শিল্পী সরকার অপু, রহমতউল্লাহ, মোরশেদ নাসের, হাবিবা স্মৃতি ও হেমা জোয়ার্দার। আর সমন্বয় করেছেন হাসান মোরশেদ। কোয়ালা বাংলার প্রযোজনায় ও তাসদিক শাহরিয়ারের চিত্রনাট্যে নাটকটি ক্যামেরাবন্দী করেছেন শিমুল শিকদার।

সিডনিতে প্রথম নাটক নির্মাণের অভিজ্ঞতা নিয়ে মাজনুন মিজান বলেন, ‘জীবনের মায়া নিয়ে আমার লেখা একটি গল্পকে পর্দায় তুলে আনার প্রচেষ্টা ছিল আমাদের ‘মায়া জীবন’ নামের নাটকটি। নাটকটির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান নতুন হিসেবে ভালো গল্প নিয়ে কাজ করতে চেয়েছিল। আমার গল্পটি তাদের ভালো লাগে। সবার সহযোগিতায় নাটকের কাজ শেষ করতে পেরেছি, অভিনয় করেছি। আর সহশিল্পীরাও দারুণ কাজ করেছেন যাঁর যাঁর চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে। আজ (শুক্রবার) সিডনিতে প্রিমিয়ার হলো। দর্শকেরা উপভোগ করেছেন বলেই জানিয়েছেন। বাংলাদেশে ১০ মে রাত ৯টা ৩০ মিনিটে এনটিভিতে সম্প্রচারিত হবে নাটকটি।’

সম্প্রতি পরিবার নিয়ে সিডনিতে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন মাজনুন মিজান। সন্তানদের উন্নত ভবিষ্যতের জন্য তাঁর এই আবাস পরিবর্তন বলে জানিয়েছেন তিনি।

১০ মে রাত ৯টা ৩০ মিনিটে এনটিভিতে সম্প্রচারিত হবে নাটকটি

বলেন, ‘নতুন একটা জীবন শুরু করেছি অস্ট্রেলিয়াতে। আমরা যাঁরা বাংলাদেশে বড় হয়েছি, আমাদের নিজস্ব জীবনব্যবস্থা তৈরি হয়েছে বাংলাদেশে, তাঁদের জন্য এটা খুব কষ্টের। আমার ১৪ বছর বয়সী একটি ছেলে এবং ১০ বছর বয়সী একটি মেয়ে আছে। শুধু ছেলেমেয়ের কথা চিন্তা করেই এই প্রবাসের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার স্ত্রী একজন শিক্ষক ছিলেন। অভিনয়ের পাশাপাশি আমার ব্যবসাও রয়েছে। আসলে ছেলেমেয়ের জন্যই সবকিছু সিডনিতে বদলি করা। তবে মাতৃভূমি ছেড়ে অন্য দেশে চলে আসাটা অকল্পনীয় কষ্টের।’ প্রায় তিন দশক ধরে অভিনয়জগতে রয়েছেন অভিনেতা মাজনুন মিজান। বিভিন্ন চরিত্রে কাজ করেছেন বহু টেলিভিশন নাটক ও সিনেমায়। মায়া জীবন তাঁর ষষ্ঠ নির্মাণ।

বিদেশে পাড়ি জমালেও অভিনয় ছাড়ছেন না বলে জানিয়েছেন তিনি। বলেন, ‘আমি একজন অভিনেতা, যেখানে যেভাবেই থাকি না কেন, অভিনয় আমি করবই। সিডনিতে এসেই আমি কাজ শুরু করেছি। আমার আরও কাজের পরিকল্পনা আছে, সিনেমা নিয়েও ভাবনা আছে। বেশ কয়েকটা গল্পের গাঁথুনি নিয়েও কাজ চলছে।’ সিডনিতে আরও বেশি বাংলাদেশি নাটক নির্মাণের সম্ভাবনা নিয়েও কথা হয় মাজনুন মিজানের সঙ্গে।

মাজনুন মিজান

তিনি বলেন, ‘একটি সুন্দর জুতসই গল্প নিয়ে বাংলা নাটক নির্মাণের যে পর্যাপ্ত আবহের প্রয়োজন, আমার মনে হয় সিডনিতে তা রয়েছে। পাশাপাশি দুই দেশের সংস্কৃতির বিনিময়টাও এখান থেকে বাংলা নাটকের মাধ্যমে খুব ভালোভাবেই সম্ভব বলেও মনে করছি।’ সিডনির লাকেম্বায় গতকাল প্রিমিয়ারে নাটকটি দেখতে আমন্ত্রিত বাংলাদেশি দর্শকের প্রচুর উপস্থিতি ছিল। নাটকটি উপভোগ শেষে প্রবাসী বাংলাদেশি রইসউদ্দীন রাসেল বলেন, ‘এককথায় বললে, মন ছুঁয়ে গেছে। নাটকের গল্পে দুটি অংশ ছিল। বাংলাদেশে ছেড়ে অস্ট্রেলিয়ায় চলে আসা, পরিবার নিয়ে সেই নতুনভাবে জীবন গড়ে তোলার দৃশ্যে আমার অস্ট্রেলিয়ার প্রথম দিনগুলোর কথা মনে পড়ে গিয়েছিল। খুব চমৎকারভাবে নাটকটি ফুটিয়ে তুলেছেন মাজনুন মিজান।’

আরেক প্রবাসী বাংলাদেশি স্থানীয় অভিনেতা ফাহিম ফয়সাল  বলেন, ‘সিডনিতে অনেক বাংলা নাটকের শুটিংই হয়েছে। আবার সিডনিতে বাংলাদেশি সিনেমাও প্রদর্শিত হয়; তবে নাটকের প্রিমিয়ার শো হয়েছে হাতেগোনা কয়েকটিই। সেই দিক থেকে সিডনিতে বাংলা নাটকের প্রথম প্রিমিয়ার শো আমার কাছে “মায়া জীবন”ই।’

সিডনিতে মাজনুন মিজান ও তাঁরা পরিবার। ছবি মাজনুন মিজানের সৌজন্যে

আলাপচারিতার শেষ অংশে বাংলা নাটক নিয়ে আরও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন অভিনেতা মাজনুন মিজান। বলেন, ‘বর্তমানে বাংলা নাটক নিয়ে একটা উত্তেজনাকর পরিবেশ চলছে। ইউটিউব, ভিউ, ওটিটি—এসব নিয়ে আমার মতবিরোধ রয়েছে। আমি ভিউয়ের চেয়ে ভালো গল্পের পক্ষে। ভালো বাংলা নাটক হচ্ছে, তবে এর চেয়ে অনুন্নত নাটকের সংখ্যাই বেশি। যার কারণে ভালো নাটকগুলো চাপা পড়ে যাচ্ছে। আর ওটিটিতে সব গল্পই প্রায় একধরনের হয়ে যাচ্ছে। তাই আমি আগেও যেমন ভালো গল্পের সঙ্গে কাজ করেছি, সামনেও ভালো গল্প নিয়েই অভিনয়, নির্মাণ নিয়ে থাকব। এমন কোনো নাটক নিয়ে কাজ করব না, যা আমাদের সমাজকে কলুষিত করে।’

রুপন্তি আকিদ, মাজনুন মিজান ও শিশুশিল্পী অ্যাবেলিয়া। ছবি মাজনুন মিজানের সৌজন্যে