গল্প

অনামিকা অথবা মিকাপু

অলংকরণ: মাসুক হেলাল
অলংকরণ: মাসুক হেলাল

রোজ বিকেলে ছাদে ওঠে অনামিকা। আজও উঠেছে। চারতলা বিল্ডিং। আটটা ফ্ল্যাট। অনামিকারা থাকে তিনতলায়।
সে যখন ছাদে ওঠে, পিচ্চিপাচ্চারা যেন কীভাবে টের পেয়ে যায়। ওরাও তখন তরতর করে সিঁড়ি দিয়ে ছাদে ওঠে।
পিচ্চিরা সব অনামিকার ভক্ত।
ভক্তদের মধ্যে দুষ্ট এক পিচ্চি আছে। সে অনামিকার নাম সংক্ষেপ করেছে। প্রথম বলত অনাপু। এখন সে বলে মিকাপু। বাকিরাও মিকাপুই মেনে নিয়েছে। অনামিকার তাতে কোনো আপত্তি নেই।
পিচ্চিটার নাম দিহান।
দিহান, ওই দেখ। ঝালমুড়িওয়ালা যাচ্ছে। ছাদে ডেকে আনতে পারবি?’ মিকার কথায় দিহান রাজি হয়ে যায়। সে তরতর করে নিচে নামে। পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ঝালমুড়িওয়ালা ছাদে উঠে আসে।
সবার জন্য ঝালমুড়ি বানানো হচ্ছে। পিচ্চির সংখ্যা ১১। তারা সবাই ঝালমুড়িওয়ালাকে ঘিরে ধরে।
হঠাৎ ছাদে ওঠে দিহানের মামা রবিন। অস্ট্রেলিয়াতে পড়াশোনা করে। এক সপ্তাহ আগে ঢাকায় এসেছে।
দিহান বলে, ‘মামা, ঝালমুড়ি খাবে?’
মিকাপু হেসে বলে, ‘মামা, ঝালমুড়ি খাবেন?’
মিকা দিহানের মামার ঢাকা আসার কথা শুনেছে। তবে আজই সামনাসামনি দেখা। রবিন ধীরে ধীরে মিকার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে, ‘এরা তো ছোট। এরা মামা বলুক। আপনি আমাকে ভাইয়া বলতে পারেন!’
কথা শুনে মিকা হাসবে, না কাঁদবে, কিছুই বুঝতে পারে না। হাঁ করে তাকিয়ে থাকে।
রবিন বলে, ‘এই, আমাকেও ঝালমুড়ি দিন। খুব ঝাল করে বানাবেন। চোখ দিয়ে যেন পানি বের হয়ে যায়।’
সত্যি সত্যি ঝালমুড়ি খেয়ে রবিন যেন কাঁদতে থাকে। তার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে।
সেই দিন থেকে রোজই রবিন ছাদে ওঠে। ১১ জনের মধ্যে রবিন যোগ দেয়। মিকা বোনকে বলে বড় পিচ্চি।
‘আপনি অস্ট্রেলিয়াতে কী করেন?’
মিকার এ প্রশ্নে রবিন বলে, ‘হোটেলে ওয়েটারের কাজ করি। আর আপু অন্যদের বলে আমি কম্পিউটারের ওপর পড়াশোনা করছি।’ রবিনের এ সত্যবাদিতায় কেমন যেন অনুভূতি হয় মিকার।
রোববার দুপুরবেলা। মিকার ছাদে ওঠার কথা পিচ্চিরা টের পেয়েছে গেছে। মিকা ধমকের সুরে বলল, ‘এই ছোট পিচ্চিরা। সবাই চলে যাও। শুধু বড় পিচ্চি থাকুক।’ সত্যি সত্যি সবাই চলে গেল।
মিকা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে। বুড়ো আঙুলে হোঁচট খেয়েছে। হঠাৎ কেঁপে উঠল বিল্ডিং। আশপাশে হইচই, চিৎকার। হ্যাঁ। ভূমিকম্প হচ্ছে। সবাই বাসা থেকে দৌড়ে নামছে নিচে। মিকা দৌড়াতে পারছে না। রবিন স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
‘বড় পিচ্চি, তুমি যাও। দৌড়াও।’
‘কী যে বলো না। তা কি হয়? আমার গায়ে অনেক শক্তি। চলো তোমাকে কোলে নিয়ে দৌড়াই।’ এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে রবিন মিকাকে কোলে তুলে নেয়। দৌড়ে নিচে নামতে থাকে।
হায়! সিঁড়ির কয়েক ধাপ বাকি থাকতেই হুমড়ি খেয়ে পড়ে রবিন ও মিকা। এই দৃশ্যের দিকে সবার চোখ আটকে যায়। নিচের দিকে পড়েছে মিকা। সেদিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে রবিন।
রবিনের বড় আপা রাগে খটমট করে এগিয়ে যায় সেদিকে।
ঠাস করে একটি চড় বসিয়ে দেয় রবিনের গালে।
‘ফাজিল কোথাকার। অস্ট্রেলিয়া পাইছিস?’
ততক্ষণে ভূমিকম্প শেষ হয়ে যায়।