একটা নাটকে অভিনয় করতে করতে বড় হয়ে গেল মেয়েটি
পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় মেগা সিরিয়াল ‘মাশরাফি জুনিয়র’ নাটকে অভিনয় শুরু করে সাফানা নমনি। এখন সে নবম শ্রেণির ছাত্রী। নাটকটিতে অভিনয় করতে করতেই বড় হয়ে গেছে মেয়েটি। পাঁচ বছর ধরে একই নাটকে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করে সে পেয়েছে মানুষের ভালোবাসা ও প্রশংসা।
এ জন্য নিজেকে ভাগ্যবান মনে করে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট গার্লস পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে নবম শ্রেণির ইংরেজি ভার্সনের ছাত্রী সাফানা নমনি। দীপ্ত টেলিভিশনে নাটকটি এরই মধ্যে হাজার পর্ব ছাড়িয়ে গেছে। এ জন্য দেশ-বিদেশের দর্শকদের কাছ থেকে তুমুল সাড়া পেয়েছে ‘মাশরাফি জুনিয়র’ টিম। প্রতিদিন রাত সাড়ে আটটায় নাটকটি প্রচারিত হয়।
কিশোরী অভিনেত্রী সাফানা নমনি বলে, ‘শুরুতে আমাদের পরিকল্পনা ছিল নাটকটি ১০০ পর্ব পর্যন্ত করার। তারপর দর্শকের ভালোবাসার জন্য ১০০ থেকে হলো ৫০০ পর্ব। তা থেকে এখন এক হাজার পর্ব ছাড়িয়ে গেল। এটা আমার জন্য এবং পুরো মাশরাফি জুনিয়র টিমের জন্য একটা বিরাট ব্যাপার।’
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে নাটকটির যখন শুটিং শুরু হয়, পর্দায় সাফানা নমনি ১১-১২ বছর বয়সী মনি নামের এক গ্রাম্য মেয়ের চরিত্র ফুটিয়ে তোলে। পরে একে একে বছর গড়িয়ে গেছে। নমনিও বড় হয়েছে। সে বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নাটকের গল্পও সেভাবে এগিয়ে গেছে। এখন সে ২৪-২৫ বছর বয়সী এক তরুণী ও ধনীর ছেলে আয়ানের স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করছে।
সাফানা নমনি ছোটবেলার চরিত্র, তরুণীর চরিত্র ও গৃহবধূর চরিত্রে অভিনয়ের বিষয়ে নাটকটির গল্প লেখক ও চিত্রনাট্য সম্পাদক আহমেদ খান বলেন, দারুণ অভিনয়ের ধারা সাফানা নমনি অব্যাহত রেখেছে। সে জন্যই চিত্রনাট্যকার আসফিদুল হক তাকে বিভিন্নভাবে উপস্থাপন করার সাহস পেয়েছেন। তার অভিনয়গুণের কারণে সংলাপ রচয়িতা মারুফ হাসান তাকে নানা চড়াই-উতরাই সংলাপের মধ্য দিয়ে নিয়ে গেছেন। মেয়েটি তিন রকম অবস্থান ও পরিস্থিতিতে অভিনয়ে মেধার স্বাক্ষর রেখেছে।
সাফানা নমনি বলে, ‘আমার বয়স যেহেতু কম, এই বয়সে ২৫ বছরের তরুণীর চরিত্র তুলে ধরা আমার জন্য কঠিন ছিল। সত্যি বলতে গেলে, শুরুতে আমার সাহস হচ্ছিল না। কিন্তু আমার পুরো টিমের সমর্থনে, মূলত নির্মাতা সাজ্জাদ সুমন ভাইয়ার সহযোগিতায় চরিত্রটি তুলে ধরতে পেরেছি। দর্শকদের বড় মনিকে চেনাতে পেরেছি। এটা আমার জন্য একটা প্লাস পয়েন্ট।’
Also Read: মাশরাফি জুনিয়র: নতুন মাইলফলকের সামনে
মেয়ের টেলিভিশনে অভিনয় করা নিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত সাফানা নমনির বাবা সরকারি চাকরিজীবী নূরুল ইসলাম। মুঠোফোনে আলাপকালে তিনি বলেন, তাঁর মেয়ে বড় হয়ে ভালো মানুষ হবে, মানুষকে সুস্থ ধারার বিনোদন উপহার দেবে, সেই সঙ্গে মেয়ের অভিনয় দেখে মানুষ সচেতন হবে, শিখতে পারবে, এটাই তিনি প্রত্যাশা করেন।
কিশোরী অভিনেত্রী সাফানা নাটকে ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজার মতো হওয়ার চেষ্টায় মরিয়া। তবে বাস্তবে কখনো সে মাশরাফিকে দেখেনি। তার আশা, বাস্তবজীবনে ক্রিকেটার মাশরাফির সঙ্গে কোনো একদিন তার দেখা হবে।
সাফানার ভাষ্য, নাটকটির সুবাদে তাকে অনেক মানুষ এখন চেনে। তার স্কুলের সহপাঠী ও শিক্ষার্থীরা তাকে নিয়ে গর্ব করে। নানা কাজে সহযোগিতাও করে। অনেকে তার আসল নাম জানে না, মনি হিসেবে চেনে। স্কুলে জুনিয়ররা তাকে ‘মনি আপু’ বলে ডাকে। আর সিনিয়ররা ডাকেন ‘মনি’ বলে। মনি চরিত্রটি করে সে এমন ভালোবাসা পাচ্ছে।
ছোটবেলার মনি চরিত্রে সাফানা নমনির বিপরীতে আয়ান চরিত্রে অভিনয় করেছিল হামিম। নাটকের একপর্যায়ে আয়ান বিদেশে পড়ালেখা করতে যায়। পড়ালেখা শেষে আট বছর পর দেশে ফিরে আসেন তরুণ আয়ান। তখন আয়ান চরিত্রে যুক্ত হন তরুণ অভিনেতা সোহেল তৌফিক। তরুণ বয়সের মনি ও আয়ানকে দর্শক ভালোভাবে নেবেন কি না, এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন ‘মাশরাফি জুনিয়র’-এর নির্মাতা সাজ্জাদ সুমন। তিনি বলেন, তরুণ বয়সের আয়ান-মনিকে দর্শক বেশ ভালোভাবেই মেনে নিয়েছেন। ফলে হাজার পর্বের মাইলফলক স্পর্শ করে তাঁরা সামনের দিকে যাওয়া অব্যাহত রেখেছেন।