Thank you for trying Sticky AMP!!

‘মাইনকা চিপা’ কথাটি কোথা থেকে এল

কার্টুন: আরাফাত করিম

পুরান ঢাকার চিপা গলি দিয়ে যাচ্ছেন। যান। যেতে যেতে চোখ-কান খোলা রাখুন। দেখতে পাবেন, কেউ হয়তো বড় বড় পা ফেলে গটগট করে হেঁটে যাচ্ছে। আর রাগে গজগজ করতে করতে বিড়বিড় করে বলছে, ‘কী এক মাইনকা চিপায় পড়ছি!’

মাইনকা চিপায় পুরান ঢাকার লোকেরা পড়েন। নতুন ঢাকার লোকেরাও পড়েন। এমনকি ওপারে কলকাতার দাদারাও পড়েন। মাইনকা চিপায় পড়লে সেখান থেকে বের হওয়া কষ্ট। অনেক সময় প্রাণ যাওয়ার উপক্রম হয়। এ এক কঠিন বিপদ। কিন্তু ‘মাইনকা চিপা’ কথাটি এল কোথা থেকে? ভাবতে গেলে কূল হারাতে হয়। অবশ্য ‘কূল’ হারানো ভালো, অন্তত ‘কুল’ (বংশ) হারানোর চেয়ে। অতএব এটা নিয়ে একটু ভাবা যাক।

‘মানিক’ শব্দটা বাংলা কথ্য উচ্চারণে মাইনকা হয়ে যেতে পারে। আর ‘মাইনকা চিপা’ কথাটিও একেবারে কথ্য। মানে অভিধানে পাওয়া যাবে না। তাই ‘মাইনকা চিপা’ কথাটি প্রাথমিকভাবে মানিকের চিপা মনে করা যেতেই পারে। কিন্তু এভাবে ঠিক মেলানো যাচ্ছে না। তাই এই মানিক কারও নাম নয়। কেউ হয়তো বলতে পারেন, মানিক নামের কেউ একজন কখনো চিপায় পড়েছিল। সেখান থেকে এসেছে ‘মাইনকা চিপা’। কিন্তু এই ভেবে-নেওয়া গল্প দিয়েও ঠিক মেলে না।

কথ্য ভাষায় এ রকম খিস্তি বা অশ্লীল শব্দ অনেক আছে। যেমন কেলিয়ে থাকা, লে হালুয়া, হাতে হারিকেন, টাল হওয়া, লাইন মারা, মাইনাস করা, ত্যানা প্যাঁচানো, মুড়ি খাওয়া ইত্যাদি।

কথাটির উৎপত্তি যদি কলকাতায় হয়ে থাকে, তবে মাইনকা শব্দটা ‘মেনকা’ থেকেও আসতে পারে। সে ক্ষেত্রে কথাটি শ্লীল-অশ্লীলের মাপকাঠিতে পড়ে বিতর্ক তৈরি করে। তাহলে ‘মাইনকা’ আসলে কী? এটি বলতে কি মানিক বা রত্ন বোঝানো হয়? অথবা শরীরের বিশেষ কোনো প্রত্যঙ্গকে ‘মানিক’ দিয়ে বোঝানো হচ্ছে? কিংবা স্রেফ এটি কোনো বাঁশ বা কাঠের ফালি দিয়ে তৈরি কোনো ফাঁদের নাম? অনেক কিছুই হতে পারে। আবার এসব কিছুই হয়তো নয়।

Also Read: ইউরেনিয়াম কি মাথায় ঢালা যায়?

আচ্ছা, মানিক নামে কি কোনো চিপা গলি ছিল? যাকে বলা হতো মানিকের চিপা? সেই চিপায় ঢুকলে সহজে বের হওয়া যেত না? যা-ই ভাবা হোক না কেন, ভাবনা ঠিক না-ও হতে পারে। কারণ, শব্দের ব্যুৎপত্তির ধারণাটি প্রাজ্ঞ অনুমাননির্ভর। অর্থাৎ শুধু অনুমান থাকলেই হয় না, সেই অনুমানের মধ্যে প্রজ্ঞা ও জ্ঞানও থাকতে হয়। ‘মাইনকা চিপা’র মতো অনেক কথার উৎস ভাষা-ব্যবহারকারীর কাছে তাই ভাসা-ভাসা হয়েই থাকে। কিন্তু এসব কথা যেখান থেকে যেমন করেই আসুক, অর্থ বুঝতে সমস্যা হয় না। এমনকি শ্লীল-অশ্লীল বিচার করে শব্দ ব্যবহার করতেও মুখে আটকায় না।

‘মাইনকা চিপায় পড়া’র ব্যাপারটি পণ্ডিতি তর্কে শেষ পর্যন্ত খিস্তি-জাতীয় শব্দের পর্যায়েই পড়ে। কথ্য ভাষায় এ রকম খিস্তি বা অশ্লীল শব্দ অনেক আছে। যেমন কেলিয়ে থাকা, লে হালুয়া, হাতে হারিকেন, টাল হওয়া, লাইন মারা, মাইনাস করা, ত্যানা প্যাঁচানো, মুড়ি খাওয়া ইত্যাদি। এ রকম খিস্তি-জাতীয় বা অশ্লীল শব্দ যে কত আছে, তার ইয়ত্তা নেই। সেগুলো সব জায়গায় বলা যায় না, লেখাও যায় না।

তবে ‘মাইনকা চিপা’ কথাটির উৎস ঠিক বোঝা না গেলেও ধরনটা বেশ বোঝা যায়। মনে করুন, একটা বাঁশের মাঝখানে খানিকটা ফাড়া হলো। তারপর সেখানে আঙুল, হাত কিংবা শরীরের কোনো একটা অঙ্গ আটকে গেল। এখন বুঝেছেন মাইনকা চিপা কী? গাছের চেরা বা ফাড়া অংশের মধ্যেও শরীরের অংশ আটকাতে পারে। কুড়াল দিয়ে কাঠ চেরার সময় চেরা অংশের মাঝখানে প্রায়ই একটা কীলক বা এক টুকরা কাঠ রাখা হয়। কিন্তু হঠাৎ সেই টুকরা যদি সরে যায়, আর সেখানে শরীরের অংশ আটকায়, তখন বোঝা যায়, মাইনকা চিপা কী!

মাইনকা চিপার ব্যাপারটা শুধু বেদনাদায়ক নয়, সেখান থেকে বের হওয়াও দুঃসাধ্য। মনে করুন, কোনো বানরের লেজ বাঁশের চিপায় বা কাঠের ফাড়ায় আটকে গেছে। তখন চিৎকার-চেঁচামেচি ছাড়া বেচারা আর কী করবে!

সাধারণ মানুষ যেহেতু ‘চারা’ নয়, সুতরাং তারাও হয় বেচারা। আর প্রাণিজগতে ‘নর’-এর সঙ্গে মিল বেশি ওই বানরেরই। তার মানে, সাধারণ মানুষের জীবনও ওই ফাড়ায় আটকানো বানরের মতো। প্রতিনিয়ত তাঁকে মাইনকা চিপায় পড়তে হচ্ছে। বিশেষ করে, যদি অবুঝ দুটি পক্ষ থাকে, তবে বাঁশ, গাছ এসব লাগবে না। তাদের মাঝখানে পড়লেই হবে। দুই পক্ষের কাছে যেটি খেলা, সাধারণ মানুষের কাছে সেটি জীবন-মরণের প্রশ্ন।

Also Read: এত বড় রাজনৈতিক কৌতুক!