আউশের বাম্পার ফলন

সীতাকুণ্ডের নডালিয়া গ্রামে ধান কাটছেন কৃষকেরা প্রথম আলো
সীতাকুণ্ডের নডালিয়া গ্রামে ধান কাটছেন কৃষকেরা  প্রথম আলো

সীতাকুণ্ডে আউশ ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রত্যাশার চাইতে বেশি ধান পাওয়ায় হাসি ফুটেছে কৃষক পরিবারগুলোতে। কোনো রকম প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হওয়ায় এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ফলন হয়েছে বলে কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সীতাকুণ্ডে এবার সাত হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমিতে ২৪ হাজার চাষি বিভিন্ন জাতের আউশ ধানের চাষ করেছেন। এর মধ্যে দুই হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড জাতের, চার হাজার ৯৫০ হেক্টরে উচ্চ ফলনশীল জাতের এবং ৩২৫ হেক্টরে স্থানীয় জাতের ধান চাষ হয়েছে। বর্তমানে ধান কাটা শেষের পথে। গত বছর আউশ চাষ হয়েছিল সাত হাজার ২৫ হেক্টর জমিতে। চাল উৎপাদন হয়েছিল ১৯ হাজার ৬৬৬ মেট্রিক টন। এ বছর ২৪ হাজার মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হবে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন কর্মকর্তারা।
উপজেলার মুরাদপুর ইউনিয়নের গুলিয়াখালী গ্রামের কৃষক মো. রফিক বলেন, ‘জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি সময়ে ৬০ শতক জমিতে রাজকুমার জাতের হাইব্রিড আউশের চারা রোপন করেছি। ধান তোলাও এখন প্রায় শেষের পথে।’
রফিক জানান, বীজ, চারা, সার, কীটনাশক ও মজুরি বাবদ তাঁর প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। উৎপাদিত ধানের বর্তমান বাজার দাম প্রায় ২৫ হাজার টাকা। এতে তিনি খুশি। উত্তর বাঁশবাড়িয়া এলাকার মো. আলমগীর জানান, তিনি এবার সাড়ে তিন একর জমিতে ‘ব্রি ধান ৪২’ জাতের আউশ ধান লাগিয়েছেন। খরচ পড়েছে ৬০ হাজার টাকা। আড়াই মাসে ফলন উঠে আসে। তিনি জানান, প্রথম দিকে বৃষ্টি না হওয়ায় এবং বাতাসে ধানগাছ ভেঙে যাওয়ায় ফসলের কিছুটা ক্ষতি হলেও মন খারাপ হওয়ার মতো কিছু হয়নি।
কোনো কোনো কৃষক কৃষি কার্যালয় থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ করেন। নডালিয়া এলাকার কৃষক কামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা বংশানুক্রমে কৃষক। কিন্তু উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কোনো রকম সহযোগিতা পাই না। অথচ নতুন নতুন চাষারা সার, বীজসহ নানান উপকরণ পায়। আমার কৃষি কার্ডটিও কৃষি বিভাগের কর্মীরা রেখে দিয়েছেন।’
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তারিক মাহমুদুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী ২৪ হাজার মেট্রিক টন চাল উৎপাদিত হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে প্রায় সাড়ে চার হাজার মেট্রিক টন বেশি। এবার আউশ চাষে কমবেশি সব কৃষক লাভবান হবেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
কৃষি কার্ড নিয়ে কৃষকের অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘উপকরণ নেওয়ার সময় উপসহকারী প্রকৌশলীরা কার্ড জমা নেন, পরে আবার ফেরত দেন। ভুলক্রমে কারও কার্ড থেকে গেলে তিনি তা খোঁজ করে নিয়ে যেতে পারেন।’ এ ছাড়া তিনি জানান, প্রতিবছর দুই হাজার ২০০ প্রান্তিক কৃষকের মধ্যে সার, বীজসহ কৃষি উপকরণ বিতরণ করা হয়। একবার যাঁরা পান পরের বার তাঁরা নাও পেতে পারেন। এতে মন খারাপ করার কিছুই নেই।