চীন, জাপান, রাশিয়াসহ বিশ্বের নানা দেশে আছে বাংলা পড়ার ও বাংলা ভাষা সম্পর্কে জানার সুযোগ। যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন, কীভাবে বাংলা পড়ানো হয়, লিখেছেন সে দেশে অধ্যয়নরত কজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী।

জাহিদুল হাসান, শিক্ষার্থী, ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাজ্য
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অব ওরিয়েন্টাল স্টাডিজে বাংলা শেখার সুযোগ আছে। মডার্ন সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের এমফিল ও এমএসি ডিগ্রির অংশ হিসেবে বাংলা ভাষায় এক বছরের ‘এলিমেন্টারি কোর্স’ করা যায়। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক বাংলা জানেন। বাংলাদেশের নানা বিষয় নিয়ে গবেষণা করছেন। আমি যদিও উন্নয়ন অধ্যয়নের শিক্ষার্থী।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা বাংলাদেশের সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও বাংলা ভাষা নিয়ে নানা ধরনের কাজ করি। অক্সফোর্ড বাংলাদেশ সোসাইটির মাধ্যমে বিভিন্ন অনুষ্ঠান তো হয়ই। এসব আয়োজনে প্রবাসী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিদেশি শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশ, আমাদের ভাষা সম্পর্কে জানার সুযোগ পান। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসেও নানা আয়োজন থাকে প্রতিবছর।
ঐশ্বর্য রহমান, চেভেনিং স্কলার, স্কুল অব ওরিয়েন্টাল ও আফ্রিকান স্টাডিজ, ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন
ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল ও আফ্রিকান স্টাডিজে (সোয়াস) নানান দেশের নানা ভাষা শেখা ও গবেষণার সুযোগ আছে। বাংলাদেশিরাও কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় গবেষণা করতে আসেন। একুশে পদকপ্রাপ্ত (১৯৮৭) শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল, সম্পর্কে যিনি আমার নানা হন, ১৯৬৯ সালে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকেই বেঙ্গলি প্রেস অ্যান্ড লিটারারি রাইটিং (১৮১৮-১৮৩১) শীর্ষক অভিসন্দর্ভের জন্য পিএইচডি ডিগ্রি পেয়েছিলেন। সৌভাগ্যক্রমে আমিও একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে উন্নয়ন অধ্যয়নে স্নাতকোত্তর করেছি—ব্যাপারটা আমার জন্য রোমাঞ্চকর। বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে, ক্যাম্পাসে ঘোরাঘুরির সময় নানা ভাষার উপস্থিতি টের পেতাম। আমার নানা কোথায় বাংলা ভাষা নিয়ে গবেষণা করেছেন, তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করতাম।
সোয়াসে নানা দেশের নানা শিক্ষার্থী ও গবেষকেরা পড়েন, গবেষণা করেন। অন্য দেশের শিক্ষার্থীরাও এখানে বাংলা পড়া ও শেখার সুযোগ পাচ্ছেন। বাংলা শেখানোর জন্য বাঙালি শিক্ষক আছেন। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য ছাড়াও পালি, হিন্দি, পাঞ্জাবি, সংস্কৃত, তামিলসহ নানা ভাষা নিয়ে পড়া যায়।
জাকিয়া রুবাবা, আইন বিভাগ, ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়
যুক্তরাজ্যের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ স্টাডিজ থেকে বাংলা ভাষা শেখার সুযোগ পাচ্ছেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা। সুযোগ নিতে পারেন যে কেউ। তবে ভিনদেশি শিক্ষার্থীদের বাংলা শেখার আগ্রহ কম। সুযোগ থাকলেও বাংলা শিক্ষকের সংকটও আছে। কেউ আগ্রহী হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সপ্তাহে দুই ঘণ্টা থেকে দিনে চার ঘণ্টা করে ক্লাসের ব্যবস্থা করে।
যেহেতু যুক্তরাজ্যের চতুর্থ সর্বাধিক প্রচলিত ভাষা বাংলা, এই ভাষার বিশেষ গুরুত্ব পাওয়াটা তাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা এখানে নিয়মিত দেশের বিভিন্ন জাতীয় উৎসব ও আয়োজন উদ্যাপন করেন। বিদেশিরা আমাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারেন। শিক্ষার্থী কম থাকার পরও এখানে বাংলা শেখার সুযোগ আছে।