Thank you for trying Sticky AMP!!

অনলাইনে কেনাকাটায় থাকুন সতর্ক

অনলাইনে কোনো পণ্য কেনার আগে ভালোভাবে সাইটটি যাচাই করে নেওয়া উচিত

এশা বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। ফেসবুকে হঠাৎ একটি ই–কমার্স সাইটের বিজ্ঞাপন দেখলেন। সেখানে লোভনীয় সব ছাড়ের ছড়াছড়ি। তিনি ওই সাইটে গেলেন এবং একটি পোশাক বেছে নিলেন। টাকাও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে পরিশোধ করলেন। এক দিনে পোশাকটি তাঁর ঠিকানায় চলে আসার কথা, কিন্তু পাঁচ দিনেও সেটি হাতে পেলেন না। বারবার ফোন করলে সাত দিনের মাথায় পোশাকটি হাতে পেলেও তিনি পেয়েছেন অন্য রঙের পোশাক। ব্যাপারটি কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মীকে বলা হলে তিনি জানালেন, তাঁদের কাজ পণ্য পৌঁছে দেওয়া। এরপর তিনি সেই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও বিষয়টির সমাধান হয়নি। 

এমন আরেকজন ভুক্তভোগী মুনির হোসেন। তিনি একটি স্মার্টঘড়ির অর্ডার দিয়েছিলেন একটি ই–কমার্স থেকে। হাতে পাওয়ার পর দেখলেন স্মার্টঘড়িটি কাজ করছে না। ই–কমার্স সাইটে ফোন দেওয়ার পরও তারা কোনো সমাধান দেয়নি। 

দেশে অনলাইনে কেনাকাটার হার আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন বেশি। তবে অনেকেরই অভিজ্ঞতা এশা বা মুনিরের মতো। তাঁরা জানেন না কোথায় অভিযোগ করলে এর সমাধান হবে। কিংবা অনলাইন কেনাকাটায় কী সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। 

ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) হিসাবে, বর্তমানে সারা দেশে ১ হাজার অনলাইন প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ বলেন, ‘অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কেনাকাটার ওপর মানুষের নির্ভরশীলতা দিন দিন বাড়ছে। প্রতিদিন প্রায় ৫০ হাজারের মতো পণ্য ডেলিভারি হয়ে থাকে। তা ছাড়া আমরা সারা দেশে ৫ হাজার দক্ষ ই–কমার্স উদ্যোক্তা তৈরি করছি।’

অনলাইন কেনাকাটা নিয়ে অনেক অভিযোগ, প্রতিকারের ব্যবস্থা কী, জানতে চাইলে আবদুল ওয়াহেদ বলেন, ‘অনলাইন কেনাকাটায় অভিযোগ থাকলে ক্রেতা ভোক্তা অধিকার আইনে ব্যবস্থা নিতে পারবেন, একই সঙ্গে ই–ক্যাবের ওয়েবসাইটেও অভিযোগ করতে পারবেন। আমাদের নিবন্ধনকৃত সদস্য হলে আমরা এর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

অনলাইনে কেনাকাটায় যদি কেউ প্রতারিত হন, তবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শাহনাজ সুলতানা বললেন, ‘ধরুন কোনো ক্রেতা যদি অনলাইনে তাঁর পছন্দের পণ্য কেনেন কিন্তু হাতে পান অন্য পণ্য, সে ক্ষেত্রে সাত দিনের মধ্যে ফেরত না নিলে বা যোগাযোগ না করলে উপযুক্ত প্রমাণসহ যদি ক্রেতা অভিযোগ করেন তবে আমরা এর তদন্ত করে ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। আমাদের কাছে প্রতিদিন প্রায় ২০০ অভিযোগ আসে।’

প্রতারণা এড়াতে করণীয় :

অনলাইন কেনাকাটায় প্রতারণা এড়াতে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন এই খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। 

● কম দামে লোভনীয় অফার এড়িয়ে চলা। 

● প্রতিষ্ঠানের নাম-ঠিকানা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ। 

● ট্রেড লাইসেন্স আছে কি না, যাচাই করা। 

● বিকাশে পণ্যের দাম পরিশোধের বেলায় নম্বর যাচাই করা। 

● কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে রসিদ ও ক্যাশ অন ডেলিভারিতে পণ্য গ্রহণ। 

● ফেসবুকে কেনাকাটার গ্রুপ বা পেজের রিভিউ দেখে নেওয়া। 

● বিশ্বাসযোগ্য ফেসবুক পেজ বা গ্রুপে পণ্য কেনা। 

● পণ্য হাতে পাওয়ার পর মূল্য পরিশোধ করা যায় এমন গ্রুপ পেজ থেকে কেনাকাটা এবং সব ধরনের রসিদ সংরক্ষণ করা।

কীভাবে আইনের আশ্রয়

ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করাটা সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ। অধিদপ্তর অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার সত্যতা প্রমাণ পেলে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জরিমানা প্রদানের আদেশ দেবে। এই জরিমানা হিসেবে যে টাকা আদায় করা হবে তার ২৫ শতাংশ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত ভোক্তাকে দেওয়া হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও অবগত করতে পারেন।

সচেতন থাকতে হবে

অনলাইনে কোনো পণ্য কেনার ক্ষেত্রে প্রথমেই যেটি দরকার, তা হচ্ছে সচেতনতা। কোনো আকর্ষণীয় বা লোভনীয় বিজ্ঞাপন বা অফার দেখেই হুট করে কিনতে যাওয়া ঠিক নয়। প্রথমেই প্রতিষ্ঠানের নাম-ঠিকানা এবং মালিকের নাম-ঠিকানায় অসামঞ্জস্য আছে কি না, ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। অনেক অনলাইন প্রতিষ্ঠানও ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে থাকে। 

ওয়েবসাইটে ট্রেড লাইসেন্সের কপি আছে কি না দেখতে হবে, যদি না থাকে তাহলে ট্রেড লাইসেন্স করা আছে কি না এবং থাকলে তার নিবন্ধন নম্বর কত, তা জেনে নিতে হবে। কোনো বিকাশ নম্বরে মূল্য পরিশোধ করতে বললে নম্বরটি একাধিক নম্বর থেকে ফোন করে যাচাই করে নেওয়া ভালো। আর কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পণ্য দিতে বললে নির্দিষ্টভাবে পণ্য সরবরাহ যেন করা হয় এবং কেনার রসিদ দেওয়া হয়, তা খেয়াল রাখতে হবে। যেকোনো পণ্য কেনার ক্ষেত্রে আগে পণ্য সরবরাহ করে এবং তা পাওয়ার পর বিক্রয় প্রতিনিধিকে সরাসরি মূল্য পরিশোধ করা যায়, এমন ওয়েবসাইট বা মাধ্যমগুলো নির্ভর করা ভালো।